খাল দখল করে রেখেছে ভূমিদস্যুরা :জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা
জেলার প্রধানতম সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে ও জনস্বার্থে বন্দোবস্তকৃত সকল খালের ইজারা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে বেড়িবাঁধ নেট পাটা অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি। সভায় আরও বলা হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলার ৭ উপজেলায় নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে জলাবদ্ধতা নিরসনে সকল সরকারি খাল অবমুক্ত, পানি নিষ্কাশনে খালের বাঁধা অপসারণ করা, নেট পাটা তুলে ফেলতে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এদিকে, গত ২৮ আগস্ট নদী ও খাল-বিল ও সাগরের জোয়ারভাটার পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী সব ধরনের স্থাপনা অবিলম্বে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের এমন নির্দেশের পর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকার খালের নেট পাটা জেলা প্রশাসক নিজে ও উপজেলায় নির্বাহী অফিসাররা সরেজমিনে গিয়ে অপসারণ করছে। তবে এখনও উদ্ধার হয়নি আশাশুনি উপজেলার শোভনালীর বসুখালীর খাল। যে খালের বিভিন্ন অংশ নেটপাটা ও বেড়িবাঁধের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে একাধিক ভূমিদস্যুরা। যার কারণে ঠিকমত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মাঝে মধ্যে ডুবে যায় বসুখালী, কামালকাটি, ঝায়ামারি ও বালিয়াপুর গ্রামের হাজারও বিঘা জমির মৎস্য ঘের, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।
ফলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। দেবহাটা থেকে উজিরপুর এর উপর দিয়ে কলিগঞ্জে প্রবাহিত ইছামতি নদীর একটি শাখা বসুখালী খাল, যেটি শোভনালীর একটি অংশের পানি সরবরাহের একমাত্র খাল। তবে এর একটি অংশে সরকারি ইজারা দেওয়া থাকলেও বাকি অংশগুলো নিজেদের সম্পদ দাবি করে অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভূমিদস্যুরা। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, খালটি বর্তমানে বসুখালীর আলাউদ্দিন গাজীর বাড়ি থেকে বসুখালী পূর্ব পাড়া পর্যন্ত এই অংশটি সরকারি ইজারা দেওয়া আছে। আর তারপর থেকে তালতলার কালভার্ট পর্যন্ত নিজের বাপের সম্পত্তি বলে ভেড়িবাধের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে বালিয়াপুর গ্রামের মৃত মধু মোল্যার ছেলে আনিছুর রহমান। আর কালভার্টের পর থেকে একই ভাবে দখল করে মৎস্য ঘের হিসেবে মাছ চাষ করছে আশাশুনির একজন নামকরা মৎস্য ব্যবসায়ী বাবলুর রহমান। আর এই অংশ বালিয়াপুর ও বসুখালীর একমাত্র পানি সরবরাহের খাল।
এদিকে খালের আরেকটি অংশ আলাউদ্দিন গাজীর বাড়ির পাশ থেকে বসুখালী হাফিজিয়া মাদ্রাসার উপর দিয়ে কামালকাটির দিকে বয়ে গেছে। যার মাধ্যমে কামালকাটি ও ঝায়ামারির শতশত বিঘা মৎস্য ঘেরের পানি সরবরাহ হয়। যেটির কিছু অংশ বসুখালী হাফিজিয়া মাদ্রাসার দখলে আর কিছু অংশ নিজের সম্পত্তি হিসেবে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় আব্দুল খালেক গাজী। বাকি অংশ দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে স্থানীয় ভূমিদস্যু অমেদ আলী গাজী। তবে এসব দখলদারদের সকলের দাবি এসব খাল তাদের নিজেদের সম্পত্তি। তবে পানি নিষ্কাশনের খাল কিভাবে করো নিজ সম্পত্তি হয়? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী জানায়, বসুখালীর খালের একাধিক অংশ বিভিন্ন মানুষের দখলে থাকায় তার অধিকাংশ প্রান্তে নেটপাটা ও ভেড়িবাধ থাকার কারণে বছরে দু’একবার প্রাকৃর্তিক দুর্যোগ ছাড়াই ঠিকমত পানি সরবরাহ করতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে এই এলাকা।
তাছাড়া ঠিকমত পানি সরবরাহ না হওয়ার কারনে ২০ থেকে ৫০ টি ঘের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাতো নিয়মিত। এজন্য এ খালটি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করে পানি সরবরাহের পথ উন্মুক্ত করতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শোভনালীর মৎস্য চাষিরা।