বদলে ফেলা হয়েছে বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া
রাজপথের কর্মসূচি না থাকায় বিএনপি এখন মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছে। গত কয়েক মাসে ১৬টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি এবং ৯টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটিগুলোকে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন করে তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মূলত দল পুনর্গঠনের নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড। বদলে ফেলা হয়েছে বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। কেন্দ্র থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটি আর হচ্ছে না। এখন থেকে কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করবেন। দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে হলে এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে হবে। সিন্ডিকেট কমিটি বা ‘পকেট কমিটি’ করার আর কোনো সুযোগ থাকছে না বিএনপিতে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানান, কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে সারাদেশে বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। এখন উপজেলা ও পৌর কমিটির কাউন্সিল চলছে। পর্যায়ক্রমে জেলা কমিটির নেতা নির্বাচন হবে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন-নির্যাতনে পর্যুদস্ত বিএনপিতে কাউন্সিল ঘিরে প্রাণ ফিরে এসেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী দলে পদ পেতে হলে নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হতে হবে। তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তৃণমূল থেকে নেতা নির্বাচিত করার কার্যক্রম চলছে। এর অংশ হিসাবে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, পৌর, জেলা-মহানগরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটি হবে।
বিএনপির অফিস সূত্রে জানা গেছে, দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে পঞ্চগড়, নীলফামারী, সৈয়দপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, ঝিনাইদা, মাগুরা, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আরো ১০টির বেশি জেলার আহ্বায়ক কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অচিরেই সেগুলো ঘোষণা করা হবে। বিএনপির ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মেয়াদ দুই বছর করে। মেয়াদ শেষ হলেই প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ও পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এরপর গঠিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পর গত ৭ জানুয়ারি তারেক রহমান স্কাইপির মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলায় জেলায় গিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে সকলের মতামতের ভিত্তিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার। তারপর থেকে দ্রুত চলছে কার্যক্রম। কোনো জটিলতা তৈরি হলে তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সুরাহা করছেন। কেবল বিএনপি নয়, ইতিমধ্যে অঙ্গ দলগুলোতেও পুরোদমে পুনর্গঠন চলছে। বিএনপির পেশাজীবী সংগঠন ‘ড্যাব’ দিয়ে শুরু হয়েছে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন। প্রথমে ড্যাবের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হয় সরাসরি ভোট। ভোটের মাধ্যমে হয়েছে নতুন কমিটি। এখন চলছে ছাত্রদলের কাউন্সিলের প্রক্রিয়া। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল হবে। এই কাউন্সিল করার ক্ষেত্রে দলের একটি অংশ বিপত্তি সৃষ্টি করলেও হাইকমান্ডের দৃঢ়তায় তারা সফল হতে পারেনি। ছাত্রদলের কাউন্সিলে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের কাউন্সিল হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোটের মাধ্যমে দলের সর্বস্তরে পুনর্গঠন হবে, এতে যোগ্য ও ত্যাগীরা জায়গা পাবেন এবং দলে গতি আসবে। অতীতেও আমরা বারবার ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছি। কোথাও কোথাও করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিকূলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি। আশা করছি দলে নেতৃত্ব নির্বাচনের যে গতি চলছে তাতে আমরা সফল হব।