শুভ জন্মাষ্টমী আজ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন
আজ শুক্রবার শুভ জন্মাষ্টমী। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে।
দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপূণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকীর কোলে জন্ম নিয়েছিলেন কৃষ্ণ।
সনাতন ধর্মমতে, পাশবিক শক্তি যখন সত্য সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অসুন্দরকে দমন করে জাতিকে রক্ষা এবং শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠার জন্য স্বর্গ থেকে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে পৃথিবীতে।
এদিন ভক্তি, শ্রদ্ধা ও উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে হিন্দু ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে গীতাযজ্ঞ, আনন্দ শোভাযাত্রা, কৃষ্ণপূজা, আলোচনাসভা, কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণসহ নানা আচার পালন করবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এদিকে জন্মাষ্টমী ঘিরে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাশাপাশি র্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শোভাযাত্রার মিছিলের সঙ্গে নিরাপত্তা দেওয়ার। প্রথমবারের মতো এবার জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার পেছনে পিকআপ অথবা ট্রাকে সাউন্ড সিস্টেম (স্পিকার) ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বিকেল ৩টায় জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে পলাশী বাজার, জগন্নাথ হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। এ সময় রাজধানীর মিছিল সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ এলাকা থাকবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা চলাকালীন পুরান ঢাকার প্রতিটি রাস্তার পাশের ভবনের ছাদে অবস্থান করবে পুলিশ সদস্য। বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রায় আগত ট্রাক ও পিকআপকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল দিয়ে সুইপিং করা হবে। এ ছাড়া আয়োজক কমিটিকে নিজেদের পরিচয়পত্র সম্বলিত পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করতে বলা হয়েছে। তারা বাইরে থেকে আগত কাউকে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করতে দেবে না।
গত বুধবার (২১ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ডিএমপি জানায়, শোভাযাত্রায় প্রথম অবস্থা থেকে মিলিত হতে হবে। কোনোক্রমেই মাঝপথে কোনো ব্যক্তি শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, বড় ভ্যানিটি ব্যাগ, পোটলা, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, অস্ত্র, কাঁচি, ক্ষতিকারক তরল, ব্লেড, দেয়াশলাই, গ্যাসলাইট ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। এছাড়া শোভাযাত্রা চলাকালীন রুটে কোনো ধরনের ফলমূল ছোঁড়া যাবে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শোভাযাত্রার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে, রুফটপ (বাড়ির ছাদে) পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা পালনে পুলিশ বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সূত্র আরো জানায়, জন্মাষ্টমী উদযাপনকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশ সব সময় প্রস্তুত থাকবে। জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রায় ব্যাগ, পোটলা ও সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়।