আমার মৃত্যুর জন্য খালেদা জিয়ার শোকবাণীও প্রস্তুত ছিল

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমার বেঁচে থাকার কথা না। ওরা ভাবেনি যে বেঁচে থাকব। আমি মরলে খালেদা জিয়া একটা কনডোলেন্স জানাবে; সেটাও নাকি তার প্রস্তুত করা ছিল। কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘মৃত্যু যখন তখন হতে পারে। মানুষ যেদিন জন্মাবে সেদিন থেকেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ মৃত্যু না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করে যাব। মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে বসে থাকব না।’

বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৯ বছর তারা ক্ষমতায় থাকল। বাংলাদেশের উন্নতি হয় নাই কেন? দারিদ্র্য বিমোচন হয় নাই কেন? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি কেন? কেন মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল।

কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসার পর পেরেছি। কারণ আমরা স্বাধীনতা এনেছি। জাতির পিতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম হয় এবং আওয়ামী লীগ ছিল জাতির পিতা শেখ মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন দিয়েই তো তিনি এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কষ্ট স্বীকার করে, যাদের ভিতর আদর্শ থাকে, তারা ক্ষমতায় এলে সেই অর্জন সুসংহত করে সুফলটা বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। তাই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।’

জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। মানুষকে কতটুকু দিতে পারবেন, সেটাই তিনি চিন্তা করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ঠিক সেই আদর্শ নিয়েই আমি আমার রাজনীতি করছি।’

জাতির পিতা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘এতো বড় একটা আত্মত্যাগ, কাদের জন্য? দেশের মানুষের জন্য, তাদের কল্যাণ ও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আমরা সেই আদর্শ নিয়েই আজকে পথ চলছি।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, ‘বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। কখনও ভয়ে ভীত হয়নি। হবও না। আর এটা আমার বাবার কাছ থেকে শেখা। তিনিই একথা বলে গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের যে রিপোর্ট তা এরই মধ্যে প্রকাশ করতে শুরু করেছি। প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড বের হয়েছে। প্রথম খণ্ডেই দেখবেন, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে লেখা তার একটা চিঠি। যেই চিঠিতে তিনি স্পষ্ট বলেছেন যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমি কারও কাছে মাথা নত করতে শিখিনি। আমিও বাবার কাছ থেকে সেই কথাই শিখেছি। দেশের মানুষের মান-সম্মান, উচ্চস্থানে নিয়ে যাওয়া, দেশকে উন্নত করা, সমৃদ্ধিশালী করা, দারিদ্র্য মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া এবং যে সংবিধান তিনি দিয়ে গেছেন তা রক্ষা করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আজকে সেটা করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আজ একটা জায়গায় উঠে এসেছে। এই পৃথিবীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ এখন অনেক উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। সেটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় অর্জন।’

‘এতো ষড়যন্ত্র করেও তারা আমাদেরকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি। যেটা জাতির পিতা তার ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। ঠিকই কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। পারবেও না। ইনশাল্লাহ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব।’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা যেভাবে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন এই জাতির জন্য ঠিক সেভাবেই যেন ত্যাগ স্বীকার করতে পারি, যেন দেশকে কিছু দিতে পারি। দেশের মানুষ কি পেল, কতটুকু পেল, সেটাই বিবেচ্য বিষয় এবং আমি সেটাই করব।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। আর যে সম্মান আমরা অর্জন করেছি, সেই সম্মান ধরে রেখে আরও সামনে এগিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

১৫ আগস্ট পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হারিয়ে বেঁচে থাকার কথা তুলে ধরে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি সান্ত্বনা দেন শেখ হাসিনা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)