বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে গাছ কর্তন

আশাশুনি উপজেলার ২২ নং বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের মাধ্যমে বড় বড় গাছ কেটে, ঈদগাহ, খেলার মাঠ বন্ধ করে পশ্চিম পাশে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগে হতাশ হয়েছেন এলাকাবাসী। এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হলে জেলা প্রশাসক আবেদনটি আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাশুনিকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

কিন্তু নির্দেশের কপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ও শিক্ষা অফিসারের কাছে দেওয়া হলেও সেটি ধামাচাপা দিয়ে গাছ কর্তন শুরু করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এমনকি মাননীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশকৃত আবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দেওয়া হলেও একই ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে এলাকার মানুষ ফুসে উঠতে শুরু করেছে। বিদ্যালয়ের নামীয় ৫০ শতক জমির উপর বুধহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট দক্ষিণ দুয়ারীভাবে পুরাতন ভবন রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসের স্থান সংকুলান না হওয়ায় সরকারি ভাবে আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদিত হয়। বিদ্যালয়ের সামনে কোন রকমে খেলা করার মত একটি ছোট মাঠ রয়েছে। এ মাঠে পশ্চিম পাশে ফোরকানিয়া মাদরাসা অবস্থিত।

মাদরাসার সামনে ঈদগাহ ময়দান। দক্ষিণ পাশে সরকারি সড়ক। মাঠের একটি বড় অংশ দখলে নিয়ে মাঠের পূর্ব পাশে পশ্চিম দুয়ারী ভাবে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী প্রতিকারের আবেদন করলে ২ জুলাই ডিইও’কে জরুরী ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে আদেশ করেন।

কিন্তু তদন্ত না করে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে মাঠ নষ্ট করে এবং সাথে সাথে ১৩/১৪টি বৃক্ষ নিধন ও অর্ধ শতাধিক বছরের দু’টি সবার প্রিয় বিলাতী তালগাছ নিধন করে বিল্ডিং নির্মানের জন্য লে-আউট ও কাজের জন্য বালু আনা হয়েছে। এতে এলাকার মানুষ ফুসে উঠেছেন। এখানে ভবন নির্মান হলে মাঠে খেলা ধুলার সুযোগ নষ্ট হবে। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ঈদগাহ ময়দানও জৌলুস হারিয়ে মুসল্লি ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের স্থান সংকুলান অসম্ভব হবে। মানুষ মারা গেলে এ মাঠেই জানাযা হয়ে থাকে সেটিও কষ্টকর হবে। এলাকাবাসীর দাবী পশ্চিমমুখো সদর করে বিল্ডিং নির্মাণ করে সকল ব্যাপারে ক্ষতি না করে স্কুলের পুরাতন ভবনের পূর্ব পাশে অবস্থিত ওয়াশ ব্লক ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে বিল্ডিং করলে সবদিক দিয়ে ভাল হবে। স্কুলের জন্য পশ্চিম পাশে ল্যাট্রিন ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনে যেকোন সুবিধামত স্থানে আবারও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা যাবে।

যেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠার পূর্বে খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক সেখানে খেলার মাঠ বন্দ করে ভবন নির্মানের উদ্যোগকে এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেনা। বাধ্য হয়ে এলাকার হাজার হাজার পুরুষ-মহিলা, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ ১৯ জুলাই মানববন্ধন করে। এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য একমাত্র খেলার মাঠ, সুশোভিত বৃক্ষরাজি, ক্রমবর্ধমান মুসল্লি সমৃদ্ধ ঈদগাহ ময়দান বিনষ্ট না করে কিভাবে বিকল্প স্থানে নতুন ভবন নির্মান করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে জটিলতা নিরসনে তদন্তের আগে ভবন নির্মান বন্ধ রাখার আবেদন জানালে মাননীয় জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা ২৪ জুলাই ইউএনও আশাশুনিকে সরজমিন তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

এছাড়া ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকার মানুষের একটি গণপিটিশন মাননীয় এমপি অধ্যাপক ডাঃ আ ম রুহুল হক মহোদয়ের কাছে দেওয়া হলে এমপি মহোদয় ডিপিইওকে বিষয়টা ব্যবস্থা নিতে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় ডিপিইওকে জরুরী ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে আদেশ করেন। উক্ত আবেদনপত্র ইউএনও অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত হয়নি। বরং আবেদনপত্র দাবিয়ে দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

এদিকে নিয়ম অমান্য করে স্কুল চত্বরের গাছ কর্তন ও ভবন নির্মানের কাজ বন্ধ রাখার জন্য স্কুলের জমিদাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলে হাইকোর্ট ১৪৪ ধারা জারি পূর্বক স্থাগিতাদেশ জারি করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)- পাপিয়া আক্তার বলেন, যখন মাটি টেস্ট হলো, ভবন বরাদ্দ হলো তখন এলাকাবাসী কোথায় ছিলেন। যখন ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে লে-আউট দেওয়া হলো তখন এলাকাবাসী এটির বিরোধীতা শুরু করলেন কেন।

জেলা প্রশাসকের প্রেরিত তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ইউএনও স্যার নেই। তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার- শামছুর নাহার, স্কুলের জমিতে ভবন হবে এতে এলাকাবাসী বাধা দেন কিভাবে। তাছাড়া এবিষয়ে যখন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছি তখন আমি, ইউএনও স্যার, উপজেলা চেয়ারম্যান স্যারসহ অনেকেই স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুলের সভাপতি প্রকাশ্যে বললেন আমরা খেলার মাঠ চাই, ভবন চাই না।

একজন স্কুলের সভাপতি এ কথা বলতে পারেন। আর গাছগুলো সরকারি সকল প্রক্রিয়া মেনেই টেন্ডার করা হয়েছে। স্কুলের সভাপতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তিনি চিঠি গ্রহণ করেননি। সেকারণে উপজেলা নিলাম কমিটির মাধ্যমে গাছগুলো নিলাম করে বিক্রয় করা হয়েছে। তিনি আরো এলাকাবাসী যেভাবে বাধা সৃষ্টি করছেন, তাতে ভবনটি অন্যত্র চলে যেতে পারে। এতে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বিষয়ে সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)