কাদেরকে চেয়ারম্যান মানতে নারাজ জাপার একাংশ
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান পদ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল। কাউন্সিল ছাড়া চেয়ারম্যান ঘোষণা মানতে চান না সিনিয়র প্রেসিডিয়ামসহ রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত জাপার একাংশ। জি এম কাদেরের একক সিদ্ধান্ত পার্টির সবার উপরে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করছেন কেউ কেউ।
পার্টির বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দলীয় সংবিধান অনুযায়ী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জি এম কাদেরকে তার অবর্তমানে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে গেছেন। পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যান হতে গেলে পার্টির কাউন্সিল প্রয়োজন হয়। প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন হয়।
তারা আরো জানান,পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য জি এম কাদের যেন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দুঃখজনক হলো, রওশন এরশাদ ছাড়া এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়ামদের ছাড়াই গত ১৮ জুলাই ২০১৯ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বসে কয়েক জন নেতাকে দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করান।
তারা দাবি করেন, জাপায় রওশন এরশাদ এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশে রেখে সিদ্ধান্ত নিতে জি এম কাদেরের সমস্যা কোথায়। তাই আমরা মনে করি রওশন এরশাদ ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুমতি ছাড়া ‘গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন, এখনো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।’
হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না জি এম কাদের। তারা এমনও দাবি করেন, পার্টির সিনিয়রদের বেশিরভাগ মিটিংয়ে দেখা যায় না। রওশন এরশাদ বা সিনিয়র প্রেসিডিয়ামরাও পার্টির অনেক মিটিংয়ে দাওয়াত পায় না। এমনকি অনেক কিছুই জানানো হয় না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জি এম কাদের জাতীয় পার্টির ত্যাগী একনিষ্ঠ এবং সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন করেন না। পার্টি চলছে হাইব্রিডদের দখলে, তাদের পরামর্শে চলছেন জি এম কাদের।
এ প্রেসিডিয়াম আরো বলেন, এখন যাদেরকে জি এম কাদেরের পাশে দেখা যায় তাদের অধিকাংশ হাইব্রিড এবং এদের বয়স কম; তাদের নেশা রাজনীতি নয়, এটা তাদের পেশা। তাদের ব্যবসা শেষ হলে জি এম কাদেরকে ফেলে চলে যাবে। এই হাইব্রিডরা মূলত ব্যবসা করার জন্য জি এম কাদেরর পাশে এসেছে। আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে হাইব্রিডদের কারণে যদি জাতীয় পার্টির একনিষ্ঠ নেতাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয় আর সুবিধাবাদীদের ব্যবসা বন্ধ হলেই পার্টি হঠাৎ বিলীন হওয়ে যাবে।
তাই যারা জাতীয় পার্টিকে ভালোবাসে, এরশাদকে ভালোবাসেন, লাঙল প্রতীককে ভালবাসে তাদেরকে দূরে ঠেলে রেখে জি এম কাদের পার্টিসহ সবার জন্য ক্ষতি ডেকে আনছেন।
জি এম কাদের যদি এইসব হাইব্রিডদের পরামর্শ নিয়ে চলতে থাকেন তাহলে পার্টির কাউন্সিলে মূল ধারার রাজনীতিকদের পাশে পাবেন না। আর জোর করে চেয়ারম্যান হয়ে থাকলে যারা রাজনীতিবিদ জাতীয় পার্টিতে তাদের পাওয়া যাবে না। হাইব্রিডরা জাপাকে দেউলিয়া করে চলে যাবে। পার্টিতে ওয়েটফুল রাজনীতিবিদ না থাকলে কামলা ভাড়া করে পার্টি পরিচালনার লোকও পাবে না জি এম কাদের। এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সব প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এদিকে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন জানান, কে কি বলছে সেটা বিষয় না। রাজনীতিতে একে অপরের প্রতি মান-অভিমান, ক্ষোভ সাময়িকভাবে থাকবেই। তাই কাউন্সিল হলেও পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখনো তাই, এটা সবাই মানে।
পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, রাজনীতিতে পক্ষ বিপক্ষ বা বিরোধিতা থাকতেই পারে। যদিও আমি এখনো পর্যন্ত জানি না পার্টির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কারো দ্বিমত আছে কি না। জি এম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান এ বিষয় নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।
পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান না হলে কে হতে চান? এই মুহূর্তে জি এম কাদের ছাড়া জাপায় যোগ্য কেউ নেই। জাতীয় পার্টিতে সবাই একসঙ্গে আছে। তাই কোনো বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কেউ লাভবান হবে না।