ফেসবুক থেকে ছবি ডাউনলোড করছেন না তো ?
গত বছর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির ঘটনা জানাজানির পর ফেসবুক এখন প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য লঙ্ঘনের যেন সমার্থক। ওই ঘটনার জের থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানার মুখে পড়তে হচ্ছে ফেসবুককে। একই সময় ফেসবুকের জন্য আরেকটি বিতর্কের তথ্য জানালেন অস্ট্রেলিয়ার এক নিরাপত্তা গবেষক।
অনেক দিন ধরে ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে গোপন কোড যুক্ত থাকার কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। অস্ট্রেলিয়ার ওই বিশেষজ্ঞ বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে এনেছেন। ফোর্বস অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এক টুইটার পোস্টে এডিন জুসুপোভিচ দাবি করেছেন, ‘আপনি যে ছবি ডাউনলোড করেন, তার মধ্যেই নজরদারি করার তথ্য বা ট্র্যাকিং ডেটা যুক্ত করে দেয় ফেসবুক। তিনি ফেসবুকের ছবির তথ্যে কাঠামোগত অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছেন।’
জুসুপোভিচ বলেন, ইন্টারন্যাশনাল প্রেস টেলিকমিউনিকেশনস কাউন্সিলের (আইপিটিসি) পক্ষ থেকে ছবি প্রকাশের জন্য যে কারিগরি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়, তা ফেসবুকের ছবিতে মানা হয় না। এতে নজরদারি করার জন্য যে পরিমাণ তথ্য যুক্ত করা থাকেন, তা ধাক্কা খাওয়ার মতো। এতে ফেসবুক থেকে পাওয়া ছবি ফেসবুক বাদে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করলেও তা ধরতে পারে তারা। এতে ছবির প্রকৃত মালিকের তথ্য বাদেও আরও নানা তথ্য সেখানে যুক্ত থাকে।
জুসুপোভিচ যে আইপিটিসির বিশেষ নির্দেশনা দেখেছেন, তা প্রয়োজনীয় মেটাডেটা ওয়াটারমার্ক হিসেবে পরিচিত। ফেসবুকের ছবির সঙ্গে বিশেষ এ ওয়াটারমার্ক যুক্ত করে নিজস্ব কোডিং যুক্ত করা হয়, যাতে পরে ওই ট্যাগগুলো ফেসবুক ট্র্যাকিং করতে পারে। এটা অবশ্য একেবারে নতুন কিছু নয়। এ পদ্ধতিতে ছবির মালিকানা বের করা বা কপিরাইট লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো ধরা যায়। এর বাইরে কাউকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেখানো বা বিভিন্ন ব্যবহারকারীর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার কাজগুলো করা সহজ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০১৬ সাল থেকে মেটাডেটা যুক্ত করার কাজ করে ফেসবুক। এতে একটি আইপিটিসি ব্লক যুক্ত থাকে, যাতে ‘অরিজিনাল ট্রান্সমিশন রেফারেন্স’ নামের বিশেষ ক্ষেত্র থাকে। ওই ক্ষেত্রে টেক্সটযুক্ত বিশেষ কোড লিখে দেয় ফেসবুক। এ পদ্ধতিতে ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করা ছবি আবার আপলোড করা হলে ফেসবুক তা বুঝতে পারে। এতে একই ছবি একাধিক ব্যক্তি ডাউনলোড করলে দুজনকে একই রকম বিজ্ঞাপন দেখানো সহজ হয়।
রেডিটে এক ব্যবহারকারী এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ফেসবুকের ছবিতে যে ট্র্যাকিং কোড বসানো থাকে, তা এখনকার আলোচিত ভুয়া খবর ছড়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনো পেজ থেকে ছবি বা মিম ডাউনলোড করে কেউ তা ছড়িয়ে দিলে ফেসবুক তাদের একই গ্রুপের সদস্য বলে ধরে নেয়। এরপর একই ধরনের খবর বা তথ্যে বিশ্বাসী মানুষের তথ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে নতুন গুজব ছড়ানোর জন্য বিক্রি করে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের ছবি ডাউনলোড নিয়ে সাম্প্রতিক এ গবেষণা ফেসবুক নিয়ে প্রাইভেসি বিতর্ক নতুন করে উসকে দেবে। ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানার পাশাপাশি ফেসবুক তাদের তথ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দেবে বলে সম্মত হয়েছে। কিন্তু থার্ড পার্টির সঙ্গে ফেসবুকের তথ্য বিনিময়ের সক্ষমতার ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিধিনিষেধ জারি হয়নি।
জুসুপোভিচ বলেছেন, তাঁর ধারণা, তিনি যা ধরতে পেরেছেন, তা সামান্যই। এটা খুব সহজেই বের করা যায়। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাইভেসি লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সহজে লুকিয়ে ফেলতে পারবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এটা ধরতে না পারলে পরে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।