জয় ছাড়া মাশরাফীর বিদায়
পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহী ব্যাটিং, হতাশাজনক বোলিং-ফিল্ডিংয়ের আশানুরূপ না হওয়ায়, শেষ ম্যাচের ফলটাও ভাল হলো না টাইগারদের। চলতি আসরের লিগ পর্বের শেষ খেলায় ৯৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
এই হারে মর্যাদার লড়াই দিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। কিন্তু জয় ছাড়া বিদায় নিতে হলো মাশরাফীকে।
শুক্রবার ইংল্যান্ডের লর্ডসে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ৩১৫ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০০ রান করেন ওপেনার ইমাম-উল-হক। ৯৬ রান করেন বাবর আজম। বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে সময়ের ব্যবধানে উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৭৮ রান করা দলটিকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। চতুর্থ উইকেটে তারা ৫৮ রান যোগ করেন।
এরপর ২২ রানের ব্যবধানে নেই লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের উইকেট। সপ্তম উকেটেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৪৩ রান যোগ করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এরপর আবারও ব্যাটিং বিপর্যয় মাত্র ১ রানের ব্যবধানে নেই মোসদ্দেক, সাইফউদ্দিন মাহমুদউল্লাহর উইকেট।
১৯৮ রানে ৮ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে চেষ্টা করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ১৫ রানে শেষ পর্যন্ত ৪৪.১ ওভারে ২২১ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ফখর জামানের উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান। তার উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাইফউদ্দিন। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ফখর জামান।
দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমকে সঙ্গে নিয়ে ১৫৭ রানের অবনদ্য জুটি গড়েন পাকিস্তান ওপেনার ইমাম-উল-হক। এই জুটিতে জোড়া ফিফটি তুলে নেন তারা। ফিফটির পর বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন বাবর আজম। শতরানের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে বাবরের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪ রান। এমন অবস্থায় সাইফউদ্দিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন বাবর। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি পাকিস্তানের ধারাবাহিক রান করে যাওয়া এই তারকা ব্যাটসম্যান।
এরপর মোহাম্মদ হাফিজকে সঙ্গে নিয়ে ৬৬ রানের জুটি গড়েন ইমাম-উল। এই জুটিতেই বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী লর্ডস স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের এ ওপেনার। এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামাতে সক্ষম হন মুস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনরা।
২ উইকেটে ২৪৬ করে রানের পাহাড় গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তান। এরপর মাত্র ৯ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় ১৯৯২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে সিঙ্গেল রান নেয়ার মধ্য দিয়ে ৯৯ বলে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন ইমাম-উল-হক।
১০০ বলে সাতটি বাউন্ডারিতে ১০০ রান করে মুস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন পাকিস্তানের এ ওপেনার। তার বিদায়ের ঠিক দুই রানের ব্যবধানে ফেরেন মোহাম্মদ হাফিজ। তিনি মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্পিনে বিভ্রান্ত হন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৭ রান করেন হাফিজ।
পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি হারিস সোহেল। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন হারিস। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ৪৩.৫ ওভারে ২৫৫ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। সাইফউদ্দিনের অসাধারণ ইয়র্কারে স্ট্যাম্প ভেঙে যায় ওয়াহাব রিয়াজের। মুস্তাফিজের বলে তার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন শাদাব খান। ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মধ্যেই ইনিংনের শেষ দিকে ব্যাটিং তাণ্ডব চালান ইমাদ ওয়াসিম। তার ২৬ বলের ৪৩ রানের সুবাদে ৩১৫ রান করে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩১৫/৯ (ইমাম-উল ১০০, বাবর ৯৬, ইমাদ ৪৩, হাফিজ ২৭; মোস্তাফিজ ৫/৭৫)।
বাংলাদেশ: ৪৪.১ ওভারে ২২১/ ১০ (সাকিব ৬৪, লিটন ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৯, সৌম্য ২২, মোসাদ্দেক ১৬, মাশরাফি ১৫, মুশফিক ১৬, তামিম ৮, মিরাজ ৭*; শহিন আফ্রিদি ৬/৩৫)।
ফল: পাকিস্তান ৯৪ রানে জয়ী।