রঙিন কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার কার্যকরী উপায়
রঙিন কাপড় কিনে আনার পর কয়েকবার পরিষ্কার করলেই কাপড় তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করে। এক্ষেত্রে ডিটারজেন্ট কোনো কাজেই আসে না, উল্টো এইগুলো ব্যবহারে কাপড়ের উজ্জ্বলতা আরো হারাতে থাকে। তাই কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো ব্যবহার করে রঙিন কাপড়কে রাখতে পারেন নতুনের মতো উজ্জ্বল! চলুন জেনে নেয়া যাক রঙিন কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার টিপসগুলো-
ভেতরের দিক বাইরে রাখুন
কাপড়ের বাইরের দিক থেকে পরিষ্কার করতে করতে একটা সময় কাপড়ের তন্তুগুলো রঙ ছেড়ে দিতে থাকে। আর এটা সবচেয়ে বেশি হয় ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার করার সময়। এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে কাপড়ের রঙের দীর্ঘস্থায়িত্ব বজায় রাখতে পরিষ্কার করার সময় কাপড়ের ভেতরের দিক বাইরে এনে পরিষ্কার করুন। একই ভাবে রোদেও শুকাতে দিন।
আদ্র কাপড় লবণ পানিতে পরিষ্কার করুন
যেসব কাপড় সহজেই পানি শুষে নেয়, সেগুলো পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে লবণ দারুণ একটি উপাদান। প্রথমে ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে নিন। তারপর পরিমাণ অনুযায়ী লবণ পানিতে মিশিয়ে নিন। মনে রাখবেন, লবণের পরিমাণ যাতে খুব বেশি না হয়ে যায়। সাধারণত এক বালতি পানিতে আধা কাপ পরিমাণ লবণ যথেষ্ট। তবে কাপড়ের সংখ্যা কম হলে লবণও কম দিতে হবে। এভাবে সারারাত বা বেশ কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পরদিন ডিটারজেন্ট মিশিয়ে কাপড় ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে ডিটারজেন্ট সরাসরি কাপড়ের রঙের ক্ষতি করতে পারে না।
অপ্রয়োজনে পরিষ্কার নয়
উজ্জ্বল কাপড়ের রঙ বেশিদিন ধরে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ঘন ঘন কাপড় না ধোয়া। একবার পরিষ্কার করার পর থেকে পরেরবার ধোয়ার মধ্যবর্তী সময়টা যাতে একটু বেশি হয়। আপনি হয়তো অফিসে কাজ করেন, যার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার জামা-কাপড় পরতে হয়। তাছাড়া শরীর ঘামার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে জামায় দাগ চলে আসতে পারে। এরকম হলে ভেজা সামান্য কাপড় দিয়ে দাগ পড়ে যাওয়া অংশ একটু মুছে নিতে হবে। তাতেই আপনার কাপড়টি দু-একদিন বেশি পরতে পারবেন।
ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার করা
অতিরিক্ত গরম পানি কাপড়ের রঙের স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়। তাই গরম পানির বদলে ঠান্ডা পানির ব্যবহার কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র পানির তাপমাত্রার বদল ঘটিয়ে কাপড়ের রঙকে বহুদিন টিকে থাকার উপযোগী রাখা যায়। চাইলে এমন ডিটারজেন্টও খুঁজে নিতে পারেন যেগুলো কম তাপমাত্রার পানিতেও দারুণ ফেনা তৈরি করতে পারে।
ভিনেগার ও বেকিং সোডার ব্যবহার
কাপড় ধোয়ার সময়, বিশেষ করে প্রথমবার নতুন জামা পরিষ্কারের সময় পানিতে দুই-এক টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার যুক্ত করে নিতে পারেন। এই ফর্মূলা সবচেয়ে বেশি কাজে দেয় সাঁতারের পোশাক কিংবা কোনো নতুন সুইটের ক্ষেত্রে। কালো জিন্স প্রথমবার ধোয়ার আগে পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে নিলে জিন্সের রঙের স্থায়িত্ব অনেকাংশ বেড়ে যায়। জিন্সের জন্য পানি এবং ভিনেগারের অনুপাত হবে সমান। ভিনেগার কাপড়কে নরম রাখে, যার কারণে জামা পরে আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য বেকিং সোডারও জুড়ি নেই। আধা কাপ বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। ময়লা দূর করতেও বেকিং সোডা সমান কাজ করে।
কাপড় বেশি ড্রাই না করা
কাপড় শুকাতে যদি ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকেন, তবে কাপড়কে বেশিক্ষণ ধরে না শুকানোই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় একই টাইপের কাপড় একসঙ্গে শুকালে। এতে করে সবগুলো কাপড় শুকাতে একই সময় লাগবে। কাপড়কে বেশি মচমচে করতে গেলে সুতোর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ড্রায়ারে যদি ময়েশ্চার সেন্সর সিস্টেম থাকে তবে তা ব্যবহার করুন। রোদে শুকানোর সময়ও একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
জামার লেবেলের নির্দেশনা দেখুন
জামার কলারের পেছনের দিকের সংযুক্ত নির্দেশনাটি পড়ে দেখুন। এখানে কাপড়ের টাইপ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া থাকে, যেগুলো কাপড়ের ব্যবহারকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সহায়তা করে।
নীলের ব্যবহার
সাদা কাপড়কে উজ্জ্বল রাখতে নীল রঙের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এটা মূলত কালারিং এজেন্ট, যার ছোট ছোট কণিকাগুলো কাপড়ের সঙ্গে লেগে থেকে সাদা কাপড়কে উজ্জ্বল করে। যদিও কাপড়ের দাগ দূর করতে এর কোনো কার্যকরী ব্যবহার নেই। নীল সংযুক্ত করতে হয় একেবারে কাপড় ধোয়ার শেষ অংশে, তাহলেই কণিকাগুলো ভালোভাবে মেশার সুযোগ পাবে। তবে সাদা কাপড় না হয়ে যদি কালো রঙের কাপড় হয়, সেক্ষেত্রে পরিষ্কার করার সময় পানিতে সামান্য পরিমাণ চা-কফি ঢেলে নিতে পারেন। এতে কালো কাপড়ের উজ্জ্বল ভাব টিকে থাকবে অনেকদিন।