অপারেশন শেষ হয়েছে ভ্যান চালক শাহীনের:চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী
সাতক্ষীরায় ভ্যান ছিনতাইয়ের সময় দুর্বৃত্তদের আঘাতে মাথা ফেটে যাওয়া কিশোর চালক শাহীনের অপারেশন শেষ হয়েছে। রোববার (২৯ জুন) ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার অপারেশন শেষ করেন চিকিৎসকরা।
আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবে সে। শনিবার (২৯ জুন) রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। তিনি জানান, ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালানো কিশোরটির দায়দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহীনের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের প্রতিবেশী দেবাশীশ আইচ। তিনি জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শাহীনের পালস ভালো আছে। তবে ব্রেইনে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। মাথায় রক্ত জমাট থাকার আশঙ্কায় চিকিৎসকরা তার অপারেশন করেছেন।
যশোর ও কেশবপুর অঞ্চলের ঢাকাস্থ ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ শাহীনের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাকে ঢাকায় নেয়া ও হাসপাতালে ভর্তিসহ যাবতীয় বিষয়ে সহযোগিতা করছেন।
এর আগে শনিবার রাত ১০টার দিকে শাহীনকে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়। সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক সংসদ অধিবেশন চলাকালীন বিষয়টি জানতে পেরে কিশোর শাহীনকে নিয়ে ঢাকার পথে থাকা তার চাচা মুনছুরের সাথে ফোনে কথা বলেন। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদেরকে শাহীনের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছিলেন যে, শাহীনের স্কাল্পে বড় ধরনের ইনজুরি হয়েছে। তার নিউরো সার্জারি করা প্রয়োজন। ডা. রুহুল হক শাহীনের চিকিৎসকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
জানা যায়, যশোর জেলার কেশবপুরের মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে গোলাখালি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাহীন শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বাবা-মার সংসারের জন্য রোজগারে বেরিয়েছিল। দুপুরের দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ভ্যানটি ভাড়া নেয়। শাহীন তাদের নিয়ে সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ার দিকে রওনা হয়। ধানদিয়া গ্রামের হামজাম তলা মাঠে ঢুকে একটি পাটক্ষেতের পাশে দুর্বৃত্তরা শাহীনের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়, নিয়ে যায় শাহীনের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটিও। ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে সে। পরে জ্ঞান ফিরে কান্না শুরু করলে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানায় খবর দেয়।
পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হোসেন বলেন, ‘এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে শাহীনকে উদ্ধার করে খুলনার আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার তার অবস্থার অবনতি হলে বিকালে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে রওনা হয়।তিনি আরো বলেন,মারা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, বসতভিটে ছাড়া শাহীনদের কোনও জমিজমা নেই। সম্প্রতি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কেনে তারা। পিতা-পুত্র দুই শিফটে ওই ভ্যানটি চালিয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলো। শাহীনের ছোট দুই বোনের পড়া লেখাসহ সংসার চালাতো তারা। জীবিকার সেই শেষ সম্বলটিও নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা। এখন শাহীনের বেঁচে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এর সঙ্গে আছে এনজিওর ঋণের খড়গ।