মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার
সরকারি চাকরি পেতে হলে অনেক টাকা লাগে ।এমনকি জমিজমা বিক্রি করতে হয় । এমন ধারণা মানুষের মনে জেঁকে বসে আছে ।তাই গরিবরা আজ সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছে বললেই চলে ।কারণ টাকা ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় এ বিশ্বাস মানুষের মন থেকে অনেক আগেই উঠে গেছে। আর সেই চাকরি যদি হয় পুলিশে, তাহলে তো কল্পনাই করা যায় না। তবে এই অকল্পনীয় কাজ করে দেখিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো: সাজ্জাদুর রহমান বিপিএম ।মাত্র ১০৩ টাকায় ৭২ জন বেকার যুবক যুবতিদের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।আশা জাগিয়েছেন সাতক্ষীরা খেটে খাওয়া মানুষের বুকে । কারণ যে ৭২ জন চাকরি পেয়েছে তার মধ্যে অনেকেই দরিদ্র পরিবারে সন্তান।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ লাইন্সে এসব যুবকদের চাকরি চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেন জেলা পুলিশ সুপার মো: সাজ্জাদুর রহমান বিপিএম ।এর আগে গত ২২ জুন থেকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রত্যাশী প্রায় ৭৯৮ জন যুবক সরাসরি আবেদন করেন। এতে তারা সর্বসাকুল্যে ব্যাংক ড্রাফট মিলে খরচ করেন মাত্র ১০৩ টাকা।
পরে রিটেন পরীক্ষায় ৭৯৮ জনের মধ্যে ২৪০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন ।পরে ২৪০ জনের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ৭২ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব সহজে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি লাভ করে বেশ আনন্দিত নির্বাচিতরা।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের পরিদর্শক জনাব ইয়াছীন আলম চৌধুরী বলেন,সাতক্ষীরায় পুরুষ কনস্টেবল হিসাবে ৫৯ জন কে নিয়োগ দিয়েছেন নিয়োগ বোর্ড। অপর দিকে নারী কনস্টেবল সাধারণ কোটায় ১০ জন ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুই জন নারী ও পোষ্য কোটায় ১ জন নারী সর্বমোট ১৩ জন নারী পুলিশ কনস্টেবল কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান,পুরুষ ও নারী সহ সর্বমোট ৭২ জন কে সাতক্ষীরা থেকে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকুরী দেওয়া হয়েছে।তিনি বলেন চূড়ান্ত রেজাল্টের আগের দিন সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর থেকে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা করায় ১১ লক্ষ টাকা সহ দুই প্রতারক কে আটক করতে সক্ষম হয়।যেটা জেলা পুলিশের অনেক বড় একটা অর্জন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ সাজ্জাদুর রহমান বিপিএম বলেন, সততা এবং ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে যুবকদের বাছাই করে চাকরি প্রদানে সহযোগিতা করতে পেরে তিনিও বেশ খুশি।চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ দের তিনি গতকাল ১ টি করে রজনী গান্ধার স্টিক দিয়ে পুলিশ পেশায় অভিনন্দন জানান। তিনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন সাতক্ষীরায় পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের আগে থেকে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়েছিল।প্রতারকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরীক্ষার ১৫ দিন আগের থেকে জেলাব্যাপি মাইকে সতর্কতা মুলক প্রচার করা হয়।যার ফলে এত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সহিত ৭২ জন কে কনস্টেবল পদে চাকুরী দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রী, এমপি এমনকি প্রভাবশালী কোনো রাজনৈতিক নেতাও তার কাছে চাকরির জন্য সুপারিশ করেননি। এই জন্য পুলিশ সুপার সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে থেকে জানা যায়,সাতক্ষীরায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ বোর্ডে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান ছাড়াও অন্য দুই সদস্য ছিলেন।দুই জনের মধ্যে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে একজন এসপি পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন।আর যশোর থেকে একজন এডিশনাল এসপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা নিযুক্ত ছিলেন নিয়োগ বোডে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত এসব যুবক-যুবতীরা আগামী এক মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিতে দেশের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে যোগে দেবেন।।