সাতক্ষীরার সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন মন্দিরগুলো
সংস্কারের অভাবে কলারোয়ায় প্রকৃতির অপূর্ব পুরাকীর্তি ‘শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির’ (মঠবাড়ি মন্দির) এখন জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায়। প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো ৬০ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত পিরামিড আকৃতির এই মঠ মন্দির প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শণ হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
শনিবার (১৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মঠবাড়ি মন্দিরটি সংস্কার ও সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবী। তাহলেই মঠবাড়ি মন্দিরটি এ জেলার আরও একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। মন্দিরটি সংস্কার করতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।
সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জানুয়ারীতে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ক লেখক মো. মোশাররফ হোসেন ও বিশিষ্ট লেখক জ্যোতির্ময় মলিকসহ খুলনা জাদুঘরের ৭ সদস্যের একটি টিম ‘শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির’ (মঠবাড়ি মন্দির) পরিদর্শন করেন এবং মন্দির সংশ্লিষ্টদের সাথে কথাও বলেন। এলাকাবাসীর দাবী, প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ যদি মন্দির গুচ্ছের সংস্কার ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয় তাহলে প্রকৃতির অপূর্ব পুরাকীর্তি ‘শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির’ (মঠবাড়ি মন্দির) আবার প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু বিগত ৯ বছরেও কলারোয়ার মঠবাড়ি মন্দিরটি আজও সংস্কার বা সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শ্যাম সুন্দর মন্দির: কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্বতাত্ত্বিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান। সাতক্ষীরা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার ও কলারোয়া উপজেলা সদর ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ মন্দিরটি। স্থনীয়ভাবে মন্দিরটিকে সোনাবাড়ীয়া মঠ নামেও ডাকা হয়। যদিও মন্দিরটির দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে ‘শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির’।
শ্যাম সুন্দর মন্দির এর নির্মাণ প্রসঙ্গে দুরকম মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ মনে করেন, ৪০০ বছর-এর বেশ কিছু পূর্বে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেবের শিষ্যরা এই মন্দিরটি তৈরি করেন। এরপর ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে প্রচারকগণ যখন চলে যান তখন মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৭৬৭ সাল থেকে তৎকালীন জমিদার সেটিকে ব্যবহার শুরু করেন। তারা ছিলেন মূলত দূর্গাপ্রিয় চৌধুরীর জমিদারের পূর্বপুরুষ। আবার কেউ কেউ মনে করেন, মন্দিরটি ১৭৬৭ সালে জমিদার হরিরাম দাশ বা দূর্গাপ্রিয় চৌধুরীই নির্মাণ করেছিলেন। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের আশেপাশে আরও প্রায় ৯টি মন্দির ছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
তিনতলা বিশিষ্ঠ পিরামিড অবয়বের এই মন্দিরটির উচ্চতা ৬০ ফুট। পূর্বে এই মন্দিরের পূর্ব দিকে স্থাপন করা ছিল কষ্টি পাথরের তৈরি ১২টি শিবলিঙ্গ। এছাড়াও দোতালায় ছিল স্বর্ণের তৈরি রাধ-কৃষ্ণ মূর্তি। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও সুড়কি ব্যবহারের মাধ্যমে। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের পাশে আরও দুটি মন্দির রয়েছে যেগুলো দুর্গা ও শিবের পূজা করার জন্য ব্যবহার করা হত। এই তিনটি মন্দিরের সামনেই রয়েছে একটি ছোট দীঘি। মন্দিরটির দ্বিতীয় তলার আয়তন ৩১.১ ফুট *৩২.৯ ফুট এবং তৃতীয় তলার আয়তন ২৪.৬ ফুট*২৩.৬ ফুট। এছাড়াও মন্দিরের নীচ তলার চারটি ভাগের ২য় ভাগের মন্ডপের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের দৈর্ঘ্য ২০.২ ফুট ও প্রস্থ ৪.৫ ফুট। তৃতীয় ভাগে রয়েছে দুটি কক্ষ।
এলাকাবাসী বলেন, ‘প্রাচীন এই মন্দিরগুলো তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা ও ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে। কিন্তু রক্ষাণাবেক্ষনের অভাবে সেগুলি জীর্ণ। ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে তৎকালীন ইতিহাস ও স্থাপত্যরীতি তুলে ধারার জন্যই সেগুলিকে সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সেই কাজ কবে শুরু হবে, তা কেউ জানে না।