আইসিসি বৃষ্টিকাপ!
চলছে ক্রিকেটের সব থেকে বড় আসর আইসিসি বিশ্বকাপ। এই নিয়ে পঞ্চমবারের মত বিশ্বকাপের আয়োজক ইংল্যান্ড। প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সহযোগী হয়েছে ওয়েলস। তবে বিশ্বকাপের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। একের পর এক ম্যাচ ভেস্তে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। কোন ভাবেই বৃষ্টির সাথে পেরে উঠছে না আইসিসি। দশ দল মিলেই বৃষ্টির বিপক্ষে মাঠে নেমেও হেরে যাচ্ছে বারবার। ‘আইসিসি বিশ্বকাপ’ এখন ‘আইসিসি বৃষ্টিকাপ’ এ পরিণত হয়েছে।
লন্ডনের ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠেছে এ আসরের। প্রথম ম্যাচেই ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় স্বাগতিকরা। পরপর ৬ ম্যাচ ভালোভাবেই শেষ হয়। কিন্তু বিপর্যয় দেখা দেয় ৭ম ম্যাচে। শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই শুরু হয় বৃষ্টি বিভ্রাট। আইসিসিও কম যায় না। বৃষ্টি আইনে ৩৪ রানে আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয় পায় শ্রীলংকা। এরপর আরো ৩ ম্যাচ ভালো ভাবেই শেষ করতে পারে আইসিসি। ইন্ডিয়া ও নিউজিল্যান্ড যথাক্রমে ৬, ২ উইকেটের জয় পায়। আর অস্ট্রেলিয়া ১৫ রানের জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
এরপরে দিন ছিল বিশ্বকাপের ১১ তম ম্যাচ। যেখানে মুখোমুখি হওয়ার কথা এশিয়ার দু’দল পাকিস্তান ও শ্রীলংকার। তবে এই দিনে বৃষ্টি কোনভাবেই ছাড় দিতে রাজি ছিল না। ব্রিস্টলের আকাশ কেঁদেই চলেছিল। কাঁদার মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে টস পর্যন্ত হয়নি। পয়েন্ট ভাগ করে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় এশিয়ার দুই দলকে। এরপর আরো তিন ম্যাচ ভালো ভাবে শেষ হয়। বাংলাদেশকে ১০৬ রানে হারায় ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হারে আফগানিস্তান। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬ রানের জয় দিয়ে বিশ্বকাপে টানা জয় তুলে নেয় ইন্ডিয়া।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ মাঠে গড়িয়ে ৭.৩ ওভার ব্যাট করে ২৯ রান সংগ্রহ করে ২ উইকেট হারিয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এ সময়ই ধেয়ে আসে বৃষ্টি। যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় এ ম্যাচও। আর মাঠে নামার সুযোগ পায় না কোন দলই। অবশেষে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হয় উন্ডিজকে। বিশ্বকাপের ১৬ তম ম্যাচেও মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার। তবে হয়তো টস ভাগ্যই খারাপ শ্রীলংকার। ব্রিস্টলের আকাশ আবারো বিদ্রোহ করে বসে শ্রীলংকার বিপক্ষে। এবারো টস করার সুযোগ হয়না। ভেস্তে যায় এ ম্যাচ ও। পয়েন্ট ভাগ করে নেয় দুই দল। বিশ্বকাপে শ্রীলংকাই সব থেকে বেশি দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন। বার বার বৃষ্টির মুখোমুখিই হচ্ছেন লংকানরা। পরের ম্যাচে যদিও পাকিস্তানকে হারিয়ে ৪১ রানের জয় পায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপের ১৮ তম ম্যাচে আজ মুখোমুখি হওয়ার কথা পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ড ও চতুর্থে থাকা ইন্ডিয়ার। কিন্তু এখনো টসের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এখানেও বাঁধা বৃষ্টি। নিউজিল্যান্ড এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জয় পেয়েছে। ওদিকে ২ ম্যাচ খেলে দুই জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থতে আছে টিম ইন্ডিয়া। এখন দেখার পালা বৃষ্টি জয় করে মাঠে নামতে পারবে কি না দুই দল।
বিশ্বকাপের দুটি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ম্যাচের জন্য রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে। কিন্তু লিগ পর্বের জন্য কোন রিজার্ভ ডে নেই। ম্যাচ গুলো যাচ্ছে ভেস্তে।
এতে বেশ ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায় ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে। নানান রকম প্রশ্ন আসে সাংবাদিক ও সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে। এমন প্রশ্নে অপারগতা প্রকাশ করে বিবৃতি দেন আইসিসির প্রধান নির্বাহি ডেভিড রিচার্ডসন। তিনি বলেন,‘বিশ্বকাপের প্রতি ম্যাচের জন্য রিজার্ভ ডে রাখতে চাইলে টুর্নামেন্টের সময়কাল বেশ দীর্ঘ হয়ে যেত। এরকম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব।
পিচ প্রস্তুতি, দলগুলোর আসা-যাওয়া, আবাসন, ভেন্যু, টুর্নামেন্টের স্টাফ, স্বেচ্ছাসেবক ও ম্যাচ অফিশিয়ালদের প্রাপ্যতা ও সম্প্রচারসহ নানা ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিত। তাছাড়া যেসব দর্শকরা অন্য শহর থেকে খেলা দেখতে আসত, তাদের জন্যও রিজার্ভ ডের ব্যাপারটি জটিল হয়ে যেত। প্রই ম্যাচের জন্য রিজার্ভ ডে রাখতে গেলে প্রচুর লোকবল দরকার। এতো লোকবল বাড়ানো সম্ভব নয় বলেই শুধু নকআউট পর্বেই রিজার্ভ ডে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ ক্রীড়প্রেমীদের প্রত্যাশা ‘বিশ্বকাপ’ যেন ‘বৃষ্টিকাপ’ না হয়।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১০টি শহরে ১১টি ভেন্যুতে ৪৬ দিনে মোট ৪৮টি ম্যাচ দেখবে বিশ্ববাসী। দশ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে ১৯৯২ বিশ্বকাপের আদলে হচ্ছে টুর্নামেন্ট। যেখানে একবার করে প্রত্যেকটি দলই একে অন্যের মুখোমুখি হবে। নিয়ম অনুযায়ী পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা চার দল খেলবে সেমিফাইনাল।
লন্ডনের ওভালে ৩০ মে পর্দা উঠেছে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের। আর ১৪ জুলাই পর্দা নামবে লর্ডসে।