অটিস্টিক শিশুর পরিবারের বসত ভিটা দখলের ষড়যন্ত্র:আইনের আশ্রয় নেয়ায় হত্যার হুমকি
শ্যামনগর উপজেলার ছোট কুপোট পল্লীতে মাত্র সাত বছর বয়সী এক অটিস্টিক শিশুর পরিবারের বসত ভিটা দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বসত ভিটা থেকে বিতাড়নের কৌশল হিসেবে শিশুটির শোবার ঘরের মধ্যে রান্নার ধোয়া’র প্রবেশ ঘটানোসহ নানা অনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে অভিযুক্তরা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরী করায় ঐ শিশুর পিতাসহ তার পরিবারের সদস্যদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানীসহ হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জনপ্রতিনিধি থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সর্ব স্থরের মানুষের দ্বারস্থ হওয়া অসহায় পরিবারটি প্রতিবেশীর এমন হয়রানীমুলক কর্মকাণ্ডে মানসিকভাবে পর্যদুস্ত হয়ে মাননীয় জেলা প্রশাসকসহ পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে ছোট কুপোট গ্রামের মইনুল ইসলাম তার একমাত্র অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে ১৮২ খতিয়ানের ৩৯১ দাগের পৈত্রিক ভিটায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। এক বছর পূর্বে হাচিনা বেগম নামের এক নারী পার্শবর্তী ৭০ খতিয়ানের ৩৮৮ দাগে কিছু পরিমাণ জমি ক্রয় করে বসতি গড়ে তোলেন। সম্প্রতি হাচিনা বেগম তার ক্রয়কৃত জমির কিছু অংশ মইনুল ইসলামের পৈত্রিক ভিটায় রয়েছে দাবি করে তা দখলে নানামুখী অপ-তৎপরতা শুরু করে।
ইতিমধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে মইনুল ইসলামের ভোগ দখলীয় বসতির কিছু অংশ দখলে নেয়ার পর আরও জমি দাবি করে তা দখলে নিতে হাচিনা বেগম ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারটির। যদিও হাচিনা বেগমের দাবি তিনি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা চালালেও কোন অপতৎপরতায় জড়িত নয়।
কুপোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল ইসলাম জানান, ভিন্ন ভিন্ন দাগ খতিয়ানে জমির মালিকানা থাকা সত্ত্বেও হাচিনা বেগম তার পৈত্রিক বসত ভিটায় জমি দাবি করছে। তার একমাত্র পুত্র অটিস্টিক হওয়া সত্ত্বেও দাবীকৃত জমি দখল চেষ্টার অংশ হিসেবে তার শোবার ঘরের জানালার পাশে রান্না করে চুলার ধোয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ ঘটিয়ে সেখানে তাদের বসবাসে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে হাচিনা বেগম।
তিনি অভিযোগ করে জানান, হাচিনা বেগম ফেব্রুয়ারি মাসে লোকজন নিয়ে কিছু জায়গা দখল করে নেয়ার পর তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোন প্রতিকার না মেলায় বরং প্রতিপক্ষ নারী ও তার স্বামী লিয়াকত আরও বেপরোয়া হয়ে পুনরায় দখলের হুমকি দিলে তিনি উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি এসএম কামরুল হায়দার নান্টুর দ্বারস্থ হন। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের কাগজপত্র দেখে সালিশী বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ আমিন দিয়ে দু’জনের মালিকানাধীন জমির সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। তারপরও সম্প্রতি হাচিনা বেগম তার দাবীকৃত জমি দখলে নিতে নানা ধরনের হুমকি ধমকী দিচ্ছেন এবং রাস্তাঘাটে দেখা হলেই নানা কটু কথা এবং অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন।
তিনি দাবি করেন যে তার শিশুটি অটিস্টিক হওয়া সত্ত্বেও জানালার পাশে রান্নার কাজ সম্পন্ন ছাড়াও অপর একটি জানালার পাশে উন্মুক্ত টয়লেট তেরি করে সেখানে বসবাসে নূতন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
মইনুলের দাবি সম্প্রতি তিনি নিজের জীবনের ভয়ে ভতি সন্ত্রস্ত হয়ে শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করলে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার পর থেকে হাচিনা বেগম আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাস্তাঘাটে মান অপমানসহ জীবন নাশেরও হুমকি দিচ্ছেন বলেও মইনুল ইসলাম দাবি করেন।
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে হাচিনা বেগমের দুই ভাই এর একজন বৈধ এবং অপরজন অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করে কাজের জন্য। হাচিনাও মাঝেমধ্যে সেখানে যাতায়াত করেন। হঠাৎ করে পরিবারটি বেশ অর্থবিত্তেরও মালিক বনে গেছে। যে কারণে প্রতিপক্ষ অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মইনুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের হঠাৎ কোন ক্ষতি করে দেয়ার শংকার মধ্যে পড়েছে বলে দাবি তাদের।
মইনুল ইসলাম জানান অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত তাদের নানা সমস্যার মধ্যে কাটাতে হয়। তার উপর প্রতিবেশী হাচিনা বেগমের বসত ভিটার জায়গা দখল চেষ্টার নানা তৎপরতায় শিশুটির মত নিজেদের নিয়েও তারা চিন্তি হয়ে পড়েছেন।