বাবা‌কে বাঁচা‌তে লিভার দিলেন যুবক

সন্তানদের প্রয়োজনে বাবার আত্মত্যাগ সীমাহীন। সন্তানকে বড় করতে বাবা-মায়ের থাকে অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ। তবে বড় হওয়ার পর সন্তানরা বাবার সেই আদর-ভালোবাসার ঠিকঠাক প্রতিদান দিতে চেষ্টা করেন বা দেন। তবে এবারে ঘটলো ভিন্ন ঘটনা।

লিভারের কঠিন রোগে আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সী বাবাকে সুস্থ করতে প্রয়োজন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। দুই বছরের মধ্যে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে সময় বেধে দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু কে দেবে লিভার? এমন অবস্থায় নিজের কথা না ভেবে বাবার জন্য এগিয়ে এলেন তার ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল হুবায়ের উচ্ছল। তাই সে সাহসী ছেলের কারণেই নতুন জীবন পেলেন বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন।

লিভারে আক্রান্ত আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিবার সূত্র বলছে, দুই ছেলে ও এক মেয়ের পিতা আব্দুল্লাহ আল মামুন হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি লিভারের চিকিৎসা করাচ্ছেন ভারতের দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে। ডাক্তার সুভাস গুপ্তা ও তার টিম দেখছেন তাকে। ডাক্তার বলছেন, হয় লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করুন না হয় দুই বছরের বেশি বাঁচবেন না। তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মনসুর লিভার সিরোসিসে কিছুদিন আগে মারা যান। বাবা ভেঙে পড়েন! আর হয়তো বাঁচবেন না। বাবার এমন কঠিন রোগে সন্তানেরাও ভেঙে পড়েন।

বড় ছেলের জন্ডিস, মেয়ে সিজার করেছে দুইবার। বাবা আর ছোট ছেলের সম্পর্ক সব সময়ই একটু আবেগমাখা হয়ে থাকে। উচ্ছলের ক্ষেত্রেও তাই ছিল। বাবার এমন কঠিন রোগ হয়েছে শুনে প্রথমে ভেঙে পড়েছিলেন উচ্ছল। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা ভেবে দেখেন। তার জীবনে বাবার প্রয়োজন আছে। বাবাকে অনেক ভালোবাসেন উচ্ছল। তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। নিজের জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও বাবার জীবন বাঁচাতে নিজের লিভারের ৭০% দান করার সিদ্ধান্ত নেন।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সন্তান উচ্ছল বেসরকারি টেলিভিশন এসএ টিভির মাল্টিমিডিয়া কো-অর্ডিনেটর। তিনি বাবার চিকিৎসার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। ছেলের আগ্রহে বাবাও চিকিৎসা করানোর জন্য স্বেচ্ছায় অবসর নেন। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য ফের চলে যান দিল্লি। দিল্লির ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় উচ্ছল ও তার বাবাকে।

এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় জটিল এক অপারেশনের আয়োজন। ডাক্তার সুভাস গুপ্তা ও তার টিম টানা ১৪ ঘণ্টার এই জটিল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেন। সুস্থ হয়ে ওঠেন বাবা।

আবদুল্লাহ আল হুবায়ের উচ্ছল জানান, বাবার লিভারের অসুখটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিল। তারও পর কিছুদিন আগে লিভার সিরোসিসে ছোট কাকা মারা যান। টেনশনে ঘুমাতে পারছিলাম না। চোখের সামনে ছোট কাকার মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি। বাবার ক্ষেত্রে এমনটি হবে, সেটা কিভাবে মানব! সিদ্ধান্ত নিই লিভার আমি নিজেই দেব।

উচ্ছলের স্ত্রী আন্নী আজমাইন অপারেশনের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে জানান, ১৪ ঘণ্টা অপারেশনের পর রাত ৮টায় খানিকটা জ্ঞান ফেরে উচ্ছলের। ওটিতে সেন্স আসার পর থেকেই আমাদের দেখার জন্য উদগ্রীব হওয়ায় ডাক্তার আমাদের কল করে। ওটি থেকে আইসিইউতে নিয়ে যাচ্ছে এসময় মাত্র এক মিনিটের জন্য দেখতে পেরেছিলাম। আমাকে দেখে হাত উঁচু করে ভিক্টরি সাইন দেখাল এবং বুঝাল যে সে ভালো আছে। আধখোলা চোখে প্রথমেই তার বাবা কেমন আছে প্রশ্ন করতেই আমি বললাম, ভালো আছে, মাকে দেখতে চাইল। আর এ রকম আধা সেন্সের জড়ানো বুলিতে আমাকে বলল, তোমাকে সুন্দর লাগছে। কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখ-মুখ ফুলে যাচ্ছিল।

লিভার দান করা প্রসঙ্গে ডা. সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান মানুষ তার লিভার বা যকৃতের অর্ধেকের বেশি অংশ দান করে দিতে পারেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের লিভার রি-জেনারেট করে ধীরে ধীরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।

পেটে অপারেশনের গভীর চিহ্ণের ছবি দেখিয়ে উচ্ছল বলেন, বাবাও এখন সুস্থ। আমিও এখন সুস্থ। তবে ডাক্তারের পরামর্শে আরো একমাস পর ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে যোগদান করব।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)