প্রকৃত জন্তু
পাহাড়ে ঘেরা একটা বিশাল জংগল। সেই গভীর জংগলের মধ্যে দুটো অজগর সাপ বাস করতো। তারা মনের আনন্দে বনের মধ্যে ঘোরাফেরা করতো। খাবারের ও অভাব ছিলোনা এবং তাদের শত্রু ও বেশি ছিল না। তাদের খাদ্যের তালিকায় ছিল ইঁদুর, খরগোস, ছোট ছোট জীব জন্তু, পাখি ও পাখির বাসার ডিম । তাদের গুহার একটু দূরে বিশাল উঁচু অশ্বথ গাছে বাসা বানিয়ে দুটো ঈগল বাস করতো । কখনও কখনও চলার পথে তাদের মধ্য দেখা হতো। মাঝে মাঝে সংঘর্ষ ও হতো। কখনও একই শিকার যেমন ইঁদুর দুজনে একই সময়ে তাক করে বসতো। ঈগল দ্রুত গামী প্রাণিদের মধ্যে একটা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঈগলের জয় হতো। সব মিলিয়ে ঈগল দুটোর প্রতি অজগর দুটোর মনের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ছিল। তাছাড়া গত বারে অজগরের দুটো ডিম ফুটে দুটো বাচ্চা হয়েছিল। সেগুলো ঈগলে সুযোগ বুঝে ধরে নিয়ে খেয়েছে। কিন্তু এবার একই সময়ে অজগরের দুটো বাচ্চা হয়েছে এবং ঈগলেরও দুটো ছানা হয়েছে।
এখন দুই পরিবার তাদের বাচ্চাদের খাবার সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত। ঈগল ছানা ডিম ফুটে বের হলেও উড়তে পারে না। কারণ তাদের সাধারণত এক মাস সময় লাগে, এর মধ্যে গায়ে লোম, পশম ও পাখনা গজায়। তারপর তারা উড়তে পারে। কিন্তু অজগরের বাচ্চা দুটো ডিম থেকে বের হয়েই চলাফেরা করতে পারে, এখানেই অজগরের ভয় । তারা শিকারে যাওয়ার আগে বাচ্চাদের বলে যায়,
– খবরদার গুহা থেকে বের হবিনা । পাশেই ঈগলের বাসা, তারা তোদের ধরে খেয়ে ফেলবে।
তাছাড়া আরও অনেক রকম শত্রু আছে । শিয়ালতো ওত পেতে বসে থাকে।অজগরের বাচ্চা দুটো কি আর মা-বাবার কথা শুনে গুহার মধ্য বসে থাকতে চায়। তারা সুযোগ পেলেই বাইরে চলে আসে। ঈগল দুটোর চোখে পড়েছে যে অজগরের আবার দুটো বাচ্চা হয়েছে। তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। যখন দেখবে অজগর দুটো শিকার ধরতে অনেক দুরে যাবে তখন সুযোগ বুঝে বাচ্চা দুটো ধরবে। এদিকে অজগর দুটো যখন অশ্বথ গাছের নিচ দিয়ে যায় তখন ঈগল ছানার কিচিরমিচির ডাক শুনে বুঝতে পারে যে ঈগলের পরিবারেও নতুন অতিথি এসেছে। অজগরের ও লোভ হয় কিন্তু কি করবে বুঝতে পারেনা। এত উঁচু ডালে উঠে ঈগল ছানা ধরা সম্ভব নয় বলে তারা চুপ করে থাকে। একদিন সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়া ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। অজগর দুটো শিকার ধরতে যেতে পারছেনা। তবে মনে মনে কামনা করছে যে যদি ঈগলের বাচ্চা দুটো ঝড়ে পরে যেত তবে দৌড়ে যেয়ে খেতাম।
অজগরের কামনা হয়তো পূরণ হলোনা কারণ ঝড়ের বেগ আসতে আসতে শীতল হচ্ছে । আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আকাশে সূর্য দেখা যাচ্ছে। কিছুকিছু পশু পাখির ডাকের শব্দ শুনে মনে হচ্ছে প্রকৃতি আবার স্বাভাবিক হয়েছে। চারিদিকে প্রাণের স্পন্দন জেগেছে। ঈগল দুটো তাদের তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে চারিদিকে দেখছে যদি কোনও শিকারের সন্ধান মেলে। তবে ওদিকে অজগর দুটো ও চুপ করে তাদের গুহার মধ্য বসে থাকতে পারছেনা। তাদের বাচ্চা দুটো ভীষণ খুধার্ত। এবং তাদের ও খুধা লেগেছে। তারা বাচ্চা দুটোকে বললো,
– আমরা শিকারে বের হচ্ছি। খবরদার না ফেরা পর্যন্ত গুহা থেকে বের হবি না।
অজগর দুটো গুহা থেকে বের হওয়ার সময় দেখলো ঈগল দুটো চারিদিকে দেখছে। মা অজগরের বুকের ভেতর টা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আবার গুহার ভিতর ঢুকে বাচ্চাকে বললো,
– খবরদার সাবধান আমাদের ফিরতে দেরি হলেও কোন ভাবে গুহা থেকে বের হবিনা ।
বাচ্চা দুটো বললো, – ঠিক আছে মা, ঠিক আছে, আমরা কোন ভাবে গুহা থেকে বের হবোনা।
মা অজগর মনে সস্তি নিয়ে শিকারে বের হলো। চালাক চোর যখন অন্যের ঘরে চুরি করতে যায় তখন নিজের ঘরে তালা দিয়ে রেখে যায় কিন্তু বোকা চোর যখন অন্যের ঘরে চুরি করতে যায় তখন নিজের ঘরে খোলা রেখে যায়, কারণ তারা ভাবে আমি নিজেই চোর, আমার ঘরে কে চুরি করতে আসবে। আর বিপদ তখনই ঘটে। বোকা অজগরের মতো অনেক প্রাণি আছে যারা মা ও বাবা দুজনেই শিকার ধরতে যায় একসাথে, বাচ্চাগুলোকে বিপদের মধ্যে ফেলে। আবার চতুর প্রাণি গুলো যেমন শিয়াল সবসময় বাচ্চা গুলো তাদের সাথে সাথে রাখে।
যাইহোক অজগর দুটো একটু মাথা উঁচু করে দেখল যে ঈগল দুটো তাদের গতিপথে নজর রাখছে কিনা। না, কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা। মনে মনে ভাবলো যাক ঈগল দুটো মনে হয় আমাদের মতো শিকার ধরতে গেছে। আশেপাশে নাই। সাপতো চোখে দেখে না, তারা বাতাসে কম্পন তৈরি করে দুরে কোন জীবের অবস্থান বুঝতে পারে। সেই জন্য তারা বুঝতে পারলোনা যে ঈগল দুটো অন্য কোন উঁচু গাছের উপরে বসে চারিদিকে নজর রাখছে শিকারের সন্ধানে। ঈগল দুটো ঠিকই খেয়াল করলো যে অজগর দুটো খাদ্যের সন্ধানে বের হয়েছে। তাদের শিকার তাদের হাতের নাগালে। একটা ঈগল আরেকটা ঈগলকে সংকেত দিল তৈরি হওয়ার জন্য। কিন্তু কই কাউকেতো গুহা থেকে বের হতে দেখছিনা। অনেক সময় অপেক্ষা করে আছে। একটা ঈগল বললো,- একটু দাড়া আমি গুহার ভিতর কেউ আছে কিনা দেখে আসি।
অন্য টা বললো,
– না, এখন যাওয়া যাবে না। আশেপাশে অন্য কোন জীবের অস্তিত্ব বুঝতে পারলে মোটেই বাইরে আসবেনা, এখন যদিও একটা আশা আছে ।
ওদিকে অজগর দুটো প্রথমে একটা খরগোশ শিকারে ব্যর্থ হয়ে দুজন দু’দিকে চলে গেছে। তারপর মা অজগর ভাবলো না এবার আর দেরি করা যাবে না। বাচ্চা দুটো অপেক্ষা করছে খাবারের জন্য। তাড়াতাড়ি কি শিকার করা যায় তাই ভেবে ইঁদুরের গর্তে মুখ ঢুকিয়ে দিল। ইঁদুর অজগরের উপস্থিতি বুঝতে পেরে অন্য পথ দিয়ে পালিয়ে গেল, কিন্তু রেখে গেল তার ছয়টা বাচ্চা। অজগর প্রথমেই চারটা বাচ্চা পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। তারপর দুটা বাচ্চা মুখের মধ্যে নিয়ে তার নিজ গুহার উদ্দেশ্য রওনা দিলো ।
গুহার কাছে আসতেই সে কিসের শব্দ পেল। আরেকটু এগিয়ে এসে দেখলো ঈগল ঝটপট করে উড়ে যাচ্ছে এবং তার পায়ে একটা ও মুখে একটা তাদের বাচ্চা। অজগর রাগে ও কষ্টে ঈগলের দিকে ফানা তুলে চিৎকার করতে থাকলো এবং দেখলো পাশ থেকে আরে একটা ঈগল উড়ে চলে গেল। ব্যাপারটা কি হলো সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। নিশ্চয়ই তার বাচ্চা দুটো গুহা থেকে বাইরে এসেছিলো। কারণ তাদের ফিরতে অনেক দেরি হয়েছে। তার সাথীও এখনো আসেনি। কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এখুনি ঈগলের বাসায় আক্রমণ করবে নাকি তার সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করবে – ভাবলো সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করি আর কিভাবে অঘটন ঘটলো বোঝার চেষ্টা করতে থাকি। ঈগল অনেক দক্ষ ও চালাক শিকারি। অজগর যেমন ভাবে ভাবছে ঈগল ঠিক তার উলটোভাবে শিকারটা সম্পন্ন করেছে। প্রথমে অজগরের বাচ্চা দুটো ভাবলো তাদের বাবা ও মা আসতে অনেক দেরি করছে যখন তারা নিজেরা খাদ্যের সন্ধানে আশেপাশে চেষ্টা করবে। তাদের অনেক খুধা লেগেছে যদি কিছু পাওয়া যায়। এই ভেবে দুজনে একসাথে বের হয়েছে। এদিকে ঈগল দুটোরও শুভক্ষণ ঘনিয়ে এলো। তারা যখন দেখলো অজগরের বাচ্চা দুটো গর্ত থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে দুরে যাচ্ছে তখন একে অপরকে বললো কি করতে হবে। যে কথা সেই কাজ, একটা ঈগল উড়ে এসে অজগরের গুহার সম্মুখে দাঁড়ালো। আরেকটা ঈগল অজগরের বাচ্চা দুটোর পিছু ধাওয়া করলো। বাচ্চা দুটো প্রাণ ভয়ে দৌড়ে গুহার মধ্য ঢোকার চেষ্টা করলো। তখনি আগে থেকে ওত পেতে থাকা ঈগলটা অজগরের বাচ্চা দুটোর একটা মুখে ও আরেকটা পায়ের মধ্যে ধরে উড়াল দিলো। মা অজগর আর অপেক্ষা করতে পারছেনা। তিনি ভাবলো নিজে গিয়ে চেষ্টা করে দেখি যদি বাচ্চা দুটোকে উদ্ধার করা যায়। দেরি করলে বাচ্চা দুটো ঈগলের পেটে যাবে ।
দৌড়ে অশ্বথ তলায় যেতেই দেখলো তার সঙ্গী একটা আস্তো খরগোশ মুখে নিয়ে ফিরছে। কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো,
– আর বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে না। ঈগলে বাচ্চাদুটো এখনই ধরে নিয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি উদ্ধার করো নইলে ঈগলে খেয়ে ফেলবে।
বাচ্চা বলে কথা, তৎখনাদ মুখ থেকে খরগোশটা ছুড়ে ফেলে অশ্বথ গাছে উঠা শুরু করলো। বড় অশ্বথ গাছে অজগরের জন্য উঠা সত্যি কঠিন কাজ। কিন্তু কি করবে সামনে সময় খুব কম। প্রতিটি বড় বড় ডাল, শাখা জড়িয়ে ধরে যখন ঠিক যেটাতে ঈগলের বাসা সেটাতে উঠবে তখন ঈগল দুটোর মধ্যে একটা উড়ে এসে অজগরের গায়ে , তীব্র নখ দিয়ে আচড় দিতে থাকলো ও ঠোট দিয়ে ঠোকড়াতে থাকলো। অজগরের গা দিয়ে রক্ত পড়ছে তবুও সে থেমে থাকার বান্দা নয়। মা অজগরও তার সঙ্গীকে অনুসরণ করছে। এবার আরেকটা ঈগল এসে লড়াইয়ে যোগদিল। দুইটা ঈগলের চিৎকার ও দুইটা অজগরের ফোঁস-ফোঁসানিতে সমগ্র এলাকা আতংকিত হয়ে গেল। কিন্তু ঈগলের হিংস্র নখের থাবা অজগর দুটো আর সহ্য করতে পারলো না। অবশেষে অনেক উঁচু থেকে কয়েকটা শাখা উপশাখায় আঘাত খেতে খেতে মাটিতে এসে পড়লো। অজগর দুটো আধমরা হয়ে সমগ্র গায়ে জখম নিয়ে মাটিতে পড়ে আছে। সেই সময় দুজন শিকারি অদূরে পশু শিকার করছিল। তারা ঈগলের চিৎকার শুনে অশ্বথ তলায় এসে দেখলো দুটো অজগর আধা মরা হয়ে শুয়ে আছআচড়ি করছে ও ঠোট দিয়ে গাছের গায়ে ঠোকরাচ্ছে। অজগরের গায়ে দিয়ে রক্ত পড়ছে তবুও সে থেমে থাকার বান্দা নয়। মা অজগরও তার সঙ্গীকে অনুসরণ করছে। এবার আরেকটা ঈগল এসে লড়াইয়ে যোগদিল। দুইটা ঈগলের চিৎকার ও দুইটা অজগরের ফোঁস-ফোঁসানিতে সমগ্র এলাকা আতংকিত হয়ে গেল। কিন্তু ঈগলের হিংস্র নখের থাবা অজগর দুটো আর সহ্য করতে পারলো না। অবশেষে অনেক উঁচু থেকে কয়েকটা শাখা উপশাখায় আঘাত খেতে খেতে মাটিতে এসে পড়লো। অজগর দুটো আধমরা হয়ে সমগ্র গায়ে জখম নিয়ে মাটিতে পড়ে আছে। সেই সময় দুজন শিকারি অদূরে পশু শিকার করছিল। তারা ঈগলের চিৎকার শুনে অশ্বথ তলায় এসে দেখলো দুটো অজগর আধা মরা হয়ে শুয়ে আছ ।
তাদের করুন অবস্থা দেখে শিকারি দুজন অজগরদের বললো,
– তোমাদের এমন হাল কে করলো। তাদের মনেকি একটুকুও মায়া দয়া নেই।
মানব প্রাণির মুখে এমন কথা শুনে আহত অজগরদের দেহের ব্যথা যেন হঠাৎ থেমে গেল। তারা এটা কি শুনছে। ভুতের মুখে রাম নাম শোনার মতো। অজগরেরা মুখ তুলে বললো,
– ওইযে উঁচু ডালে যে ঈগল দুটোকে দেখছো তারা আমাদের বাচ্চা দুটো ধরে এনে তাদের বাচ্চাদের খাওয়ায়েছে। আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের এই অবস্থা করেছে।
শিকারি দুজন একসাথে বলে উঠলো,
– দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে ঈগল ও তাদের বাসার দিকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লো। ঈগল দুটো প্রাণ ভয়ে একটু দুরে একটা বড় গাছের উপরে বসলো। তারপর যখন শিকারিরা আরও গুলি চালিয়ে ঈগলের একটা বাচ্চাকে বাসা থেকে নিচে ফেলে দিল। তখন ঈগল দুটো আর চুপ করে বসে থাকতে পারলোনা। তারা চিৎকার করে বললো,
– মূর্খ মানব অনেক হয়েছে এবার থাম। আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাউ তারপর যা মন চায় তাই করিস, বনে কেন এসেছিস?
-শিকার করতে
-ঠিক করে বল শিকার করতে না এলে কি না খেয়ে মরতিস ?
-না
-মূর্খ মানব, শখ করে জীব হত্যা করতে এসেছিস আবার মুখে মানবতার কথা বলছিস। প্রকৃতির ধর্ম কি সেটাই ভুলে গেছিস। যখন আমাদের সাথে বনে বাস করতিস তখন প্রকৃতির ধর্ম মেনে চলতিস ।
এখন বন ছেড়ে লোকালয় বানিয়েছিস। নিজেদের শ্রেষ্ঠো জীব দাবি করছিস।তারপর বলছিস তোরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব এবং তোদের আরাম আয়েশের জন্য সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর বাকি সব কিছু সৃষ্টি করেছে।
ওরে মূর্খ মানব সৃষ্টিকর্তা একটা প্রাণিকে তো বুদ্ধি একটু বেশি দিতেই পারে। তাই তোদের দিয়েছে ৷ তোদের না দিলে আরেকটা জীবের দিত । তোদের যদি আলাদা ভাবে ভাবতো তবে শুরু থেকে তোদের আলাদা ভাবে থাকার ব্যবস্থা করতো। আমাদের সাথে বনে বাস করতে বলতোনা। তোরা এখন আলাদা ভাবে বাস করে আলাদা আলাদা নিয়ম বা মতবাদ বানিয়েছিস আর প্রকৃতির নিয়ম ভুলে বসে আছিস। তোদের মধ্যে কিছু গোষ্ঠী এখনও আমাদের সাথে বনে বাস করে প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে।
আমরা বন্য প্রাণিরা প্রকৃতির নিয়ম প্রতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। আমাদের পেটে খুদা না থাকলে অকারণে অন্য প্রাণি হত্যা করিনা। এমনকি সামনে দিয়ে হেটে গেলেওনা। তোদের মত সখের বসে জীবহত্যা , বনজঙ্গল কেটে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করিনা। তোদের ভুলের কারণে প্রতি নিয়ত কোন না কোন জীব পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি জীবের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে । প্রতি নিয়ত প্রকৃতির নিয়ম ভেঙ্গে তোরা আবার প্রকৃতির নিয়মের বিচার করতে এসেছিস । মূর্খ মানব চিন্তা করে দেখ কি ভুল তোরা করেছিস।
শিকারি দুজন ঈগলের কথা শুনে সত্যি মর্মাহত হলো। একজন শিকারি তার সঙ্গীর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে বনের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দিল। অপর সঙ্গী কে বললো,
– এটা কি করলি বনের মধ্যে কতো হিংস্র জন্তু, আমাদের উপর যখন তখন আক্রমণ করতে পারে।
-সেটা পারে, এই যে আহত অজগরের জন্য আমরা ঈগলের উপর গুলি ছুড়ছিলাম, এই অজগরেরা একটু সুস্থ হলে এরাই আগে আমাদের উপর আক্রমণ করবে। কারণ তারা সত্যি ক্ষুধার্ত। এই বন্দুক যখন ছিলনা তখনও আমরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছি। এখনও সেই ভাবে বাঁচতে হবে। সে সময় একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে বললো , এই ডাল দিয়ে বন্য জীব জন্তুর সাথে লড়াই করে বন থেকে বেড়িয়ে যাব। আর আজ থেকে শপথ নেব অকারণে কোন জীব হত্যা নয়।
লেখক – দীপন মজুমদার