প্রথমবার ব্যাট করতে নেমেই দলকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছিলেন যিনি

বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের তালিকা করতে গেলে একদম ওপরের দিকেই আসে গ্যারি গিলমোরের কথা। ব্যাটে–বলে সমান অবদান রেখে দলকে তুলেছিলেন প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রথম আলোর নিয়মিত আয়োজনের একাদশ পর্বে আজ থাকছে গিলমোরের সেই পারফরম্যান্সের কথা।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ, ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় কাঁপছে তাঁর দল। এর আগে মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলেছেন, কিন্তু ব্যাট করতে নামতে হয়নি কখনোই।
সেই লোকটিই অমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস খেলে ফাইনালে তুললেন দলকে। শুধু এটুকুই নয়, এর আগে বল হাতে মাত্র ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। অথচ এর আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর উইকেট ছিল মাত্র ৩টি!

প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। উইকেটের সবুজাভ ভাব দেখে টস জিতে বোলিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলকে। এক্সপ্রেস বোলার ডেনিস লিলির সঙ্গে অধিনায়ক নতুন বল তুলে দিলেন গ্যারি গিলমোরের হাতে। অথচ বিশ্বকাপে এটি ছিল তাঁর অভিষেক ম্যাচ। কিন্তু ম্যাচে তাঁর অনভিজ্ঞতার ছিটেফোঁটাও দেখতে পাওয়া গেল না।

সবুজ উইকেট থেকে ইচ্ছামতো সুইং আর মুভমেন্ট আদায় করতে লাগলেন গিলমোর। উইকেটের খাতা খুললেন ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ডেনিস অ্যামিসকে ফিরিয়ে। এরপর একে একে ফেরালেন আরও চারজনকে, হয়ে গেলেন ওয়ানডে ইতিহাসে ৫ উইকেট পাওয়া দ্বিতীয় বোলার। এর আগে তাঁর সতীর্থ ডেনিস লিলি এই টুর্নামেন্টেই প্রথম বোলার হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।

কিছুক্ষণ পর গিলমোর ছাড়িয়ে গেলেন লিলিকেও। ইনিংসে নিজের ষষ্ঠ উইকেট তুলে নিয়ে হয়ে গেলেন ওয়ানডেতে ৬ উইকেট পাওয়া প্রথম বোলার। শেষ পর্যন্ত আর উইকেট না পেলেও গিলমোরের বিধ্বংসী স্পেল গুঁড়িয়ে দিল ইংল্যান্ডকে, মাত্র ৯৩ রানে অল আউট হয়ে গেল স্বাগতিকেরা। ইনিংস শেষে গিলমোরের বোলিং ফিগার, ১২-৬-১৪-৬।

গিলমোর হয়তো ভেবেছিলেন, এই ম্যাচে তাঁর অবদান রাখা শেষ। কিন্তু ক্রিকেট বিধাতা বোধ হয় ঠিক করে রেখেছিলেন, অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তোলার পুরো কাজটা গিলমোরকে দিয়েই করাবেন! চার ইংলিশ পেসার জন স্নো, ক্রিস ওল্ড, জিওফ আর্নল্ড ও পিটার লেভারের তোপে মাত্র ৩৯ রানেই ৬ উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে পৌঁছাতে তখনো ৫৫ রান দরকার অজিদের।

অমন সময় ব্যাট হাতে নামলেন এর আগে কখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট না করা গিলমোর। ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে ডগ ওয়াল্টার্সের সঙ্গে মিলে মাত্র ৫৮ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের জুটি গড়ে দলকে ফাইনালে তুলে দিলেন। অমন চাপের মুখে মাত্র ২৮ বলে ২৮ রান করে দলের জয়ে ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন গিলমোর।

গিলমোর–জাদু অব্যাহত ছিল ফাইনালেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে দল হারলেও গিলমোর ফাইনালে ৫ উইকেট পেলেন ৪৮ রান দিয়ে। এতে করে ওয়ানডেতে টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়া প্রথম বোলারও হয়ে যান গিলমোর। টুর্নামেন্টে গিলমোরের পরিসংখ্যানও ছিল দেখার মতো। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল—মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই ৬২ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট!

তবে বিশ্বকাপে এমন আগুনে পারফরম্যান্স দেওয়ার পরেও গিলমোরের ওয়ানডে ক্যারিয়ার লম্বা হয়নি। মাত্র ৫ ওয়ানডেতে ১৬ উইকেট নিয়েই থেমে গিয়েছিল তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ার।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)