‘ফণী’র প্রভাবে ৫-৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা’
খুলনা ও তৎসংলগ্ন মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার এর জন্য ৪ হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়েছে। তবে শক্তিশালী এই আঘাত হানার ফলে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল ১০টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে দেয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ক্রমিক নম্বর ২৮ (আটাশ)-এ এসব সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে বাংলাদেশে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস থাকতে পারে। তবে সন্ধ্যার দিকে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
এবিষয়ে তিনি আরও বলেন, সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রতি ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার বাতাসের শক্তি হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে এ ঝড় শুক্রবার দুপুর নাগাদ ওরিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ ওই বিজ্ঞপিতে যা বলা হয়েছে-
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১,০৬৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১,০২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ব্যাপক শক্তি নিয়ে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় বাংলাদেশে যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্র। দেশের সবগুলো প্রস্তুতি কেন্দ্র ইতোমধ্যেই সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর বরগুনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার সরদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এলার্ট করা হয়েছে। কী কী করণীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকদের বলা হয়েছে তারাও সতর্ক আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে মাইকিং সহ লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে মাঠে নামার কাজও শুরু হবে।’
এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়াও প্রস্তুত রয়েছে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টসহ আরও অনেক স্থানীয় সামাজিক সংগঠন।