দেবহাটায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্যদের পিটিয়ে জখমের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের
দেবহাটার পারুলিয়া আহছানিয়া দাখিল মাদ্রাসার স্বঘোষিত দুর্নীতিবাজ সভাপতি এ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু ও তার ভাই আজহারুলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা পরিবারের সদস্যদের ফিল্মি স্টাইলে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে আহত দাতা পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ইব্রাহিম সরদার মিলন বাদী হয়ে ঘটনার মুল হোতা অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু ও তার ভাই আজহারুল ইসলাম, আব্দুল গফুরের ছেলে মোস্তাকিন, তাসকিন, মিন্টু সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন।
এর আগে শনিবার দুপুর ১টার দিকে মাদ্রাসা চলাকালীন সময়ে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে দুর্নীতির প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা পরিবারের সদস্য ফজিলা খাতুন, হুমায়ুন কবির রাজু, ইব্রাহিম সরদার মিলন ও জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চুকে ফিল্মি স্টাইলে অফিসের চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দুর্নীতিবাজ অ্যাডভোকেট সভাপতি শরিফুল ইসলাম বুলু, তার ভাই এলাকার বহুল আলোচিত সুদখোর আজহারুল ইসলাম, কদবেলতলা এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মোস্তাকিন, তাসকিন, সখিপুরের মিন্টু সহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী।
দায়েরকৃত অভিযোগ, আহতদের পরিবার এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পারুলিয়া আহছানিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে ১৪ বিঘা ৫ শতক জমি এবং অর্থ পারুলিয়ার কদবেলতলা এলাকার হাজী বাসারাত উল্লাহর পরিবারের দেয়া। দানকৃত জমির মধ্য থেকে উন্নয়নের জন্য থাকা ১৪ বিঘা জমিটি এলাকায় হারী দিয়ে হারীর সমুদয় অর্থ মাদ্রাসার উন্নয়ন খাতে সুনির্দিষ্ট হিসাবের মাধ্যমে খরচের নিয়ম থাকলেও, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত জমির হারী থেকে প্রাপ্ত প্রায় ১০ লক্ষ টাকার কোন হিসাব না দিয়ে মাদ্রাসার সুপার আমিনুর রহমান, দুর্নীতিবাজ সভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু ও তার ভাই সুদখোর আজহারুল ইসলাম আত্মসাৎ করে চলেছে। শুধু তাই নয়, ২০১০ সাল পরবর্তী এ পর্যন্ত মাদ্রাসায় হওয়া শিক্ষক ও দাপ্তরিক সহ ৫টি পদের নিয়োগে এসব দুর্নীতিবাজরা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। সভাপতির ভাই আজহারুল খাতা কলমে অনেক আগে অবসরে গেলেও অদ্যাবধি প্রতিদিনই অবৈধভাবে শিক্ষকতার নামে রামরাজত্ব কায়েম সহ শোষণ করে চলেছে মাদ্রাসাটি। তাছাড়া মাদ্রাসায় রিয়াজুল ইসলাম নামের এক নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেয়া থাকলেও, ওই নৈশ প্রহরীর নামে বেতন তুলে আত্মসাৎ করছে সুদখোর আজহারুল ইসলাম ও তার ভাই দুর্নীতিবাজ সভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু। এমনকি মাদ্রাসায় সর্বশেষ নিয়োগে মাদ্রাসার সুপার আমিনুর, সভাপতি শরিফুল ইসলাম বুলু ও তার ভাই আজহারুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে নিয়োগ বোর্ডের নামে আরো ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছে নিয়োগপ্রাপ্ত এনামুল ইসলাম।
এসব দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেনের কাছে এডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু ও তার ভাই আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার মাদ্রাসা চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা পরিবারের সদস্য ফজিলা খাতুন, হুমায়ুন কবির রাজু, ইব্রাহিম সরদার মিলন ও জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চু চলমান দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করায় মাদ্রাসার সুপার আমিনুরের মদদে দুর্নীতিবাজ সভাপতি এডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু ও তার ভাই আজহারুল ইসলাম, কদবেলতলা এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মোস্তাকিন, তাসকিন, সখিপুরের মিন্টু সহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ওপর অতর্কিত হামলা ও মারপিট শুরু করে। এসময় প্রতিবাদকারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা পরিবারের সদস্যদের ফিল্মি স্টাইলে অফিসের চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দুর্নীতিবাজ সভাপতি এডভোকেট শরিফুল ইসলাম বুলু, সুদখোর আহজারুল ইসলাম সহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন।
পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহত দাতা পরিবারের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চুকে প্রথমে সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এঘটনার পরই আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ইব্রাহিম সরদার মিলন বাদী হয়ে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও মারপিটের ঘটনার মুলহোতা দুর্নীতিবাজ সভাপতি শরিফুল ইসলাম বুলু, সুদখোর আজহারুল ইসলাম সহ হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, হামলা ও মারপিটের ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত পরবর্তী দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওসি।