ফেসবুক সঠিক পথে আসবে?
বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুক ঠিক নেই। ভুয়া খবর ছড়ানো, সহিংসতা উসকে দেওয়া, রাজনীতিতে নাক গলানোর মতো নানা অভিযোগ ফেসবুকের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন দেশে ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের দাবিও উঠেছে। সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুক ঘিরে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা প্রাইভেসি বা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার। গত বছরের ফেসবুক ঘিরে অন্তত ২০টি কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ফেসবুকের পক্ষ থেকে সঠিক পথে ফেরার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের চারটি নতুন ধারণা দিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা ওই নিবন্ধ অবশ্য কাউকে আশ্চর্য করেনি। তবে শুধু ওই নিবন্ধ লিখে পার পাচ্ছে না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক ও জাকারবার্গকে ঘিরে সমালোচনা চলছেই। ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়নি। ফেসবুকে এখনো যে পরিমাণ সমস্যা রয়েছে, তাতে পুরো ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে জাকারবার্গের দেওয়া প্রস্তাবকে অগভীর বলেই মনে হয়।
অবশ্য ফেসবুকের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে স্বীকারোক্তির ক্ষেত্রে। ফেসবুকে যে সমস্যা রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যা ধরেই সমাধানের কথা বলছেন জাকারবার্গ।জাকারবার্গের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে কোনটি অনলাইনের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্ট, তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। এতে ফেসবুকের জন্য কনটেন্ট সরিয়ে ফেলা সহজ হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের জন্য আইন করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে মানানসই প্রাইভেসি নীতিমালার প্রস্তাবও এনেছেন জাকারবার্গ। তাঁর যুক্তি, ইউরোপের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন
রেগুলেশনের (জিডিপিআর) মতো প্রাইভেসি নিয়ম করলে তা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মানা সহজ হবে।
ইউরোপের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনের (জিডিপিআর) কথা উল্লেখ করে জাকারবার্গ লিখেছেন, জিডিপিআরের মতো পরিচিত ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে যদি আরও দেশ এগিয়ে আসে, তবে তা ইন্টারনেটের জন্য ভালো হবে।
জাকারবার্গ চাইছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন ফেসবুকসহ অন্য ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে। যদি ভুল করে, তবে যেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। নতুন নিয়মকানুন নিয়ে বিশ্বের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় আগ্রহী।
জাকারবার্গের প্রস্তাবগুলো ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে প্রয়োগ হয়েছে। আরও কয়েকটি দেশে এ রকম নীতিমালা গৃহীত হবে শিগগিরই। তবে ফেসবুক ঘিরে বড় সমস্যা হচ্ছে এর অতীতের ভুলগুলো। জাকারবার্গের ভুল পদক্ষেপগুলোর গভীরতা জানার উপায় থাকছে না। জাকারবার্গ যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন, সেগুলো ফেসবুকের লাভের দিক বিবেচনা করেই। সরকার বিভিন্ন নিয়মনীতি করে দিলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য লাভ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকার চাইছে, ফেসবুকের বিভিন্ন কেলেঙ্কারির জন্য যেন তারা দায় এড়াতে না পারে। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অনিরাপদ ব্যবস্থাপনার জন্য ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে যাতে দায়ী করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রকেরা।
গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেডারেল ট্রেড কমিশন ও ফেসবুকের মধ্যে জাকারবার্গের দায়দায়িত্ব নিয়ে আলোচনাও চলছে।
ফেসবুক ও তার ব্যবহারকারীরা ফেসবুককে আবার সঠিক কাঠামোর মধ্যে দেখতে চান। এ জন্য শিগগিরই হয়তো সরকারি নানা হস্তক্ষেপ দেখা যেতে পারে। ফেসবুককে কাঠামোর মধ্যে আনার প্রচেষ্টার মধ্যে জাকারবার্গের সাম্প্রতিক প্রস্তাব একটা ছোট অধ্যায় মাত্র। তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ, সিএনএন ও রয়টার্স।