একটি হিন্দু পরিবারকে ভারতে তাড়িয়ে দেয়ার পায়তারার অভিযোগ
মনিন্দ্রনাথ মিস্ত্রি নামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী একটি হিন্দু পরিবারকে তার জম্মভুমি বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার পায়তারা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
সনাতন ধর্মের ও পরিবারটির পৈত্রিক বসতভিটা দখলের উদ্দেশ্যে ১৪ এপ্রিল সকাল আটটার দিকে মন্দ্রিনাথের স্ত্রী প্রভা রানী ও তার পুত্রবধূ দিপালী রানীকে বেধড়ক মারপিটও করে তারা। এক পর্যায়ে তাদের পরিধেয় বস্ত্র পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয় কুদ্দুস সরদার ও তার লোকজন। এসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে কুদ্দুস সরদারের রোশানল থেকে হামলার শিকার পরিবারটিকে উদ্ধার করে।
অসহায় পরিবারটি এখন ন্যায় বিচারের স্বার্থে জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন সকল মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
ঘটনাটি শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকার।
পরিবারটিকে এলাকা ছাড়া করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আব্দুল কুদ্দুস চরম দাম্ভিকতার পরিচয় দিয়ে যেকোনো মূল্যে তাদের বসতভিটা ছিনিয়ে নিয়ে দেশ ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মনিন্দ্রনাথ ও তার স্ত্রী।
মনিন্দ্রনাথ মিস্ত্রি লিখিত অভিযোগ করে বলেন, ১৪ বছর আগে একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কুদ্দুস সরদার সুবোল মিস্ত্রিকে ভারতে গোপনে ভারতে পাঠিয়ে দেয়। এক বছর পরেই কুদ্দুস সরদার সুবোলের চাচাতো ভাই ভুপেন মিস্ত্রিকে সুবোল মিস্ত্রি সাঁজিয়ে সুবোলের নামীয় ২৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। যার মধ্যে আট/নয় কুশ জমি ছিল সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত।
মনিন্দ্রনাথ আরও অভিযোগ করে বলেন, নিজের কোন রেকর্ডিও জমি না থাকার কারণে ভাইকে ভারতে পাঠিয়ে তিনি পৈত্রিক ওই জমির একটি অংশে থাকা খাস জমিতে জম্মেও পর থেকে বসবাস করে আসছে।
বর্তমানে তিন সন্তান ও স্বামী স্ত্রীসহ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি সরকারি ওই খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে বসবাস করার সুযোগে কুদ্দুস সরদার তাদেরকে বিতাড়িত করতে না পেরে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
প্রভা রানীর অভিযোগ তার দিনমজুর স্বামী কাজের জন্য বাইরে থাকার সুযোগে কুদ্দুস সরদার প্রায় তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হুমকি ধমকী দেয়।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন ১০/১২ বছর কুদ্দুস সরদার সুবোল মিস্ত্রি সাঁজিয়ে তার স্বামীর ভাই এর অংশ লিখে নেয়া জমি ফেরত দেয়ার স্বার্থে চল্লিশ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করে। এছাড়া তিনটি গরু এবং দশ হাজার টাকার ধান ও ২৭টি খেজুর ও দুটি তাল গাছ কেটে নেয় কুদ্দুস সরদার।
মনিন্দ্রনাথ ও তার স্ত্রী প্রভা রানীর অভিযোগ এসব টাকা ও সম্পদ গ্রহণের পরপরই কুদ্দুস ‘চোখ উল্টে’ দেয় এবং ইতিপূর্বে আদায়কৃত টাকাসহ সহায় সম্পদ বন্ধক হিসেবে গ্রহণ করার কথা জানিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী এ পরিবারের অভিযোগ সরকারি খাসখতিয়ানবুক্ত সম্পত্তি থেকে তাড়িয়ে দিতে কুদ্দুস সরদার এখন মনিন্দ্রনাথ ও তার পরিবারের সদস্যদের গুমসহ মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা এবং দেশ ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।
অভিযুক্ত কুদ্দুস সরদার জানান, আমার জায়গায় আজ সকালে কলাগাছ লাগাতে গেলে ওরা বাঁধা দেয়ায় সামান্য হাতাহাতি হয়। তিনি আরও বলেন সাদেম চেয়ারম্যান আমার বোনাই এবং প্রফেষার মোশারফ আমার বন্ধু। তবে সনাতন পরিবারটিকে ভারতে পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আগে থেকে ভারতে চলে যেতে চাইছিল তাই আমি কথা প্রসঙ্গে এমন কথা বলেছিলাম।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, এদেশ সবার। এখানে হিন্দু মুসলমান সবার সমান অধিকার। কেউ যদি কাউকে দেশ ছাড়ার হুমকি দেয় আর তার প্রমাণ মেলে তবে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
তরুণ এ জননেতা আরও বলেন পরিবারটি সত্যিই ভূমিহীন হলে তাদেরকে অবশ্যই খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসনিক ভাবে উদ্যোগ নেয়া হবে।