সাতক্ষীরায় আমের আড়ত না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা

আমের মোরব্বা আর আচারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে জেলার বাজারে কাঁচা টক আমের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন জেলার বাজারে শতশত মণ আম বেচাকেনা হচ্ছে। এ বছর আমের আগাম মুকুল আসায় বাজারে আগাম আম উঠতে শুরু করেছে। তবে ঝড় বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল ও গুটি আমে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কাঁচা আমের দাম তুলনামূলক বেশি।

প্রতিদিন এ জেলা থেকে ৩ থেকে ৪ ট্রাক আম রাজধানী ঢাকার বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহ ধরে কাঁচা আম জেলার বাজারে উঠলেও বৃহস্পতিবার থেকে বাণিজ্যিকভাবে কাঁচা আম কেনা-বেচা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথম দিকে মণ প্রতি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় আম ক্রয় বিক্রয় হয়েছে। এখন বাজারে আমের সরবরাহ একটু বেশি থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে।

চাষিরা বলছেন কুয়াশা ও ঝড়ে যে পরিমাণে আমের ক্ষতি হয়েছে তাতে এ বছর আমে লোকসান হতে পারে। তবে দাম ভাল পেলে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ৪ হাজার এক শ’ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২০০টি বাগান রয়েছে। চলতি বছরে এসব বাগানে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

গুণে ও মানে ভরা সাতক্ষীরার কাঁচা আমে এখন বাজার সয়লাব। প্রতিদিন সাতক্ষীরার বড় বাজারে শতশত মণ আম বেচাকেনা হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখন সাতক্ষীরার বিভিন্ন বাজারে। অন্য বছরের তুলনায় এবার কাঁচা আমের দাম দ্বিগুণ। প্রতি মণ আম এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি কাঁচা আম বিক্রি করে পাচ্ছেন কমপক্ষে ৬০-৮০ টাকা। আমের সাইজ বড় ও দেখতে সুন্দর হলে কেজি ১২০ টাকার উপরে। পাইকারি আম ব্যবসায়ীরা গ্রামের আম চাষিদের কাছ থেকে কম দামে সংগ্রহ করে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা থেকে ৩-৪ ট্রাক কাঁচা আম যাচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাতে। যার বাজার দর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো।

সাতক্ষীরার বড় বাজার কর্তৃপক্ষ জানান, বাজারে কাঁচা আম উঠতে শুরু করেছে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার মণ কাঁচা আম তিনি ক্রয় করে ঢাকাতে পাঠান। বৃহস্পতিবার সে ৫০ মণ আম ক্রয় করেন। তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে সাতক্ষীরার বড় বাজার থেকে দুই ট্রাক আম ঢাকায় যাচ্ছে। এছাড়া জেলার তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া, আশাশুনি থেকেও কাঁচা আম রাজধানীতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

কাঁচা আমের পাইকারি ব্যবসায়ী পলাশ জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে আম কিনতে সাতক্ষীরা বড় বাজারে এসেছেন। তিনি ৩৫ ঝুড়ি আম কিনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। প্রতি ঝুড়িতে আম ধরে ১শ’ থেকে ১২০ কেজি। অন্যদিকে মুজাহিদ নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকার বাইফেল থেকে এসেছেন। তিনিও প্রায় ১শ’ মণ কাঁচা আম কিনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

সাতক্ষীরা শহর কাঁচা-পাকা বাজার সমবায় সমিতির সভাপতি কাজী কবিরুল ইসলাম জানান, দেশের বাজারের সাতক্ষীরা জেলার আম আগাম উঠতে শুরু করে। এবছর দু’দফায় আম গাছে মুকুল আসে। প্রথম দফার মুকুলে আমের গুটি বাঁধে। কিন্তু বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে দ্বিতীয় দফায় মুকুল ধরা আম গাছে আমের গুটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এবছর জেলাতে আমের ধরণ তুলনামূলক কম। এর পরও দাম ভাল পেলে চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

একই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী জানান, জেলাতে সরকারিভাবে কোন কাঁচা মালের আড়ত না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে অনেক কাঁচা মাল নষ্ট হয়ে যায়। তার দাবী জেলার বড়বাজারে সরকারিভাবে কাঁচা মালের আড়ত ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া।

সাতক্ষীরা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরার আম গুণে-মানে সুস্বাদু। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। বিগত বছরগুলোর মতো এবছরর এখানকার আম ইউরোপে রফতানি হবে। যে কারণে টার্গেটকৃত বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)