সাতক্ষীরায় বিভিন্ন স্কুলে বিশেষ ক্লাসের নামে চলছে কোচিং বাণিজ্য !

সাতক্ষীরার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ ক্লাস নাম নিয়ে চলছে কোচিং বাণিজ্য । বর্তমান সরকারের ২০১২ সালের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা এবং এইচএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে জারি করা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। তবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বলছেন কোচিং নয় চলছে বিশেষ ক্লাস। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে টাকা দিয়েই তারা স্কুলে কোচিং করছে।

বুধবার (১০ এপ্রিল) সরেজমিনে সাতক্ষীরার কয়েকটি স্কুলে ঘুরে দেখা গেছে দরজা-জানালা বন্ধ করে কোচিং করানোর দৃশ্য। সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যেয়ে দেখা যায় কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত আছে শিক্ষকরা। এসময় ষষ্ঠ শ্রেণির কোচিং শিক্ষক আবদুর রউফ ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে কোচিং করাচ্ছিলেন। সংবাদকর্মীরা কোচিং এর বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কোচিং নয় বিশেষ ক্লাস চলছে। তবে ওই ক্লাসের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম, ফাহিম, রাফি, সৈয়কতসহ কয়েকজন জানান, মাসিক ১ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা কোচিং এ ক্লাস করছে বলে জানান ।

পরে একই ভাবে পৃথক শ্রেণি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণির কোচিং করাচ্ছিলেন ইয়াসিন আলী ও শারমিন সুলতানা। তাদের ক্লাসে প্রায় ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসে ৬শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টির আরো কয়েকটি শ্রেণি কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির ছাত্রদের করানো হচ্ছে বিশেষ ক্লাস নামধারী কোচিং। এর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫শ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত টাকা।

কোচিং করানোর বিষয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কমলেশ, মোস্তাফিজুর রহমান, মাসুম বিল্লাহ এবং তহমিনা বেগমসহ আরো কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমরা প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে বিশেষ ক্লাস করাচ্ছি। এটা কোচিং নয়।

শিক্ষামন্ত্রাণলয়ের নীতিমালায় বিশেষ ক্লাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রাণালয়ের নীতিমালার কিছু মানা হলেও বাকিটা চলছে শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতায়। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে শুধুমাত্র অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু কোচিং করা সকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের আবেদন ছাড়াই করানো হচ্ছে বিশেষ ক্লাস।

এ নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক অর্থ গ্রহণ করার সময় অর্থপ্রাপ্তির রশিদ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও সেটিও মানা হচ্ছে না যথাযথভাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, অনেকসময় শিক্ষকদের চাপে পড়ে কোচিং করাতে হয়। না হলে সন্তানেরা ভালো ফলাফল করতে পারবে না। যদি বিশেষ ক্লাসে মনোযোগী না হয়ে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পাঠদান করে তবে কোচিং এর দরকার পড়ে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা নীতিমালা অনুসরণ করেই বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। মূলত পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা।

তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খেয়াল করলে দেখবেন বাইরের কোচিং এর শিক্ষকদের চেয়ে স্কুলের শিক্ষকরা বিশেষ ক্লাসে ভালো পাঠদান করেন।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, যদি স্কুলের শিক্ষকরা নীতি বহির্ভূতভাবে কোচিং করান। আর কোন অভিভাবক যদি এ ব্যাপারে অভিযোগ দেয় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)