মাদ্রাসা ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টা করা সেই অধ্যক্ষ সাবেক জামায়াত নেতা
ফেনীতে ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় আলোচিত শিক্ষক সিরাজ উদদৌলা সাবেক জামায়াত নেতা। বিভিন্ন অভিযোগে ২০১৬ সালে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির এ কে এম শামসুদ্দিন। এছাড়াও চেক জালিয়াতি, প্রতারণা ও নাশকতার অভিযোগে চারটি মামলা হলেও স্বপদে বহাল ছিলেন সাবেক এই জামায়াত নেতা।
এর আগে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় মাদ্রাসাটির ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ৮০ ভাগ অগ্নিদগ্ধ হওয়া রাফি বর্তমান অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ওই ছাত্রী। এ ঘটনার ৬ মাস আগে ওই অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী।
নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ছিলেন, একজন লম্পট প্রকৃতির লোক। রাফির গায়ে হাত দেয়ার ঘটনায় আমি নিজেও অধ্যওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি, প্রতারণা, নাশকতা ও যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ফেনী ও সোনাগাজী থানায় চারটি মামলা রয়েছে। চেক জালিয়াতির মামলায় ২০১৭ সালেও জেল খেটেছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনাগাজী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাফীর গায়ে অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় প্রভাবশালী একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাদ্রাসার একটি মাত্র প্রবেশ পথ। গেইটের দারোয়ান ছিল, পুলিশ ছিল, পরীক্ষা কেন্দ্রে বহিরাগত কোন লোকই ছিল না। নুসরাত জাহানের গায়ে কে বা কাহারা আগুন লাগিয়েছে, তার চাইতে বড় কথা হলো, অগ্নি সংযোগকারী সেই দূর্বৃত্তরা পুলিশ, দারোয়ানকে এড়িয়ে কিভাবে প্রবেশ পথ দিয়ে বের হয়ে গেলো, তা অবাক হওয়ার বিষয়।’
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম, ফেনীর পুলিশ সুপার এবং উক্ত মাদ্রাসার গর্ভনিং বডির সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট পি.কে এনামুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ সোনাগাজী থানায় বেলা ১১ টা থেকে নুসরাত জাহান রাফীর সহপাঠী আলীম পরীক্ষার্থীদেরকে তার কক্ষে এক এক করে ডেকে রাফীর অগ্নিদগ্ধ’র ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান এবং প্রত্যেকের বক্তব্য রেকর্ড করেন।
বিকেলে এডিশনাল ডিআইজি সাংবাদিকদের এক ব্রিফিং এ বলেন, তিনি ছাত্রী ও শিক্ষকদের বক্তব্যের পর বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত পেয়েছেন এবং কিছু ঘটনা আঁচ করতে পেরেছেন, যা তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রকাশ করতে রাজী নন। তদন্ত শেষে এ নারকীয় ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে থানায় এখনও কোন মামলা হয়নি, তবে যদি ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে কোন মামলা করতে রাজী না হলে, পরবর্তীতে পুলিশ তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সোনাগাজীর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সবকিছু সময় মতো বের হয়ে আসবে, তবে একটু ধৈয্যের ব্যাপার।