চিকিৎসক সংকটে বেহাল অবস্থায় কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
উপজেলার একমাত্র সরকারি এই ৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ৩৪ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২জন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডাক্তার সংকট ও হাসপাতালের নানাবিধ সমস্যার কারণে উপজেলার ৩ লক্ষাধিক জনসাধারণ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নতুন নয়, মাসের পর মাস এমন করুণ-বেহলা অবস্থা চললেও সমাধানের আলো দেখাই যাচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- প্রাধিকার অনুযায়ী সহকারী সার্জন, মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গাইনি ও শিশু চিকিৎসক, ১২টি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য বিভাগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট পদ রয়েছে ৩৪টি। এরমধ্যে বর্তমানে ৪জন কর্মরত আছেন। এদের ১জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা (টিএইচও), ২জন মেডিকেল অফিসার ও ১জন বিডিএস ডেন্টাল সার্জন। তবে টিএইচও’কে সর্বদা প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকতে হয়। আর শুধুমাত্র দাঁত বিষয়ক চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকেন ডেন্টাল সার্জন। ফলে মাত্র ২জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে-ই সামগ্রিক চিকিৎসা সেবা করাতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়- মাত্র দু’জন চিকিৎসক হলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.শফিকুল ইসলাম ও মেডিকেল অফিসার ডা.বেলাল হোসেন। এই দু’জন চিকিৎসকরা নিয়মিত আউটডোর চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগিদের চিকিৎসা, জরুরী বিভাগসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। মাঝে মধ্যে আউটডোরে রোগির সংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে পড়লে দু’জন ডাক্তারের পাশাপাশি টিএইচও’কেও আউটডোরে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে দেখা যায়। তাদের (ডাক্তার) নিজেদের শারীরিক, পারিবারিক কিংবা অন্য কোন সাময়িক সমস্যা বা বিশেষ কারণে ছুটিতে থাকলে রোগিদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সূত্র আরো জানায়- হাসপাতালের জরুরী বিভাগটি এখন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট (স্যাকমো)দের দিয়েই মূলত পরিচালিত হচ্ছে। জরুরী ও মারাত্মক অসুস্থ্য রোগিদের তাৎক্ষনিক চিকিৎসাসেবা ও ব্যবস্থাপত্রও স্যাকমোরা দিতে বাধ্য হচ্ছেন ডাক্তার সংকটের কারণে। সবমিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পদায়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আদিত্য, জিল্লুর, মৃত্যুঞ্জয়, রেশমাসহ অনেকে জানান- ‘সরকারি হাসপাতালে এসেছি বড় ডাক্তার দেখাবো বলে। কিন্তু ডাক্তার সংকট চরমে। হাসপাতাল ব্যতিত বর্তমানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার অন্যতম উপযুক্ত জায়গা হলো ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো।’
সাধারণ রোগিরা জানান- হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়, নার্স দিয়ে চলছে কাটা-ছেড়া ব্যান্ডেজের কাজ। সিজারসহ অন্যান্য অপারেশন রয়েছে বন্ধ। এক্সরে, প্যাথলজি চলছে ধুকে ধুকে।
রোগিরা আরো জানান- এর বাইরে হাসপাতালের প্রধান সহকারী, পরিসংখ্যান, ক্যাশিয়ার পদ শুন্য। স্টোর কিপারের একটি পদ শুন্য থাকায় দু’জন ফার্মাসিস্টের একজনকে দিয়ে স্টোর কিপারের কাজ করানো হচ্ছে। একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকলেও কি কারণে তিনি সেবা দেন না তা মানুষের অজানা। ল্যাব অ্যাসিস্টান্ট পদে একজন আজো নিয়োগপ্রাপ্ত হননি। ফিজিওথেরাপি, সেনেটারির একটি করে পদ শুন্য থাকায় এ সংক্রান্ত সেবা বিপর্যস্থ হচ্ছে। ইপিআই, কার্ডিওগ্রাম পদের জনবল থাকলেও প্যাথলজি সংক্রান্ত সেবার খোঁজ মেলাতে রোগিদের ছুটতে হয় বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে। ফলে সরকারি হাসপাতালে পাশেই গড়ে ওঠা প্যাথলজি সেন্টারগুলোর ব্যবসা এখন জমজমাট।
চিকিৎসক পদায়নের দাবি জানিয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.শফিকুল ইসলাম বলেন- ‘চিকিৎসক সংকটে রোগিরা যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন ঠিক তেমনি নিজেরাও ভোগান্তিতে পড়ছি। এখানে ডাক্তার পদায়নের বিকল্প নেই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা.কামরুল ইসলাম বলেন- ‘ডাক্তার ছাড়া আমরা চলতে পারছি না। জরুরী ভিত্তিতে এখানে ডাক্তার প্রয়োজন।’
অন্যান্য তথ্য দিয়ে তিনি জানান- ২৬টি নার্স বা সেবিকা পদের বিপরীতে ২৪জন কর্মরত ও ২জন প্রেষনে আছেন। তাদের দিয়েও ভর্তিকৃত রোগিদের প্রাথমিক সেবা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। জরুরী বিভাগসহ অন্যখানে ৬জন মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট কর্মরত আছেন। এছাড়া অফিসিয়াল কাজকর্ম সম্পাদনের জন্যও জনবল সংকট রয়েছে।
সবমিলিয়ে হাসপাতালে শুধুমাত্র ডাক্তার সংকটে নিদারুণ কষ্ট, বিড়ম্বনা আর ভোগান্তি পড়ছেন সকলে। মাসের পর মাস এই সংকট থাকলেও ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় উদ্বেগজনক। বিষয়টি নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্ববান হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সচেতন মহল।