ভুল চিকিৎসায় কালিগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকার মৃত্যু
অপারেশন থিয়েটারে তুলে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ভুল ইনজেকশন দেওয়ায় ফতেমা তুজ জোহরা ওরফে চামেলি (৩০) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
রোববার রাত আটটার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা আহছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। চামেলী সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বড়কুপট গ্রামের ব্যাংক কর্মী ফজলুল হক আকাশের স্ত্রী ও খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শিক্ষক।
জনতা ব্যাংকের শ্যামনগর শাখার কোষাধ্যক্ষ ফজলুল হক আকাশ জানান, তার স্ত্রী তিন বছর ধরে খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শিক্ষক। তিনিও সম্প্রতি খুলনা থেকে শ্যামনগরে বদলী হয়ে এসেছেন।
তাদের চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান ডেলিভারির জন্য তার স্ত্রী চামেলীকে শনিবার সকালে খুলনা থেকে তার বাপের বাড়ি কালিগঞ্জের নলতা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লিয়াকত আলীর বাড়িতে আনা হয়। চাচা শ্বশুর আব্দুল মান্নান মিস্ত্রী রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চামেলীকে নলতা আহছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসাপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন। চামেলীর সিজারের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থাপক শামীম হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ এবাদুল ইসলামকে নয় হাজার টাকা দেওয়া হয়।
ফজলুল হক আকাশ আরও জানান, রোববার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে দিকে চামেলীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একজন নার্স এনেসথেসিয়া হিসেবে ইনজেকশান দিলে চামেলীর শরীরে উচ্চ রক্ত চাপ দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট কোষাধ্যক্ষ এবাদুল হক বিষয়টি ডাঃ আকছেদুর রহমানকে জানালে তিনি একটি ইনজেকশন দিয়ে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পরামর্শ দেন।
সে অনুযায়ী ইনজেকশন দেওয়ার পর ডাঃ আকছেদুর রহমান অপারেশন থিয়েটারে আসেন। এসময় ডাক্তার অপরেশন থিয়েটারে যেয়ে চামেলীর নিথর দেহ দেখতে পান। পরবর্তীতে চামেলীর বাবা শুইলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলী তার মেয়ের সিজার হয়েছে কিনা তা জানার জন্য বার বার চেষ্টা করলেও তাকে সঠিক ভাবে কোন কিছু জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একপর্যায়ে রাত ৮ টার দিকে ডাঃ আকছেদুর রহমান, নলতা আহছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসাপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক শামীম হোসেন নলতা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এম্বুলেন্স ডেকে অপারেশন থিয়েটার থেকে খালি গায়ে চামেলীকে এনে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন।
এ সময় চামেলীর সার্বিক অবস্থা না জেনে এম্বুলেন্সে তোলা যাবে না মর্মে স্বজনরা বাধা দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে। এসময় চামেলী মারা গেছে স্বজনরা জানতে পেরে কালিগঞ্জ থানায় খবর দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা এবাদুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিছুজ্জামান খোকনসহ কয়েকজন তাদেরকে (চামেলীর স্বজন) এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন।
একপর্যায়ে কালিগঞ্জ হাসপাতাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ডাঃ আকছেদুর রহমান কার্ডিয়াক হার্ট এটাকে চামেলী রোববার রাত সাতটায় মারা গেছে মর্মে মৃত্যু সনদ লিখে দেন। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বাচ্চু মৃধা এম্বুলেন্সে করে রাত ১১টার দিকে চামেলীর লাশ তার বাপের বাড়িতে রেখে আসেন। সোমবার সোয়া একটায় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চামেলীর লাশ দাফন করা হয়।
সোমবার বিকেল চারটায় ডাঃ আকছেদুর রহমানের সঙ্গে তার ০১৭১২-২১৬৯১৫ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
নলতা আহছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসাপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারের কোষাধ্যক এবাদুল হক বলেন, চামেলী তাদের নিজেদের মেয়ে তাকে হাসপাতালের ওটিতে নিয়ে যাওযার আগেই হৃদযন্ত্র ক্রিড়িয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তাকে ইনজেকশন দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন।
নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আনিছুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,চামেলীর প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল অতি মাত্রায় হাই প্রেশারে কারণে তার হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে সকল প্রকার হুমকি ধামকির কথা অস্বীকার করেন তিনি।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, এবিষয়ে থানায় লিখিত কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।