পাটকেলঘাটায় শিশুরা এখন দাদুর ঠাকুমার কাছে রেডিওর গল্প শোনে
নাতি নাতনীরা একটা সময় দাদু ঠাকুমার কাছে ভুতের গল্প বা আরব্য রজনীর গল্প শুনেত শুনতে ঘুমিয়ে যেতো । কিন্তু বর্তমান সময়ের শিশুরা ভিডিও গেম, কম্পিউটার,ল্যাপটপ বা পড়া শোনা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে দাদু ঠাকুমার পাশে বসার সময় টুকু তাদের নেই ।
আগের আরব্য রজনী গল্প তাই বাদ হয়ে যেটুকু সময় শিশুরা পায় দাদু ঠাকুমার কাছে । এ সময় সময় টুকু তারা পুরাতন দিনের সেই রেডিওর গল্প শোনে । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই রেডিওর খবর শুনেই বাঙালীরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে । একটা রেডিও একটি পড়া মহল্লার সবাই মিলে মিশে শুনত । এসব গল্প এখনকার শিশুরা অবশ্য অবাক হয়ে শোনেন ।
এক সময় দেশ-বিদেশের খবর-খবর জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও। তখন খবরের সময়ে শহর কিংবা গ্রামের লোকজন একটা নির্দিষ্ট স্থানে খবর শোনার জন্য সমবেত হত। কারণ তখনো সবার ঘরে ঘরে রেডিও’র প্রচলন ছিলনা। ফলে অনেকেই বিয়েতে উপঢৌকন হিসেবে সনি, সুজন সখি, ডেলট্রই, সন্তোষসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রেডিও (বেতার) গ্রহণ করত। এরপর অবশ্য রেডিও’র প্রচলন বৃদ্ধি পেয়ে সবার ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছিল। শহর কিংবা গ্রামের মানুষকে দল বেঁধে জড়ো হয়ে খবর শুনতে হতো না। কারণ প্রত্যেকেই তখন নিজ নিজ রেডিও টুইনিং করে খবর শুনতেন। সে সময়ে তরুণ সমাজের কাছে রেডিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তারা রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীত, গানের ডালি, দূর্বার, সুখী সংসার, দর্পণ, ছায়া ছবির গান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, রকমারি অনুষ্ঠান মালা নিয়ে অনুরোধের আসর, নাটক, শোনায় অভ্যস্ত হওয়ায় রেডিও’র প্রচলন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে সেই জনপ্রিয়তা তরুণ প্রজন্ম বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। সময়ের বিবর্তনে তারা রেডিও ছেড়ে টেপ রেকর্ডার (ক্যাসেট) এর দিকে ঝুঁকে পড়ে। পরবর্তীতে সেটিরও বিলুপ্তি ঘটিয়ে মোবাইল তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
বর্তমানে মোবাইলের কারণে রেডিও’র অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। এখন আর তরুণ-তরুণীরা আগের মত রেডিও শোনেন না। এখনো কিছু প্রবীণ ব্যক্তি আছেন যারা রেডিও বিবিসি’র খবরের উপর নির্ভরশীল। পাটকেলঘাটার শহিদুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার থেকে সরাসরি সম্প্রচার কৃত খবর শোনার একমাত্র মাধ্যমই ছিল রেডিও। যে খবর শুনে লক্ষ বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উজ্জীবিত হয়েছিল। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক আঠারো মিনিটের ভাষণ সরাসরি রেডিওতে শুনে লাখো বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।
বড়বিলা গ্রামের ইনছাপ আলী গাজী বলেন, পাটকেলঘাটার আবেদ আলী মোড়ল জানান,বর্তমানে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আবিষ্কারের ফলে অতি সহজেই মোবাইলে এফ.এম-এর মাধ্যমে আমরা রেডিও অনুষ্ঠান গুলো শুনতে পাই। ফলে নতুন করে আর রেডিও (বেতার যন্ত্র) ক্রয় করে খবর শোনার প্রয়োজন পড়েনা। ফলে দিন দিন আমাদের সেই ঐতিহ্যবাহী রেডিও (বেতার যন্ত্র), যার বৈজ্ঞানিক নাম টেনডেষ্টার হারিয়ে যেতে বসেছে।
এলাকার বিশিষ্টজনদের ধারনা মতে, রেডিও’র গুরুত্ব এখনো কমে যায়নি। যাদের কাছে এটির গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন তাদের কাছে এখনো এর যথাযথ গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই স্বাধীন বাংলার প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা রেডিও’র মাধ্যমেই শুনেছি। তাই আসুন আমরা সবাই আমাদের হারিয়ে যাওয়া এই রেডিওটির গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনি।