মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রাণ:স্বাধীনতা আমাদের হৃৎস্পন্দন

প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতা নিয়ে বাঙ্গালি জাতি আজও গর্বিত। বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন শাশ্বত হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতি এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা প্রতিটি বাঙ্গালি সন্তানের। তারপরও মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনের কথা বলে যারা মহান স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা এবং এখনও যারা পাকিস্তান প্রীতি দুর করতে পারেনি তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহিদ সম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন জাতিকে যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ উপহার দিয়েছেন তাদের ঋণ শোধ হবার নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ডাকে অর্জিত স্বাধীনতা নিয়ে আরও গবেষণালব্ধ তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরাই হবে আমাদের দায়িত্ব।

বক্তারা ৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে বাঙ্গালি জাতির ওপর পাক হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র হামলার নৃশংসতার রোমহর্ষক বিবরণ দিয়ে বলেন তারা এই রাত থেকে গণহত্যায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল। পাকি বাহিনী যতো অত্যাচার করতে থাকে বাঙ্গালির স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আরও বেগবান হয়ে ওঠে।

সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন ।

তারা আরও বলেন মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রাণ আর স্বাধীনতা আমাদের হৃৎস্পন্দন। এই দুইকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে দিতে গিয়ে ৩০ লাখ বাঙ্গালি তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। অগণিত মা ও বোনেরা তাদের সর্বোচ্চ সম্মান জলাঞ্জলি দিয়েছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব উল্লেখ করে বক্তারা বলেন সাতক্ষীরার মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে। এই জেলা ও এর আশপাশে সংঘটিত গণহত্যার স্থানগুলি চিহ্নিত করে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করতে হবে। ইতিহাসের অতল তলে যেয়ে বীরাঙ্গনাদের আরও সম্মানিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে এই জেলার অবদান জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব এই দায়িত্ব নিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন মুক্তিযুদ্ধ না করেও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে অনেকেই রাষ্ট্রীয় সুবিধা গ্রহণ করছেন। তালিকা যাচাই বাছাইয়ের প্রশ্ন আসলেই তা হয়ে পড়ে দলীয়করণ। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়ও পরিবর্তন আসে উল্লেখ করে তারা বলেন দেশে গণতন্ত্রকে আরও শাণিত করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটন করে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালি হিসাবে গর্বিত হতে হবে। বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, সাবেক সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক আবদুল জলিল, নির্বাহী সদস্য সেলিম রেজা মুকুল, ৭১ টিভির বরুণ ব্যানার্জী, দৈনিক যুগের বার্তার আমিনুর রশীদ, দৈনিক কল্যাণের কাজী শওকত হোসেন ময়না, আমাদের অর্থনীতির শেখ ফরিদ আহমেদ ময়না, অ্যাড. শফিউল ইসলাম খান প্রমুখ।

এদিকে সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আবু সাঈদ, প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাধারণ সদস্যরাও। ২৫ মার্চ রাত ৯ টায় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব চত্বরে এক মিনিট নিষ্প্রদীপ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)