অ্যাডলফ হিটলারের অনুপ্রেরণা ছিলেন হেনরি ফোর্ড

বিশ্বখ্যাত ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হেনরি ফোর্ড। পৃথিবীর ইতিহাসে যে’কজন শিল্পপতি তাদের ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় অমর হয়ে আছেন, হেনরি ফোর্ডের অবস্থান সে তালিকায় বেশ উপরের দিকেই থাকবে। হেনরি ফোর্ড সম্পর্কে অনেকেই ভুল করে বলে থাকেন, তিনি ছিলেন অটোমোবাইলের প্রতিষ্ঠাতা। এ তথ্যটি সত্য নয়। তবে তিনি মধ্যবিত্ত মার্কিনদের সাধ্যের মধ্যে অটোমোবাইলকে নিয়ে এসেছিলেন। মডেল ‘টি’ অটোমোবাইল আবিষ্কারের মাধ্যমে হেনরি ফোর্ড ও তার কোম্পানি বিখ্যাত হয়ে আছে, যেটি সত্যিকার অর্থেই মার্কিন শিল্প ও যাতায়ত ব্যবস্থায় বিপ্লব নিয়ে আসে। অ্যাডলফ হিটলার তো একবার জনসমক্ষেই হেনরি ফোর্ডকে তার অনুপ্রেরণা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ইতিহাসখ্যাত এ উদ্যোক্তা সম্পর্কে আরা কিছু অজানা তথ্য থাকছে আজ-

১. হেনরি ফোর্ডকে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ধনী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তার প্রতিষ্ঠিত দ্য ফোর্ড মোটর কোম্পানি।

২. হেনরি ফোর্ডকে ‘ম্যাস প্রোডাকশন’ বা গণ উৎপাদনের উদ্ভাবক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি এই ধারণার প্রয়োগ করেন তার মোটর কোম্পানিতে, যা রাতারাতিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অটোমোবাইলের উৎপাদন খরচ ও ক্রয় মূল্য কমিয়ে দেয়।

৩. কিশোর বয়সে ফোর্ড তার বাবার কাছ থেকে একটি পকেট ঘড়ি উপহার পান। ঘড়িটিকে বার বার খোলা ও আবার ঘড়ির ভেতরের সব উপাদান একত্রে জোড়া দেয়াটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। যে কারণে পরবর্তীতে তিনি বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে যত ঘড়ি উপহার পান, সেগুলোকে নিয়েও তিনি একই কাজ করতে থাকেন। এভাবে ঘড়ি মেরামত করাটা এক সময় তার শখ হয়ে দাঁড়ায়।

৪. ফোর্ডের বাবা ছিলেন একজন কৃষক। বাবার পেশা কৃষিকাজ মোটেও ভালো লাগত না তার, তবুও পরিবারের সাহায্যের জন্য ২৫ বছর বয়সে তিনি কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করেন।

৫. ১৮৭৮ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিজ হাতে নিজের স্টিম ইঞ্জিন তৈরি করেন হেনরি ফোর্ড।

৬. ১৮৯১ সালে হেনরি ফোর্ড এডিসন ইল্যুমিনেটিং কোম্পানিতে যোগদান করেন, দু’বছর পরেই সেখানকার প্রধান প্রকৌশলী পদে উন্নীত হন। যার ফলে এডিসন বেশ আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেন এবং তার পরিকল্পিত গ্যাসোলিন ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু করে দেন।

৭. তখনকার দিনে দ্রুত গতির যানবাহন মানেই ছিল ঘোড়ায় টানা গাড়ি। ১৮৯৬ সালে ফোর্ড সর্বপ্রথম তার ঘোড়াবিহীন বাহন তৈরি করেন, তিনি এর নাম দেন ‘কোয়াড্রিসাইকেল’।  দ্বিতীয় গাড়িটি আরো ভালোভাবে বানানোর উদ্দেশ্যে তিনি প্রথম কোয়াড্রিসাইকেলটি বিক্রি করে দেন।

৮. গাড়ি তৈরির অনুপ্রেরণা মূলত ফোরড পান থমাস আলভা এডিসনের কাছ থেকে। ১৮৯৬ সালে এডিসন এক সাক্ষাতে ফোর্ডকে তার অটোমোবাইল এক্সপেরিমেন্টগুলোর জন্য অভিনন্দন জানান।

৯. ১৯০৩ সালে সাধারণ মানুষদের কাছ দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে ফোর্ড মোটর কোম্পানিকে ইনকর্পোরেটে রূপ দেয়া হয়, যার মূল্য ছিল মাত্র ২৮ হাজার ডলারের মতো। যদিও লাইসেন্স না থাকার অভিযোগে পরবর্তীতে ইনকর্পোরেটের ব্যবসা বাতিল করা হয়। এ ব্যাপারটি নিয়ে আদালতে গিয়েও প্রথমে সুবিধা করতে পারেননি হেনরি ফোর্ড। কিন্তু ১৯১১ সালে প্রথমবার আপীল করে তিনি মামলায় জিততে সক্ষম হন। এ জয় মার্কিন শিল্পের ইতিহাসে  ও হেনরি ফোর্ডের জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত।

১০. ফোর্ড কোম্পানির প্রথম গাড়িটির মডেল নাম দেয়া হয়েছিলো ‘মডেল এ’ । দ্বিতীয় মডেলটি ছিল ‘মডেল এন’, যার একটি গাড়ির মূল্য ছিল ৬০০ ডলার। তখন থেকেই ফোর্ড স্বপ্ন দেখতে থাকেন কিভাবে আরো সস্তায় সাধারণের সাধ্যের উপযোগী করে গাড়ি প্রস্তুত করা যায়। এর ফলশ্রুতিতে তিনি ‘মডেল টি’ মডেলের গাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৯০৮ সালে যখন মডেলটি বাজারে আসে, তখন তার দাম ছিল ৯৫০ ডলার। কিন্তু ফোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯২৭ সালে মডেলটি এর দাম ২৯০ ডলারে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।

১১. জার্মান উদ্ভাবক কার্ল বেঞ্জকে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির উদ্ভাবকের মর্যাদা দেয়া হয়। যদিও অটোমোবাইল আবিষ্কারের কৃতিত্ব মাত্র একজনকে দেয়া সমীচীন হবেনা। বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দা ভিঞ্চি সেই ১৫ শতাব্দীতেই স্বয়ংক্রিয় গাড়ির ডিজাইন করেছিলেন, অন্যদিকে, হেনরি ফোর্ড অটোমোবাইলকে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে এনে দেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)