দেবহাটার ম্যানগ্রোভের পাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
দর্শনার্থী ও পর্যটকদের পদচারনায় প্রাণবন্ত সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের গাঁ ঘেঁষে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এতে করে নদী ভাঙন সহ হুমকির মুখে পড়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্বাবধায়নে নির্মিত ও পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ আবারো ইছামতীর ভাঙনের কবলে পড়ে পর্যটন কেন্দ্রটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকাও করছে উপজেলাবাসী।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে বেশ কয়েকটি সারিবদ্ধ ট্রলারকে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটির গাঁ ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায় ।
এসময় বালু উত্তোলনকারীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,উপজেলার শুশীলগাতি এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল ফজলের ছেলে আব্দুল্যাহ এবং দেবহাটার মৃত কালু গাজীর ছেলে আব্দুর রহিমের নির্দেশে প্রতিদিনই ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত ইছামতি নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন তারা। তবে তাদের কাছে ওই স্থান থেকে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তারা কোন বালু উত্তোলনের অনুমতি দেখাতে পারেননি।
দেবহাটার ঐতিহ্যবাহী রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি ইতোমধ্যেই জেলার গণ্ডি পেরিয়ে পরিচিতি লাভ করেছে বাইরের জেলাগুলোতেও।
মাত্র কয়েক বছরেই গড়ে ওঠা বনটি নদী ভাঙন রোধ করে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার সাথে সাথে মানুষের বিনোদনের খোরাকও জুগিয়ে আসছে। বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণী ইছামতি নদীর ভাঙন রোধকল্পের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম তরিকুল ইসলামের উদ্যোগে শিবনগর এলাকায় ইছামতির তীর ঘেঁষে লবণাক্তটা সহনশীল বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ,বনজ ও ঔষধি গাছের সারিবদ্ধ কয়েক হাজার চারা রোপণের মাধ্যমে ৩১.৪৬ একর জমিতে সুন্দরবনের আদলে সৃষ্টি করা হয় রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি।
স্থানটিকে মানুষের চিত্ত বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা রূপসী ম্যানেগ্রাভ পর্যটন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরার তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। পরে বিনোদন কেন্দ্রটির উন্নয়ন পরিকল্পনায় রোপণ করা হয় আরও বেশ কিছু প্রজাতির গাছের চারা, নির্মাণ করা হয় মূল প্রবেশের গেট,পর্যটকদের ভ্রমণের টেইল, আধুনিকায়ন করা হয় লেক ও রেস্ট হাউজ। শিশুদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয় দোলনা,স্লিপিং টেইল ও বিভিন্ন প্রকারের কৃত্রিম জীবজন্তু। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে উপজেলা সদর থেকে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পিচের কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ।
বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভ্রমণ পিয়াসু পর্যটকদের পদচারনায় রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি মুখরিত থাকলেও স্থানীয় আব্দুল্যাহ ও আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে এসব সুবিধাবাদীদের চক্রটি প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে ট্রলারে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করে পর্যটন কেন্দ্রটি হুমকির মুখে ফেলছে। এভাবে অবৈধভাবে চলমান বালু উত্তোলন অবিলম্বে বন্ধ সহ হুমকির মুখ থেকে রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি রক্ষায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ এবং পর্যটন কেন্দ্রটি বিলীন হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আগামীতে দেবহাটার ইছামতি নদীতে কাউকেই বালু উত্তোলনের অনুমতি না দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী সহ পর্যটন কেন্দ্রটিতে আসা ভ্রমণ পিয়াসু দর্শনার্থীরা।
রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটির গাঁ ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে দেবতাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্রটির সীমানা জুড়ে আশেপাশের এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কোন অনুমতি প্রশাসন দেয়নি। যারা প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি হুমকির মুখে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।