স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আরও যেসব নেতা
ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতার পর রাজনৈতিক নেতাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের অধিকাংশই সত্তরোর্ধ্ব। যাদের প্রত্যেকেই নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এক রকম উদাসীন বলেই অভিযোগ তাদের পরিবারের সদস্যদের। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও হৃদরোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা তার বাইপাস সার্জারির জন্য একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানেও ডাক্তাররা তার সার্জারির পরামর্শ দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক ব্যস্ততা ও নানা কারণে এখনও অপারেশন করাননি। মোটামুটি সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুলের আর্থিক অসঙ্গতিও তার অপারেশন না হওয়ার একটি বড় কারণ বলে তার ঘনিষ্টরা জানিয়েছে। নির্বাচনের আগে সংলাপের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন এবং সহযোগিতার পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক দূরত্বের কারণে ফখরুল আর যোগাযোগ করেননি।
ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আমির হোসেন আমু হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বেশ কিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। যদিও তিনি নিয়মিত চিকিৎসা করান। আওয়ামী লীগের আরেক বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদও সত্তোরর্ধ্ব। তবে তিনি শারীরিকভাবে তেমন একটা অসুস্থ নন। তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। তার একমাত্র মেয়ে ও কন্যার জামাই ডাক্তার হওয়ায় তিনি তাদের অবাধ্য হতে পারেন না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখনও তিনি নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তিনিও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন যদিও তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা মতিয়া চৌধুরী ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। আওয়ামী লীগের ফুফু খ্যাত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত একাধিক সমস্যায় ভুগছেন। তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে একরকম নিজেকে দূরেই রেখেছেন।
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তিনি নিয়মিত দেশের বাইরে চিকিৎসা করান। তার শরীরে পানি জমা সহ বেশ কিছু সমস্যায় তিনি ভুগছেন। যদিও রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে তার চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ছাড়াও অসুস্থ নেতাদের সংখ্যা কম নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকে রাজনৈতিকসহ সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রয়েছেন। তিনি শারীরিকভাবে বেশ ঝুঁকিতে আছেন। তিনি পারিবারিক চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে সীমিত চলাচলের একটি জীবনযাপন করছেন। বিএনপির আরেক নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদেরও হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রকম সমস্যা রয়েছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট যত্নশীল। বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনও নানারকম অসুস্থতায় আক্রান্ত। তিনিও চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে তিনি এখন নিয়মিত বিদেশ যেতে পারেননা। তার পারিবারিক সূত্র বলছে তিনিও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছেন।
এছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি নানারকম জটিলতায় ভোগেন। কিছুদিন আগে তিনি তার পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন এবং বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিলেন। জাসদের হাসানুল হক ইনুও গত জানুয়ারি মাসে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
বাংলাদেশে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে যে জেনারেশন, বঙ্গবন্ধুর পরের প্রজন্ম তাদের সবাই সত্তোরর্ধ্ব। তাদের প্রত্যেকেই নানা রকম রোগ-শোকে আক্রান্ত। ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতার এই ঘটনা দেশের প্রবীণ রাজনীতিকদের জন্য একটা বাণী বয়ে নিয়ে আসলো, সেটা হলো শরীরের যত্নে নেয়া। আমাদের যারা জাতীয় নেতৃবৃন্দ আছেন তারা দেশের সম্পদ। রাজনৈতিক শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন রাজনৈতিক নানা ব্য স্ততার মধ্যেও তাদের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব হলো নিজেদের শরীর ঠিক রাখা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অবদান অনেক বেশি। এদের হাত ধরেই বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটেছে। গণতন্ত্র এসেছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, দেশকে দেয়ার তাদের এখনও অনেক কিছু আছে। কাজেই তারা যদি সুস্থ থাকেন গণতান্ত্রিক ধারা উৎকর্ষ লাভ করবে এবং আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আরও উন্নত হবে।