Post Views:
৫৬
মসিউর ফিরোজ:
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত। এ জেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় বেড়িবাঁধ মেরামত, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নদী—খাল পুনঃখননের মতো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বর্তমানে দুটি ডিভিশনের মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে, পাশাপাশি ই—ভ্যালুয়েশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প। উল্লেখযোগ্যভাবে, এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন—২।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে অর্থবছরে ২/৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। যে অভিজ্ঞতা সাতক্ষীরার জন্য খুবই নগন্ন। তাবাদে শাখাওয়াত পূর্ণ নির্বাহী প্রকৌশলীও হয়নি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পানি ভবনের আরিফুজ্জামান খান (মানবসম্পদ বিভাগ) এর সহযোগিতায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার চলমান প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়ে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করে।
বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, শাখাওয়াতকে অনেক বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতেই সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়েছে। তবে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়—একজন নতুন কর্মকর্তা, যিনি ছোট এলাকার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাকে সরাসরি একটি বৃহৎ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এটি তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হবে।
তবে সাতক্ষীরার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের জন্য আরও অভিজ্ঞ ও গতিশীল কর্মকর্তা নির্বাচন করা উচিত ছিল বলে অনেকে মনে করছেন। এ বিষয়ে বোর্ড কোনো মন্তব্য না করলেও, তার কর্মদক্ষতা ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চলছে।
সাতক্ষীরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলে কীভাবে একজন অযোগ্য ও অপরিপক্ব নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হলো? বোর্ডের কর্মকর্তাদের আসল উদ্দেশ্য কী—এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও উপকূলের জনগণ।
সূত্রমতে, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই প্রকৌশলী নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রকল্পের প্রতিটি ঠিকাদারকে তার ব্যক্তিগত শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেন এবং সেখানে প্রটেকটিভ ওয়ার্কে ২—৩% এবং মাটির কাজে ৫—৭% কমিশন দেওয়ার শর্তে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। যারা তার এই অনৈতিক শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করা, নানা তালবাহানা করা, হয়রানি করা ও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, কিছু ঠিকাদারের মোবাইল নাম্বর পর্যন্ত ব্লক করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় জনগণ ও উপকূলবাসী এই অর্থলোভী, স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর দ্রুত অপসারণ দাবি করেছেন। তারা সাতক্ষীরার উন্নয়ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শাখাওয়াত হোসেনের আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ঠিকাদাররা চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে ভরা মৌসুমে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন—২—এর অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ অচল হয়ে পড়েছে। যে কয়েকটি কাজ এখনো চলছে, সেগুলোও অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেতনা নদী খনন প্রকল্পও তার অব্যবস্থাপনার কারণে বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় প্রতি বছর প্রায় পাঁচ মাস জলাবদ্ধতা ও বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করে। এতে শত শত কোটি টাকার মাছ ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এমন সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতেও কিভাবে নদী ও খাল খননের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ থাকে? এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বন্ধ—জেলাবাসীর জন্য অশনিসঙ্কেত
অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন—২—এর আওতায় ২.৬.৮ পোল্ডারের ৬টি প্যাকেজের চলমান কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর প্যাকেজের মেয়াদ জুন মাসে শেষ হবে। তবে কাজ বন্ধ থাকায় এই প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না, যা সাতক্ষীরা জেলার জন্য একটি বড় সংকেত।
এছাড়া উপকূলীয় এলাকার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জোনের ১৪/১, ৭/১, ৭/২, ৪ ও ১৩/১৪.২ পোল্ডারের কাজও কচ্ছপের গতিতে চলছে। এতে উপকূলের সাধারণ মানুষ দীর্ঘমেয়াদী দুর্ভোগের আশঙ্কায় রয়েছে।
এর আগে, জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে আধা নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শাখাওয়াত হোসেন বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩—২৪ অর্থবছরে ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রকল্পে (এনডিআর) ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল, যা চার—পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় পরিচালিত হওয়ার কথা। তবে সে সময় জয়পুরহাট—২ আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ছত্রছায়ায় প্রকল্পের কোনো কাজ বাস্তবায়ন না করেই পুরো বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সূত্রে জানা গেছে, শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার বিরুদ্ধে অফিসের পরিবেশকে জিম্মি করে স্বেচ্ছাচারিতা চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
সূত্র জানায়, আগের দফায় তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অফিসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন এবং ঠিকাদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নানা অনিয়মমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর তিনি আবার সক্রিয় হন। পরে বোর্ডের পানি ভবনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সহায়তায় সাতক্ষীরাকে নিজের “নিরাপদ আশ্রয়স্থল” হিসেবে বেছে নেন।
যদিও সময়ের পরিবর্তনে প্রশাসনিক কাঠামোতে অনেক কিছু বদলেছে, তবে শাখাওয়াত হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রবণতা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি যথারীতি অফিসকে জিম্মি করে ঠিকাদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন এবং আগের মতোই অর্থ লুটপাটের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা ও এলাকাবাসী।
ঠিকাদারদের সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় কাজ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নেই। ফান্ডের সংকট তো আছেই, তার উপর যখন ফান্ড আসে, তখন কাজের অগ্রগতি চার ভাগের এক ভাগও বিল দেয়া হচ্ছে না। বিল পেতে কেবল তাদেরই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যারা শাখাওয়াত হোসেনের দাবিকৃত অর্থ দিতে রাজি। এক ঠিকাদার মন্তব্য করেছেন, “ভাই, এক ছাগল কয়বার জবাহ করা যায়? এর বেশি কিছু বলবো না। আশা করি, আপনি বুঝতে পারছেন। দিন শেষে আমাদের তো কাজ বুঝে দেওয়া লাগবে।”
আলোচ্য বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশান ২’র নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন,আপনারা যা পারেন করেন। আমার যা ভাল লাগবে আমি তাই করবো।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, দাম্ভিক আচরন ভাল কিছু বয়ে আনেনা। আর অভিযোগ গুলো আমি শুনেছি এবং তাকে বলেছি তুমি যে কাজ করেছো সেটা ঠিক হয়নি। ঝুকিপূর্ণ উপকুলীয় অঞ্চলে অনভিজ্ঞ প্রকৌশলী প্রসঙ্গে তিনি বলেন,বোর্ড যদি দেয় আমি কি করতে পারি বলেন।
আলোচ্য বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছি।দ্রুত সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
Please follow and like us:
20