শ্যামনগরের কথিত পীর মিজান ও তার জামাতা গ্রেফতার

রঘুনাথ খাঁঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আলোচিত কথিত ‘পীর’ মোঃ মিজানুর রহমান ও তার জামাতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মঙ্গলবার সকালে তাকে নিজ আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার সহযোগী ও জামাতা মোঃ আবু নাইমকেও গ্রেপ্তার করা হয়।এর আগে প্রতারণাসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ এনে শ্যামনগরের শংকরকাঠি গ্রামের সিদ্দিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মিজানুর রহমান শ্যামনগর উপজেলার ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট অন্তাখালী গ্রামের মৃত দীনদার গাজীর ছেলে। আবু নাইম শরীয়তপুরের সখিপুর থানার মোল্যাবাজার গ্রামের নুরুল হুদার ছেলে।নিজেকে আল্লাহ পাকের কুতুব ও ওলি দাবি করে মানুষের অন্তঃচক্ষু খুলে দেয়ার নামে অসংখ্য মানুষের থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।মিজানকে ‘ভন্ড’ আখ্যায়িত করে গত শুক্রবার তার আস্তানা গুড়িয়ে দিতে কয়েকশ মানুষ আস্তানা অভিমুখে পদযাত্রা করেছিল। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবহিনী সদস্যরা পথিমধ্যে উত্তেজিত জনতাকে আটকে দিলে সে যাত্রায় তার আস্তানা ভাংচুর থেকে রক্ষা পায়। এসময় উপজেলা বাতিল প্রতিরোধ কমিটি ও উপজেলা ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ মিজানকে আইনের আওতায় আনতে তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।মামলার বাদি সিদ্দিকুল ইসলাম জানান মিজানের নির্দেশনায় তার জামাতা আবু নাইম শরীয়তের মানদন্ডে ওলীগণের হালত নামীয় একটি বই প্রকাশ করে। উক্ত বাইয়ের বিভিন্ন অংশে আল্লাহ পাক ও তার রাসুল (সঃ) এর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান গত ২০১৬ সালে প্রকাশিত উক্ত বইয়ে দাবি করা হয়েছে আল্লাহ পাকের সাথে মানুষের কথা হয়, বান্দার ইচ্ছায় আল্লাহ পাক অনেক সময় নিজের হুকুম পরিবর্তন করেন- এ নানান শিরকমুলক উক্তি।তিনি আরও অভিযোগ করেন নিজেকে ক্রস ফায়ারের আসামী দাবি করে মিজান আরও অনেকের মত তার নিকট থেকে তিন লাখ টাকা ধার নেন। পরবর্তীতে টাকা চাইলে ‘মাওলা দিচ্ছে না’ জানিয়ে টালবাহানা শুরু করে পরবর্তীতে তাড়িয়ে দিয়েছিল।এদিকে মিজান একজন প্রতারক দাবি করে তাকে আইনের আওতায় নেয়ার আহবান জানিয়ে সোমবার দুপুরের দিকে শ্যামনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন হয়। মিজানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন দাবি করে চাঁদপুর জেলার মহামায়াবাজারের বেলায়েত হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন, শরিয়তপুরের সখিপুর থানার মাঝিকান্দি গ্রামের মৃত বশির আহম্মেদের ছেলে জাফর আহম্মদ ও ঢাকা পল্লবীর রুপনগর টিনসেড এলাকার মৃত আব্দুল হান্নানের ছেলে আব্দুল হালিম উক্ত সংবাদ সম্মেলন করেন।তারা নিজেদের ভুক্তোভোগী দাবি করে জানান আল্লাহ পাকের ওলি বানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘ সাত বছর তার আস্তানায় থাকতে বাধ্য করে। এসময় অন্তঃচক্ষু খুলে দেয়াসহ আল্লাহ পাকের দিদার লাভের কথা বলে তাদের সাথে প্রতারনা করা হয়। নানা অজুহাতে মানুষেরে থকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে ‘মাওলা’ তাকে দিয়েছে দাবি করার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাকের সাথে তার নিয়মিত কথা হয় বলেও মিজান দাবি করেছিল। নিজের ছেলে ইউসুফকে রাসুলের জামাতা দাবি করার পাশাপাশি তিনি আজগুবি বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন বলেও উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

এবিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবীর মোল্যা জানান সিদ্দিকুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলার আসামী হিসেবে মিজানুর রহমান ও আবু নাইমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবু নাইমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘শরীয়তের মানদন্ডে ওলীগণের হালত’ নামীয় বইয়ের মাধ্যমে মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এদিকে ‘ভন্ড’ পীর মিজানকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্যামনগরে আনন্দ মিছিল করেছে করেছে সাধারণ মানুষ। মুসলমান সম্প্রদায়ের দাবি মেনে তাৎক্ষণিক আইনগত পদক্ষেপ নেয়ায় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা। আনন্দ মিছিলে তার আস্তানার পাশর্^বর্তী এলাকার মানুষসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ ও আলেম ও লামারা অংশ নেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)