পদত্যাগ করছেন নাহিদ!
ডেস্ক রিপোর্ট:আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ হতে পারে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের। শোনা যাচ্ছে নতুন এই দলের নেতৃত্ব দিবেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আর এজন্য তিনি পদত্যাগ করবেন উপদেষ্টা পদ থেকে।সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন, এই সপ্তাতেই নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ করার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সরকারে শেষ কর্মদিবস হতে যাচ্ছে তার।সূত্রটি জানায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। সেটিকে সামনে রেখে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তার শেষ কর্মদিবস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর আগে বুধবার প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। কোনো কারণে দল ঘোষণা পিছিয়ে গেলে সেক্ষেত্রে পদত্যাগের সময়ও পেছাবে।মন্ত্রণালয় ছেড়ে নাহিদ ইসলাম জনতার কাতারে নেমে এসে শিগগির নতুন দলের দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলাম, যিনি এই অভ্যুত্থানের ঘোষক, তাকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যেন পুরো বাংলাদেশকে আবার আমরা সামনের সারিতে থেকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। সেজন্য নাহিদ ইসলাম যেন ওই ক্ষমতার মন্ত্রণালয় ছেড়ে আবারও জনতার কাতারে এসে দাঁড়ান। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।নাহিদ ইসলাম নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হবেন, তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। তবে সদস্য সচিব পদ ঘিরে আলোচনা এখনো চলছে। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সংগঠন সূত্রে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পদে আখতার হোসেনের থাকার সম্ভাবনাই বেশি। নেতারা বলছেন, সদস্য সচিব পদ নিয়ে আলোচনা থাকলেও নাহিদ-আখতারই এগিয়ে আছেন নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে।সদস্য সচিব পদে আরও আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের একটি অংশ আখতার হোসেনকে মাইনাসের চিন্তা করলেও বেশিরভাগ মতই তার পক্ষে। বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করা আখতারের পক্ষেই থাকছেন অধিকাংশ নেতা। তাই প্রাথমিকভাবে আখতার হোসেনকেই সদস্য সচিব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।এর আগে গত শনিবার থেকে সদস্য সচিব পদ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়ান নাগরিক কমিটির নেতারা। শঙ্কা দেখা দেয় ঘোষণার আগে দল ভাঙনের। বিশেষ করে সদস্য সচিব পদ নিয়ে তিন ভাগে ভাগ হয়ে যান নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন আন্দোলনে জড়িত থাকা নাগরিক কমিটির সদস্যরা আখতারকে সমর্থন করেন। অন্যদিকে, নাগরিক কমিটির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী উপদেষ্টা মাহফুজ আলম চান নাসীরুদ্দীন নতুন দলের সদস্য সচিব হোক। এ ছাড়া সাবেক শিবির কর্মীরা ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আলী আহসান জুনায়েদকে নতুন দলের সদস্য সচিব পদে আনার চেষ্টা করছেন।বিষয়টি নিয়ে নিজেদের ভেতরে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করতে দেখা যায় নেতাদের। নাগরিক কমিটির নেতারা ছাড়াও এতে অংশ নেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও। সদস্য সচিব পদে সমাধান না এলে আলাদা দল গঠনেরও হুমকি আসে এক পক্ষ থেকে। এমন অবস্থার মধ্যেই সর্বশেষ রোববার বৈঠকে বসেন সংগঠন দুটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল সোমবারও নিজেদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন নেতারা।নতুন দলের ঘোষণার স্থান হিসেবে শহীদ মিনারকেই বেছে নিয়েছেন নাগরিক কমিটির নেতারা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একদফা ঘোষণা হয়েছিল এই শহীদ মিনার থেকেই। এরপর রাষ্ট্র বিনির্মাণে ৫ দফাও ঘোষণা করা হয় এই স্থান থেকে। ফলে নতুন দল আত্মপ্রকাশের জন্য এই স্থানকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। যদিও বিকল্প হিসেবে জাতীয় সংসদের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউও আলোচনায় রয়েছে।আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ ছাত্র-তরদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সপ্তাহ কর্মসূচি বিষয়ক জনমত জরিপ ممم আপনার @ปสตวง চোখেনতুন বাংলাদে’এদিকে, জনমত জরিপে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অনলাইন এবং অফলাইনে দেশের প্রায় ৩ লাখ মানুষ নিজেদের মতামত দিয়েছেন। অনলাইনের এই জরিপের পাশাপাশি সব জেলায়-উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। জরিপে সাধারণ মানুষের ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছেন ছাত্রনেতারা।তরুণ-ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবে সুশীলসমাজ, ব্যবসায়ী, সরকারের সাবেক আমলাসহ অনেকে। এরই মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করছেন তারা। তবে কাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে—এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে।রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া ও পদত্যাগ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম, মূলত ছাত্ররাই এটার নেতৃত্বে ছিল। ছাত্র এবং গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা বা আলোচনা রয়েছে। সেই দলে যদি অংশগ্রহণ করতে হয়, তবে অবশ্যই সরকারে থেকে সেটা সম্ভব না। সেই দলে যদি আমি যেতে চাই, তবে সরকার থেকে আমি পদত্যাগ করব।’