পেশায় শিক্ষক হলেও বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনে ছাদ বাগান করে সফল খালেদা

শাহরিয়ার কবির:
করোনা মহামারীতে সারা বিশ্বে যখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করে ঠিক সে সময় বাড়ি বসে না থেকে ছাদ বাগান শুরু করে খুলনার পাইকগাছার প্রধান শিক্ষক খালেদা খাতুন। তিনি তার নিজ বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে বিভিন্ন প্রকারের ফল,ঔষধী, সবজি ও ফুলের চাষ করেন। তার ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।এমনকি অনেকে তার এই ছাদ বাগান দেখে তারাও ছাদ বাগান শুরু করে।পেশায় তিনি একজন শিক্ষক। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ২৬ নং মানিকতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। স্বামী এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি হিসাবে দৈনিক যায়যায় দিন, daily observer ও দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকায় কর্মরত রয়েছেন।

খালেদা খাতুন পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বাগান করার প্রতি তার আগ্রহ ছোট বেলা থেকেই। ছোট বেলায় বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই তিনি বিভিন্ন ধরণের গাছের চারা রোপন করতেন। ছোট বেলার শখকে তিনি একটি মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

গত ১৯৯৭ সালের ২৯ জুন থেকে অদ্যবধি পৌর সদরের বান্দিকাটি গ্রামে খালেদা খাতুন তার পরিবারকে নিয়ে এক সঙ্গে জীবনযাপন শুরু করেন। বসবাসের শুরু থেকেই নিজ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা আশপাশ তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে দু একটা গাছা লাগিয়ে বাগান করা শুরু করেন। কিন্তু মহামারী করোনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে লক ডাউন দিলে তখন স্কুল কলেজ সহ বিভিন্ন অফিস আদালত সীমিত পরিসরে চলে সে সময় কমলমতি বাচ্চাদের জীবনের কথা ভেবে সরকার স্কুল কলেজ ছুটি ঘোষণা করে। তখন শিক্ষক খালেদা খাতুন বসতবাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে ছোট-বড় প্লাস্টিক ও মাটির টবে কমলা, মাল্টা, আপেল, কদবেল, বেদানা, লিচু, আমলকি, সিডলেস কাগুজী লেবু ও চায়না কাগুজী লেবু, ড্রাগন, আপেল,আজোয়া সৌদি খেজুর,বারোমাসি আমড়া,বল সুন্দরী কুল,চায়না পেয়ারা সহ বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ, কোথাও লাগিয়েছেন পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন,করেল্লা, শসা, কাকুড়, ঢেঁড়স,লাল শাক,পালংশাক,মুলা,ওল কপি,লাউ,সীম,কয়েকটি প্রজাতির মরিচ সহ অনেক ধরণের সবজি, আবার কোথাও লাগিয়েছেন দোপাটি, রঙ্গন, জুঁই, হাসনাহেনা, গোলাপ, জবা, গাঁধা, রজনীগন্ধা, লজ্জ্বাবতী,ক্যকটাস,বনসাই বটগাছ,নীল অপারজিতা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগান।

ছাদের কোন অংশে আবার লাগিয়েছেন পাথর কুঁচি, কালমেঘা, তুলসী, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রক গাছ সহ বিভিন্ন ধরণের ঔষধী গাছ। সবজি, ফল আর ফুলে ভরে গেছে ছাদের সমস্ত অংশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন ছাদ, নাকি সবুজ ফসলের মাঠ। সব ধরণের সবজি ও ফল কীটনাশক ব্যবহার না করেই এবং জৈবসার ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন শিক্ষক খালেদা খাতুন।উৎপাদিত সবজি ও ফল নিজের পরিবারের চাহিদা পুরণ করে অতিরিক্ত ফল ও সবজি আত্মীয় স্বজনের মাঝে বন্টন করেন বলেও তিনি জানান।শিক্ষকতা ও স্কুল, কলেজ পড়ুয়া তিন ছেলে মেয়ের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যবহার করেন।

এ ব্যাপারে শিক্ষক খালেদা খাতুন জানান, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে করোনাকালীন সময়ে আমার বিদ্যালয়ে ছুটি পড়ায় ওই সময় থেকে অনেক গাছ লাগিয়ে ছাদবাগান গড়ে তুলি। ছোট বেলা থেকেই বাগান করা আমার শখ। আমার বাড়ীর সাথে তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে বাগান করা শুরু করি। প্রতিদিন ভোর ৫টার দিকে এবং স্কুল থেকে ফিরে বিকালে এক দেড় ঘন্টা করে বাগানের পরিচর্যার কাজ করি।

গত ৩/৪ বছরের ব্যবধানে ছাদ ছেয়ে গেছে সবজি ও ফল-মূলে। আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অনেক সবজি ও ফলমূল অতিরিক্ত থেকে যায়। মাঝেমধ্যে লোকজন যখন ছাদ বাগান দেখতে আসে তখন খুব ভালো লাগে। অপরদিকে নিজেকে মনে হয় ছাদ বাগান করে আমি মনে হয় সফল হয়েছি।

ভবিষ্যতে ছাদে ড্রেনেজ সিষ্টেম ও বাড়ির সামনে বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি। খালেদা খাতুনের ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই এ ধরণের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন আবার অনেকে শুরু করেছেন বলে তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন জানিয়েছেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি খালেদা খাতুনের ন্যায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ছাদে বাগান করার মত নানন্দিক পারিবারিক কাজকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। সবাই যদি এমন ভাবে উদ্দ্যোগ নিয়ে বাড়ির আঙিনায় যেসব জায়গা ফেলে রাখা হয়েছে সে সব জাগায় গাছ লাগানো বা সবজি চাষ করে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে আবার বিক্রয় ও করতে পারবেন।এতে নিজে ও তার পরিবার সহ সমাজ উপকৃত হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)