দেবহাটার খলিষাখালি থেকে নিখোঁজ ইসরাইল গাজীর ১৭ দিনেও সন্ধান মেলেনি
রঘুনাথ খাঁ ঃ ৫০ বিঘা বিরোধপূর্ণ মৎস্য ঘের পাহারা দিতে যেয়ে ইসরাইল গাজী (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন। গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার তিনি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালি থেকে নিখোঁজ হন।ইসরাইল গাজী সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের বিলকাজলা গ্রামের এবাদুল গাজীর ছেলে।
এদিকে ইসরাইল গাজী নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তার মা হামিদা খাতুন কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন থানায় ২৫ জানুয়ারি অভিযোগ দিলেও অব্যহত হুমকির মুখে ২৮ জানুয়ারি তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। ৭ ফেব্রæয়ারি তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।নোড়ার চকের ইউনুস আলী, সাহেব আলীসহ কয়েকজন জানান, পারুলিয়ার চÐীচরণ ঘোষের ফেলে যাওয়া দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালি বিলের ১৩১৮ বিঘা জমি দীর্ঘ ৬৫ বছর বিভিন্ন জাল জালিয়াতির কাগজের মধ্যেমে বেসরকারি সংস্থা আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক সখীপুরের ডাঃ নজরুল, একই এলাকার আব্দুল আজিজ, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, তার ছেলে সুরুজ কাজী, আহছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা ইকবাল মাসুদসহ একটি মহল জবরদখল তরে আসছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি গত বছরের ২৫ জানুয়ারি ওই জমি লাওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সাথে ওই জমি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে খাস করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরপরই ওই জমি কৌশলে দখলে নেন নলতার চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম, মাছ আনারুল, গোলাম ফারুক বাবু, সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন। ভ‚মিহীনদের একটি অংশ নোড়ার চকের এছাদ আলীর ছেলে আনারুল, শাহজাহানের ছেলে ররিউল, চিংড়িখালির নবাব সরদারের ছেলে শহীদুল, রবিউল ইসলাম বুল্লা, তালার রুহুল আমিনের ছেলে পাখরা হালিম, ইন্দ্রনগরের মনিরুজ্জামান, কোটিপতি জহুরের ছেলে শাহীনুর ২৩ জনের একটি গ্রæপ মাসিক বেতনে ঘের পাহারার পাশাপাশি মাছ বিক্রির লভ্যাংশ পাওয়ার শর্তে নলতা চেয়ারম্যান আরিজুলের পক্ষে কাজ শুরু করে। ভ‚মিহীনদের অপর গ্রæপের উপর তারা কয়েক দফা হামলা চালায়। সর্বপরি গত বছরের পহেলা নভেম্বর সকালে পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, নলতার আজিজুল ইসলাম ও তার বাহিনীর সদস্যরা ভ‚মিহীন নেতা কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আরিজুল, গোলাম ফারুক বাবু, সিরাজুল ইসলাম আগামি ১১ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত অন্তবর্তীকালিন জামিনে থাকলেও পুলিশ গত তিন মাস ১০ দিনে কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করেনি। ফলে আজিজুলের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দখলে থেকে যায় খলিষাখালির বিলের বড় অংশ। পরে চেয়ারম্যানকে ১৫ লাখ টাকা মাছ বিক্রি করে টাকা তুলে দেওয়ার শর্তে আনারুল ও রবিউলসহ কয়েকজন ওই ঘেরে নিয়ন্ত্রণে নেয়। আনারুলের মধ্যেমে ৫০ বিঘা জমির জন্য এক লাখ টাকা চেয়ারম্যানকে দিতে হয় কালিগঞ্জের এবাদুল গাজীর ছেলে ইসরাইল গাজীর। সে অনুযায়ি মাছ পাহারা দিতে ইসরাইল গাজীর প্রতি রাতে খলিষাখালি দক্ষিন পারে আসতে হতো। ২৪ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত খলিষাখালিতে রবিউল, আনারুল, শহীদুর, বুল্লা, হালিমসহ কয়েকজনের সাথে একত্রে অবস্থান করে ঘুমানোর জায়গা সংকটের কারণে ইসরাইল অন্যত্র চলে যায়। এরপর থেকে ইসরাইলকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আনারুল ও রবিউলসহ তাদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে মাছ বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ইসরাইল নিখোঁজ হয়ে গেছে মর্মে প্রচার রয়েছে। তবে কামরুল হত্যাকাÐে পুলিশ আনারুল, রবিউল, হালিম, বুল্লা ও শহীদুলসহ অন্যান্য ২০ জন আসামীর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার না করায় ইসরাইল গাজী নিখোঁজ হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার বিল কাজলা গ্রামের হামিদা খাতুন(৬০) ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে খলিষাখালির ৫০ বিঘা মাছের ঘের পাহার দিতে যায় তার ছেলে ইসরাইল গাজী। পরদিন সকালে সে বাড়িতে না ফেরায় খলিষাখালিতে যান তিনি। ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে সে আনারুল, রবিউল, বুল্লা, শহীদুল, হালিম, মনিরুজ্জামানের সঙ্গে গোলাম কাজীর ঘেরের বাসায় ছিল বলে জানতে পারেন তিনি। গভীর রাতে সে কোথায় গেছে তা নিয়ে কেউ কোন মন্তব্য করতে পারেনি। একপর্যায়ে তিনি আনারুল, রবিউল, বুল্লা, শহীদুল, হালিম এর নাম উল্লেখ করে তিনি ২৫ জানুয়ারি দেবহাটা থানায় অভিযোগ করেন। ঘটনাস্থলে ২৬ জানুয়ারি দেবহাটা সার্কেল, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের একটি টিম খলিষাখালিতে তদন্তে আসেন। বিষয়টি আনারুল ও রবিউল জানতে পেরে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়। এমনকি অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তার অন্য ছেলে ও ইসরাইলের সন্তানরা কিভাবে বাড়ির বাইরে বের হয় তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ও একপর্যায়ে তিনি তার ভাই আজিজ এর সাথে পরামর্শ করে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। দীর্ঘদিন তিনি ছেলের কোন সন্ধান না পাওয়ায় কালিগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবে যান। সেখানকার সাংবাদিকদের পরামর্শ মত তিনি ৭ ফেব্রæয়ারি দেবহাটা থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ২৫৯ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
হামিদা খাতুন আরও জানান, তার ছেলে বিএনপির রাজনীতি করতো। সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘ ১৫ দিন যাবত তার সন্ধান না পেয়ে সন্তানসহ পরিবারের সবাই চরম দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন যাপন করছেন। ছেলের সন্ধান পেতে দ্রæত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হযরত আলি জানান, ইসরাইল গাজীর সন্ধান পেতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।