সাতক্ষীরায় পুলিশ ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বাবার নাম থাকায় ৬৫ বছর পর ছেলের জমি জবরদখলের চেষ্টা
রঘুনাথ খাঁ ঃ জমি বিক্রির পরও এসএ রেকর্ডে বাবা আতের আলীর নাম থাকায় ৬৫ বছর পর ছেলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বলাডাঙা গ্রামের শহীদুল ইসলাম পুলিশ ও আদালতের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর দুটোর পর শহীদুল এ জবরদখলের চেষ্টা চালায় বলে একই গ্রামের প্রয়াত ফজলুর রহমানের স্ত্রী মাজেদা খাতুনসহ স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে শনিবার সকালে সদর উপজেলার মাধবকাটি বাজার সংলগ্ন বলাডাঙা গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে, বলাডাঙা মৌজার ডিপি ৫৩৪ খতিয়ানের হাল ৮৫২ দাগের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটি কাঠের নতুন ঘর বানানো হয়েছে। সেখানে কেউ অবস্থান করছে না। পার্শ্ববর্তী মফিজুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ ও রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৬৩ সালে তাছের আলী ২৬ শতক জমি অহেদ আলী শেখের কাছ থেকে কেনেন। ওই জমিতে তাছের আলীর ওয়ারেশদের পক্ষে আদালত স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছে ২০১১ সালে। তার ওয়ারেশরা অর্থাৎ প্রয়াত ফজলুর রহমানের স্ত্রী মাজেদা ও তাদের ওয়ারেশনগন শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখলে রয়েছেন। স্বত্ব না থাকার পরও বাবার নামে এসএ রেকর্ড থাকার সুবাদে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগিয়ে গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা শহীদুলের নেতৃত্বে কয়েকজন ওই জমিতে দুটি কাঠের বানানো টোং ঘর বসিয়ে দখলের চেষ্টা করেছেন।
বলাডাঙা গ্রামের প্রয়াত ফজলুর রহমানের স্ত্রী মাজেদা খাতুন জানান,একই গ্রামের আতের আলীর কাছ থেকে ১৯৫৯ সালের ৮ মে পার্শ্ববর্তা অহেদ শেখ ১৯৫৯ সালের ৮ মে ১৬৪৭ নং রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে ২৬ শতক জমি কেনেন। ওই জমি তার শ্বশুর তাছের আলী সরদার ১৯৬৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ২২৩ নং রেজিষ্ট্রি কোবালা মূলে অহেদ আলী শেখের কাছ থেকে কেনেন। তারপর থেকে ওয়ারেশনক্রমে ওই জমি তারা ভোগদখলে আছেন। ওই জমি বর্তমান মাঠ জরিপে তার স্বামীসহ শ্বশুরের ওয়ারেশদের নামে রেকর্ড হয়েছে। ওই জমির নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছেন তিনি।
মাজেদা খাতুন আরো জানান, ওই জমি প্রথমে অহেদ আলী শেখ ও দ্বিতীয়বার তাছের আলী সরদারের কাছে বিক্রি হওয়ার পরও এসএ রেকর্ডে আতের আলীর নাম থাকায় ওই জমি নিজেদের দাবি করে ছেলে শহীদুলসহ কয়েকজন মাঝে মাঝেই ওই জমি দখল করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তার স্বামী ফজলুর রহমানসহ ওয়ারেশরা আতের আলীর ওয়ারেশদের বিবাদী করে ২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে দেঃ ১৮৫/০৯ মামলা দায়ের করেন। ২০১১ সালের ১২ আগষ্ট দু’পক্ষের শুনানী শেষে আদালত স্থিতাবস্থা জারির (স্টাটাস-কো)নির্দেশ দেন। এরপরও তাদের পরিকল্পনা থেমে থাকেনি। বাধ্য হয়ে তিনি গত ১১ জানুয়ারি শহীদুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ শেষে শহীদুল ও তার লোকজনদের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সতর্ক করে ৬ ফেব্রæয়ারি ঢাকার বিশ্ব ইজতেমা শেষে দু’পক্ষকে নিয়ে বসাবসি করবেন বলে চলে যান। তবে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশ ও আদালতের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে শহীদুলের নেতৃত্বে কয়েকজন ওই জমির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে কাঠ দিয়ে নির্মিত দুটি নতুন টোং ঘর বসিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়েং মাজেদা ও তাদের বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে এসে গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশকে জানালে তারা শহীদুল ও তাদের লোকজন পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শহীদুল ইসলাম ও তার ভাইপো লাল্টুর সঙ্গে শনিবার দুপুরে মোবাইল ফনে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি মাজেদা খাতুনের মাধ্যমে শহীদুল ইসলামের জমি জবরদখলের চেষ্টার বিষয়টি শুনেছেন। দু’এক দিনের মধ্যে উভয়পক্ষকে নিয়ে সমস্যার সামাধান করা হবে।