পৃথিবীতে খারাপ মা-ও আছে: পপি

বিনোদন ডেস্ক:
চিত্রনায়িকা পপি। ঢালিউডের অনিন্দ্য সুন্দরীর পুরো নাম সাদিকা পারভীন পপি। একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন পর্দার আড়ালে। তবে হঠাৎ করেই নিজেকে প্রকাশ্যে এলেন তিনি।

পপির অনুপস্থিতিকে প্রথম দিকে স্বাভাবিক মনে করেছিলেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সময় যতই এগোতে থাকে ততই তাকে ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। নায়িকার আড়ালে যাওয়ার রহস্য খুঁজতে বেরিয়ে আসে তার গোপন সংসার ও সন্তান জন্মের খবর। বিয়ে করে এখন পুরোদস্তুর সংসারী পপি। শোবিজে নেই তার কারও সঙ্গে যোগাযোগ।

সম্প্রতি পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন তার বোন ফিরোজা পারভীন। সোমবার খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডি করা হয়।

জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার, শিপনসহ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন শিববাড়ি, ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে হাজির হন। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।

বিষয়টি নিয়ে পপির মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার মেয়েটা আগে ভালোই ছিল। কিন্তু বিয়ের পর ৫-৬ বছর ধরে স্বামীর প্ররোচনায় আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তার বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই পপির বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় সে নিজের নামে ৫ কাঠা জমি লিখিয়ে নিয়েছে। ওই সময় নায়ক আলমগীর সাহেব বিষয়টি সুরাহা করে দেন। এখন পপি বাকি ৬ কাঠা জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের নানাভাবে হয়রানির মধ্যে রেখেছে। এই বয়সে আমরা কোথায় যাব।

এদিকে অনেক দিন পর নিজেকে ক্যামেরার সামনে প্রকাশ করলেন পপি। নিজের জীবনের অনেক অজানা বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। দীর্ঘ ৩ বছর পর সামনে এসে পপি বললেন, দেহটা ছাড়া কিছুই আমার ছিল না।

বৃহস্পতিবার ( ৮ ফেব্রুয়ারি) স্যোশাল মিডিয়ায় পপির একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। এতে তার বিরুদ্ধে মা-ভাই-বোনের আনা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অভিনেত্রী বলেন, আমি পপি।

দীর্ঘ ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণে সবার মন জয় করতে পারলেও দীর্ঘ ২৮ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন-পালন করেছি, তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মনমতো চলতে পারিনি। সে জন্যই বলেছি আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ তো সব সময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি দুহাতে দিতে পেরেছি তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ।

এরপর বলেন, দুদিন যাবৎ দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। মিডিয়ার কাছ থেকে সব সময় আমি সহযোগিতা পেয়েছি। পরিবারের কয়েকটা মানুষের মিথ্যা কিছু কথাবার্তা, মিথ্যা অভিনয়, নাটক, মিথ্যা অভিযোগ বলার সঙ্গে সঙ্গে যে মানুষগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করার কথা তারাই মানুষের কথা অনুযায়ী আমাকে ভুলভাবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাজেভাবে উপস্থাপন করেছে। এর থেকে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না। যাদের জন্য কাজ করেছি আজ তারা আমার না। আল্লাহ বলে কেয়ামতের মাঠে কেউ কাউকে চিনবে না। এবার আসল কথায় আসি।

আজ যে অভিযোগগুলো আমার মা, বোন করছে শক্তভাবে আমি প্রতিবাদ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী। যাদের এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন-পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না। তারপরও ভাই-বোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাই-বোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ তো হয়নি, হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে। এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতাও নেই।

অভিনেত্রী যোগ করেন, কাদের নামে অভিযোগ করব? অভিযোগ করে বাইরের মানুষের নামে। যেহেতু আমার ভাই-বোন, বাবা-মাকে অনেক ভালোবাসি। তাই তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দ্বারা আমার জীবনে অনেক কিছু ফেস করেছি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হয়েছি। আমি যে আয় করেছি তারা সব নিয়ে নিয়েছে। আমার সঙ্গে বেইমানি করেছে। আমার টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি আমার নামে ছিল না। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য ছিল। আমার দেহটা ছাড়া কোনো কিছুই আমার ছিল না। সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমিও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলাম। একটা পর্যায়ে এসে মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন লাগে। একটা সময় যখন জানতে পারলাম আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে। জানার পরও চুপ ছিলাম। তাদের দ্বারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমার টাকা চুরি করেছে। আমাকে খুন করতে খুনিকে টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে। আমার আপন মা, ভাই-বোন জড়িত ছিল।

তার কথায়, পৃথিবীতে সব মা-ই মা না। খারাপ মা-ও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালোবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সবসময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁস ছিলাম। দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম। টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনোই ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও কোনো অভিযোগ নেই। এখনো নেই।

আরও বলেন, একটা মানুষ যখন মেশিনে পরিণত হয় তখন তার মূল্য মেশিন হিসেবে থাকে। মানুষ হিসেবে থাকে না। আমার বাবা-মা আমার সঙ্গে অনেক বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার সব টাকা-পয়সা বোনের অ্যাকাউন্টে ছিল। তারপরও কিছু বলিনি। ২০০৭-এর ঘটনা বলছি। তখন জানতে পারলাম কোনোকিছুই আমার নেই। তখন সিনেমার মুরব্বিরা মিলে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছিলেন।

নিজের সম্পত্তি ফেরত পেতে মা, ভাই-বোনদের নামে সাধারণ ডায়েরি করেছেন পপি। বৃহস্পতিবার খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় জিডি করেছেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পপি নিজেই।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমার কষ্টার্জিত টাকায় ৬ কাঠা জমি কিনেছি। জমিতে যেতে ১০ ফিট জায়গা আমার কিন্তু আমার মা, ভাই-বোনদের অত্যাচারের কারণে আজও জমিটি ভোগ করতে পারিনি। রাস্তাও ব্যবহার করতে দেয় না। উল্টো আমার নামে মিথ্যাচার করছে ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। যে কারণে জিডি করেছি, প্রয়োজনে মামলা করব।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)