সামরিক বিমানে ১০৪ ভারতীয়কে ফেরত পাঠাল আমেরিকা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আমেরিকায় অবস্থান করা অবৈধ ভারতীয়দের সামরিক উড়োজাহাজে করে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এরই অংশ হিসেব মঙ্গলবার রাতে ১০৪ ভারতীয়কে নিয়ে ভারতে এসেছে সি-১৭ বিমান। সিএনএন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
পাঞ্জাব রাজ্যের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার রাতে একটি সামরিক বিমানে কমপক্ষে ১০৪ জন ভারতীয় নাগরিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আনা হয়েছে। মূলত গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাবের অভিবাসীদের বহনকারী বিমানটি বুধবার বিকেলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর অমৃতসরে অবতরণ করে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তার মতে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসী পরিবহনের জন্য সামরিক বিমান মোতায়েন শুরু করার পর থেকে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইট।
ফিরতি ফ্লাইটে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী আকাশদীপ সিংও ছিলেন। তিনি জানান, সাত মাস আগে আমেরিকা চলে যান, তাঁর বাবা তাঁদের জমির দুই-তৃতীয়াংশ বিক্রি করে সেখানে যান। তার জন্য প্রায় ৬০ হাজার ডলার খরচ হয়।
মাত্র চার বছরে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০১৯ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৭ জন থেকে ২০২২ থেকে ২০২৩ সময়কালে ৯৬ হাজার ৯১৭ জনে পৌঁছেছে।
কাজের সুযোগ খুঁজছেন এমন তরুণ ভারতীয়রা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ল্যাটিন আমেরিকার মধ্য দিয়ে বিপজ্জনক পদযাত্রা করে মার্কিন দক্ষিণ সীমান্তে পৌঁছাচ্ছেন।
ক্ষমতায় আসার পরই সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগাতে শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষ করে অভিবাসন নীতি কড়াকড়ি করার ক্ষেত্রে তিনি যুক্ত করেছেন সামরিক বাহিনীকে।
শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে বাড়তি সেনা পাঠান ট্রাম্প। এবার সামরিক উড়োজাহাজ ব্যবহার করলেন অবৈধদের দেশ থেকে বের করার ক্ষেত্রে। এমনকি অভিবাসীদের অস্থায়ী বসবাসের জন্য সামরিক তাঁবুও বানানো হয়েছে।
ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো ছাড়াও আরও ৫ হাজার মানুষকে বিভিন্ন দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন। এরা এল পাসো, টেক্সাস, স্যান দিয়েগো ও ক্যালিফোর্নিয়ার অবৈধ অভিবাসী। এর আগে গুয়েতেমালা, পেরু ও হন্ডুরাসে সামরিক বিমানে করে পাঠানো হয়েছে অবৈধদের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, অবৈধ অভিবাসীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সামরিক উড়োজাহাজ ব্যবহার বেশ ব্যয়বহুল। গত সপ্তাহে একটি ফ্লাইটে প্রতি জনে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ডলার।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভে অভিবাসন নীতি সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পরই আমেরিকায় থাকা অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ধর-পাকড় এবং নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম।
আমেরিকায় অন্তত ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশীর বাস ক্যালিফোর্নিয়ায়।