সুন্দরবন উপকূলের জেলেদের জীবন হতাশাগ্রস্থ

মোঃ আলফাত হোসেন:অপরাজনীতি আর স্বজনপ্রীতি কবলে অল্পশিক্ষিত আর হতদরিদ্র মানুষের ভোগান্তি লেগেই থাকে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় মানুষের জেলেজীবনে।জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ এটাই তো সুন্দরবন,বিগত দিনে দস্যুমুক্ত হলেও হয়নি দালালমুক্ত সুন্দরবন।বর্তমানে পূর্বের ন্যায় জলদস্যু আর বনদুস্যতায় ভরেগেছে সুন্দরবন আর সাগরপাড়,অতিষ্ঠ আর হতাশায় জেলে জীবন। সরকারি আইন অনুযায়ী বনবিভাগের নিয়ম আর অনিয়ম মেনেই জেলেদের জীবন।গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৪-৫ গুণ বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি আজ ও। যদিও আবহমানকাল থেকেই এদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক জীবন ধারণের জন্য প্রধানত সুন্দরবন হতে মধু সংগ্রহসহ কাঁকড়া মৎস্য আহরণ ও তৎসম্পর্কিত পেশার ওপর নির্ভর করে আসছে।
দেশের বড় একটা সংখ্যা জেলে সম্প্রদায়ে থাকলেও সামগ্রিকভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার আজ তা চোখে পড়ার মত, জীবনের নানাবিধ বাঁক পরিবর্তনে তাদের একের পর এক ধাক্কার সম্মুখীন হতে হয় আজও, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে যাদের অহর্নিশ লড়াই করে বাঁচতে হয় এবং বেঁচেও যাই তারাই আবার আমাদের উপকূলীয় ভদ্র সমাজে একান্ত নিরুপায়।
বাংলাদেশের জেলেদের বৃহত্তর একটা অংশের সাতক্ষীরা-খুলনার উপকূলে অনেকেরই থাকার মত স্থায়ী ঘরবাড়ি নেই, কোনোভাবে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন, এমন ও দেখা গেছে নদী কিংবা সমুদ্রের পাড়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে কাটিয়ে দিতে হয় তাদের অনেক কাল, বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই বিভৎস জীবনে তাদের কি মনে চাই না শান্তি সুখের অবিচ্ছেদ্য কিছু অংশ তাদের ও থাকুক? আমাদের জেলেরা যদি কাজ না করেন, তাহলে আমাদের মাছের চাহিদা পূরণ হবে না।
উপকূলীয় জেলেদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ এখন পর্যন্ত,আমাদের উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে হবে সামগ্রিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নের নিরিখে, মাঝে মধ্যেই জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়ে নৌকা, জালসহ সহায়-সম্পদ হারান আবার ও সরকারের আইন অনুযায়ী বনরক্ষীদের অল্প একটু নিয়ম ভঙ্গের কারণে হারাতে হয় তাদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল জাল, নৌকা, জেল জরিমানার টাকা গুনতে হয় অনায়সে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনহানির ঘটনাও ঘটে, এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে দারিদ্রের হার বেশি, সেখানে বছরের দীর্ঘ একটি সময় মানুষের কাজ থাকে না, কিন্তু এ সময়ে তাঁদের সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না। ফলে মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচাতে হয়।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দারিদ্রের শেঁকলে বাঁধা হাহাকারে উপকূলের জেলেজীবন, সমুদ্রে দস্যু আর দুর্যোগের আতংক কাটিয়ে কিনারে ফিরতে না ফিরতেই পড়তে হয় এই সব দাদনদার মহাজনদের কবলে, তাই অনেক সময় তাঁরা কম দামে মাছ আগাম বিক্রি করে দেন। আমাদের জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকাংশে এখন পর্যন্ত শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আমরা পারিনি।
উপকূল ও চরাঞ্চলের অনেক স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন না।
তাদের এই শূন্যতা পূরণ করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাসহ আমরা কি কি ভূমিকা পালন করতে পারি তা পর্যালোচনা করা আজ সময়ের দাবি প্রয়োজনে প্রকৃত জেলেদের জন্য একটু আইনি সুযোগ সুবিধা ও তাদের সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা যেমটা প্রয়োজন ঠিক তেমনি সরকারের দেওয়া জেলেদের আর্থিক প্রণোদনা সঠিকভাবে বন্টন প্রয়োজন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)