মেডিকেলে প্রথম হয়েছে সাতক্ষীরার সুশোভন বাছাড়

কিশোর কুমার:

বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রথম হয়েছি। কারণ ভালো করব জানতাম, তবে প্রথম হব ভাবিনি। তাই অনলাইনে রেজাল্ট দেখার সময় বার বার রিফ্রেস দিচ্ছিলাম। পরে দেখলাম না আমিই প্রথম হয়েছি। এখনো মনে হচ্ছে স্বপ্নের মধ্যে আছি। অনুভূতি বুঝিয়ে বলতে পারব না।’

এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম খুলনার সুশোভন বাছাড়।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে প্রকাশিত ফলাফলে সুশোভন বাছাড় সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭৬ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। রাতে খুলনার বয়রা বাজার এলাকায় অবস্থিত উন্মেষ কোচিংয়ে নিজের প্রচেষ্টা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা বলেন সুশোভন।

খুলনা মহানগরীর বয়রা আজিজের মোড় এলাকা সুশোভনদের বাড়ি। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে। তার বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় খুলনার টিঅ্যান্ডটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। মা বন্দনা সেন এক সময় শিক্ষক ছিলেন। তবে এখন গৃহিণী। সুভাস চন্দ্র ও বন্দনা সেন দম্পতির একমাত্র সন্তান সুশোভন। সুশোভন টিঅ্যান্ডটি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেন।

সুশোভন বাছাড় বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। সেইভাবে প্রথম থেকেই আমি চেষ্টা করি বিজ্ঞান বিষয়ে এবং গণিত বিষয়ে কনসেপ্টগুলো ক্লিয়ার করে সামনে এগিয়ে যেতে পারি। এগুলোতে দুর্বলতা থাকলে পড়ে সমস্যা হয়ে যাবে। ভর্তি পরীক্ষায় সমস্যা হয়ে যাবে। সেভাবেই লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছিলাম।

লেখাপড়া ও পছন্দের বিষয়ে এই কৃতি শিক্ষার্থী বলেন, আমি কখনো টাইম হিসেব করে পড়াশোনা করিনি। রাত জেগে কখনো পড়িনি। এটাকে সাপোর্টও করি না। পড়ার বাইরে খেলাধুলা করতাম। তবে আমি বই পড়া খুব পছন্দ করি। গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার-জাতীয় বই আমার খুব প্রিয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে মেডিকেলে প্রথম হওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, একটা ভালো ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হতে চাই। ভালো মানুষ হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা আমার পরিকল্পনা। দেশ গড়তে ছোট কিছু হলেও যেন আমি অবদান রাখতে পারি। আমার আশা আছে গরিবদের জন্য একটি আলাদা হাসপাতাল করার। আপনারা দোয়া করবেন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে সুশোভন বলেন, আমার লেখাপড়ায় বাবা-মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা আমার প্রতি একটু বেশিই যত্নবান ছিল। আমার মা বয়রা গার্লস স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তার শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আমার জন্য শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। লেখাপড়ায় বাবা-মায়ের অবদানতো আছে। সেইসঙ্গে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উন্মেষ কোচিং আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি এখানেই মেডিকেল কোচিং করেছি।

সুশোভনের বাবা সুভাস চন্দ্র বাছাড় বলেন, ছেলের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে। সেই অনুযায়ী নিজেকে সে গড়ে তুলেছে। এইচএসসি পর্যন্ত সে কোনো শিক্ষক বা কোচিংয়ে লেখাপড়া করেনি। বাড়িতে পড়েই সে পরীক্ষা দিয়েছে। তবে মেডিকেলে ভর্তির সময়ে অনলাইন ও অফলাইনে উন্মেষে কোচিং করেছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বলেছিল ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পাবে। সেটাই হয়েছে। প্রথম হবে এটা ভাবিনি। তবে ভালোভাবে চান্স পাবে জানতাম। খুব ভালো লাগছে।

সুশোভনের মা বন্দনা সেন বলেন, আমি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপর কেঁদে ফেলেছিলাম। ছেলের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবে। দোয়া করি তার স্বপ্ন পূরণ হোক।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)