চীন সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, যেসব বিষয়ে হবে আলোচনা

অনলাইন ডেস্ক:
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর আমন্ত্রণে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তিন দিনের সফরে চীন গেছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেইজিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আলোচনায় বাংলাদেশের গুরুত্বের তালিকায় থাকতে পারে- ঋণ সহায়তার ক্ষেত্রে নানা ধরণের ছাড়, স্বাস্থ্য ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা। অন্যদিকে, চীন বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বাংলাদেশের যুক্ততা, ঢাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স থেকে উড়োজাহাজ বিক্রির বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দিতে পারে।

খসড়াসূচি অনুযায়ী, বেইজিং অবস্থানের সময় ওয়াং ইর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার পাশাপাশি চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (সিডকা) চেয়ারম্যান লাও ঝাওহুইয়ের সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। পরে বেইজিং থেকে সাংহাই যাবেন তৌহিদ হোসেন। তিনি সেখানে সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে (এসআইআইএস) একটি আলোচনায় অংশ নেবেন। পাশাপাশি তিনি সাংহাই চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন। পরে বৈদ্যুতিক গাড়ি, রোবোটিক্স ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ক তিনটি কারখানা পরিদর্শনে যাবেন। মূলত চীন থেকে বাংলাদেশে শিল্প কলকারখানা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার অংশ হিসেবে তিনি ওই কারখানাগুলো পরিদর্শন করবেন।

জানা গেছে, এই সফরে ঋণ সহযোগিতায় ছাড় ও শুল্ক মুক্ত সুবিধার ব্যপ্তি বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ জানাবে। সিডকার মাধ্যমে বাংলাদেশ চীন থেকে ক্রেতার অগ্রাধিকারমূলক ঋণ (পিবিসি) ও সরকারী ছাড়কৃত ঋণ (জিসিএল) এই দুই ধরণের ঋণ নিয়ে থাকে। এখন পিবিসির জন্য দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। যেটা এই সফরে এক শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২০ বছর হলেও বাংলাদেশ তা ৩০ বছরে নেওয়ার অনুরোধ করছে। আর জিসিএলের সুদের হার তিন থেকে দুই শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাংলাদেশ ২০ থেকে ৩০ বছর করতে আগ্রহী।

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রকল্পে সর্বোচ্চ ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় সিডকা। বাংলাদেশ এখন প্রতি প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ পাঁচশ থেকে ছয়শ মিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব দিচ্ছে। আর চীনের বাজারে শুল্ক মুক্ত সুবিধা আরও তিন বছর বাড়াতে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।

এই সফরে চীনের পক্ষ থেকে ঢাকায় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিতে অনুরোধ জানানো হবে। বাংলাদেশের কাছে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ বিক্রি করার বিষয়ে আলোচনা করছে। এই সফরে চীন এ বিষয়টি তুলবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে মংলা বন্দর আধুনিকায়নের কাজ দেওয়া হয়েছিল চীনকে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। এবারের সফরে দ্রুত প্রক্রিয়া শেষ করে মংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর তাগিদ দিতে পারে চীন।

এছাড়া দুই দেশের মধ্যে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে ইয়ালুজাংবু নদীতে নদীতে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে চীন। এ জন্য ইয়ালুজাংবু–যমুনা নদীর তথ্য উপাত্ত বিনিময়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও চীন ওই সমঝোতা স্মারক সই করতে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্চে বেইজিং নিতে চীনের পক্ষ থেকে ভাড়া করা উড়োজাহাজ পাঠানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)