অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের ভাতার পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র দেবে সরকার

অনলাইন ডেস্ক:
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা মাসিক অর্থ সহায়তা পাবেন, তবে তা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সরাসরি ভাতা হিসেবে নয়। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, যার মাসিক মুনাফা তারা পাবেন। শহীদদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকার এবং আহতদের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে ১ থেকে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত রোববার পর্যন্ত জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ৮৩৪ এবং আহত ১২ হাজার ১৪৭ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে ৮২৬ জন শহীদের পরিবার এবং ১৫ হাজার আহতদের চলতি জানুয়ারি মাসে প্রথম কিস্তির মাসিক মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে। মেয়াদপূর্তিতে নগদায়নযোগ্য এসব সঞ্চয়পত্রের আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মুনাফা পাবেন তারা। আগামী অর্থবছরের শুরুতে দেওয়া হবে বাকি সঞ্চয়পত্র। এসব সঞ্চয়পত্র কিনতে ৬৩৮ কোটি টাকা খরচ হবে। শহীদ ও আহতের সংখ্যা বাড়লে এ খাতে টাকার পরিমাণও বাড়বে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসে ৮২৬ জন শহীদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে। আহতদের মধ্যে ‘এ’ শ্রেণির ১ হাজার জনকে ২ লাখ টাকার করে, ‘বি’ শ্রেণির ৩ হাজার ও ‘সি’ শ্রেণির ৪ হাজার জনকে ১ লাখ টাকার করে এবং ‘ডি’ শ্রেণির ৭ হাজার জনকে ৫০ হাজার টাকার করে সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হবে। এ ছাড়া আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসার পরামর্শ সেবার জন্য ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এসব খরচের জন্য ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমরা সঞ্চয়পত্রের প্রথম অংশ গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের কিনে দেব। বাকি সঞ্চয়পত্র আগামী জুলাইয়ের শুরুতে কিনে দেওয়া হবে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নিতে যারা আপত্তি জানিয়েছেন, তাদের আলাদা তালিকা করা হচ্ছে, তাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করব।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই সঞ্চয়পত্র নিহতদের পরিবার এবং আহতরা চাইলেই বিক্রি করতে পারবেন না। তবে যারা সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নিতে চাইছেন না, তাদের সঞ্চয়পত্র কিনে না দিয়ে নগদ টাকা দেওয়া ছাড়াও অন্য কী করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।

সঞ্চয়পত্রের সুবিধার বাইরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো গণঅভ্যুত্থানে শহীদদেরও ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসে এই ভাতা অব্যাহত রাখবে কি না, সেই সংশয় থেকে এই পথে যায়নি সরকার।

সঞ্চয়পত্র কিনে দিতে ১৫ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৮৩৪ জনের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই অধিদপ্তর গঠনের পর গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের সঞ্চয়পত্র কেনার বিষয়টি এই অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হবে।

সূত্র বলেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ না দেখিয়েই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। এ ছাড়া পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনতে তাদের জন্য ন্যূনতম ৬৫ বছরের বয়সসীমার শর্ত প্রত্যাহার করে ৬ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের প্রথম কিস্তির সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়ার পর বিগত সরকারের সময় অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, বঞ্চনা নিরসন কমিটি গত ১০ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সুপারিশ দিলেও সমন্বয়কদের আপত্তির মুখে তড়িঘড়ি করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

ওই কর্মকর্তা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের সবাইকে আর্থিক সুবিধা না দেওয়া পর্যন্ত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানান সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পাওয়া একজন ছাত্রনেতা। এরপর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির গেজেট জারি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ না পাঠিয়ে তা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো হয়। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)