সাতক্ষীরায় অনুমোদনহীন বই বাজারজাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি’র) অনুমোদনহীন বই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাজারজাত করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদনহীন পাঞ্জেরী নোট গাইড বই পাঠ্যসূচিতে যাতে অন্তর্ভুক্ত করা না হয় সে জন্য আশাশুনি উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবর মোঃ তুহিন উল্লাহ তুহিন নামের এক অভিভাবক আবেদন করেছেন। অনুমোদনহীন এ সমস্ত বই বাজারে ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে। এদিকে, এনসিটিবির অনুমোদনবিহীন বই পাঠ্যসূচিতে যাতে অন্তর্ভুক্ত করা না হয় সেজন্য তদারকি কমিটিও গঠন করেছে মাওশি। ঢাকা মহানগর, অঞ্চল, জেলা ও উপজেলাভিত্তিক আলাদা কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের এসব নির্দেশনা দিয়ে পাঠানো চিঠি গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলাবার প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। যা পরদিন ২৫ ডিসেম্বর দৈনিক শিক্ষা ডটকম এ প্রকাশ করা হয়।
তুহিন উল্লাহ তুহিন তার আবেদনে উল্লেখ করেন, আশাশুনি উপজেলার শিক্ষক সমিতি উপজেলার ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত বই পাঠ্য করতে গত ৩১ ডিসেম্বর বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে সরাপপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম এক সভা আহবান করেন। উক্ত সভায় ২০২৫ সালে অবৈধ নোট গাইড পাঠ্য করার জন্য ৪৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বই কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ডাকেন এবং উক্ত সভায় ওপেন ডাকের ব্যবস্থা করেন। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কুন্দুড়িয়া পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম, বদরতলা জেসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহ-সভাপতি অরুন কুমার গাইন, গাবতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল কুমার দাশ, কাদাকাটি আর.আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামানসহ আরো কিছু শিক্ষকের উদ্যোগে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এর সাথে ১০ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। গোপনে ওই ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৭ লাখ টাকা নিয়ে জোর পূর্বক পাঞ্জেরী বই চুক্তি করার ঘোষনা দেওয়ায় সাধারন শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অথচ পাঞ্জেরীর থেকেও বেশী ডাক দিয়েছিল পপি লাইব্রেরী। যার টাকার পরিমাণ ১২ লাখ। এ নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সরাপপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া বিষয়টি নিন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় আশেপাশের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে স্কুলে এসে তারাও শিক্ষকদের মধ্যে গন্ডগোলের চিত্র দেখতে পান।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে বদরতলা জে.সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষাথীদের পাঞ্জেরী টেস্ট পেপার না কেনায় সকল শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে বের করে দেন। এনিয়ে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, একদিনের ভিতরে বই কিনে দেবেন অন্যাথায় স্কুলে পাঠাবেন না। উক্ত প্রধান শিক্ষকের কথায় মনে হয় তিনি পাঞ্জেরী কোম্পানীর একজন কর্মকর্তা। শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিকর কিন্তু তার এই আচরনে আশাশুনি উপজেলার অভিভাবক ও সুশীল সমাজ অত্যান্ত মর্মাহত। তিনি এতে আরো উল্লেখ করেন যে, পাঞ্জেরী বই যেন আশাশুনি উপজেলার শিক্ষক সমিতি পাঠ্য না করে ও কতিপয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকরা জানান, উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কর্তৃক ১০ লাখ টাকার বিনময়ে পাঞ্জেরী কোম্পানীর নোট গাইড বই চালানোর জন্য উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ অন্য কোম্পানীর বই চালানোর জন্য তারা আরো বেশী টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিলেও তাদের বই চালানোর জন্য কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের সাতক্ষীরার প্রতিনিধি আবুল হাসান বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তাদের নোট গাইড চালানোর জন্য তারা কারো কোন টাকা পয়সা আপাতত দিচ্ছেন না।
আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম জানান, পাঞ্জেরী, পপিসহ বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে নোট গাইড বই নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছিল। তবে চুড়ান্ত কোন কিছু তালিকাভুক্ত করা হয়নি বলে তিনি আরো জানান।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের জানান, আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতি পাঞ্জেরী গাইড বই সিলেক্ট করেছেন এমন কথা শুনেছি। বিভিন্ন লোকজন তার কাছে অভিযোগও করেছেন। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসকের বলেছেন। তিনি আশাশুনি উপজেলা নির্বাহি অফিসারের মাধ্যমে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে আরো জানান।##

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)