লস অ্যাঞ্জেলসে ভয়াবহ দাবানলের মধ্যে নতুন বিপদের শঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে নতুন বিপদের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে, যা চলতি সপ্তাহেই দাবানলকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার থেকে শুষ্ক বাতাস আবার বেড়ে বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
বাতাস বেড়ে যাওয়ার আগেই পালিসেইডস ও ইটনের দাবানল ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। স্থানীয় দমকলকর্মীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে আরও আটটি রাজ্য এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা কর্মীরা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত দাবানলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। এর আগে কর্মকর্তারা ১৬ জন নিখোঁজ থাকার কথা বলেছিলেন।
নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের মৃতদেহ ইটন এলাকায় আর আটজনের পালিসেইডস এলাকায় পাওয়া গেছে। লস অ্যাঞ্জেলসের তিনটি এলাকায় দাবানল এখনো চলছে। সবচেয়ে বড় দাবানলের শিকার হয়েছে পালিসেইডস, যেখানে প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে ইটনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানলে প্রায় ১৪ হাজার একর এলাকা ভস্মীভূত হয়েছে।
এছাড়া হার্স্ট-এ পুড়েছে ৭৯৯ একর। তবে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দমকলকর্মীরা যখন বড় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করেছে তখনি কর্তৃপক্ষ নতুন করে প্রচণ্ড বাতাসের বিষয়ে সতর্ক করলো, যা ‘সম্ভাব্য বিপর্যয়কর বাতাসে’ পরিণত হতে পারে।
এতে পুরো লস অ্যাঞ্জেলসই দাবানলের হুমকির মুখে পড়লো।
পাসাডেনার দমকল বিভাগের প্রধান চাদ অগাস্টিন বিবিসিকে বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা আবারো সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছি কারণ মঙ্গলবার বাতাসের গতি সর্বোচ্চ হতে পারে।
তিনি আরও বলেছেন, আমরা কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করলেও এর সমাপ্তির কাছেও আসতে পারিনি।
লস অ্যাঞ্জেলস ফায়ার বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি ইভাকুয়েশন জোনগুলোর অধিবাসীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।
টোপাঙ্গা ক্যানিয়নের অধিবাসী অ্যালিস হুসুম বিবিসিকে বলেন, রাতে নতুন করে সেখানে আগুন শুরু হলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে তিনি ও তার প্রতিবেশীদের নিয়ে ভয়ে আছেন কারণ সেদিন বাতাস সবচেয়ে বেশ গতিতে বয়ে যেতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি শেরিফ রবার্ট লুনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ন্যাশনাল গার্ডের আরও সদস্য চেয়েছেন। ৪০০ জন এর মধ্যেই কাজ করছে। ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর গেভিন নিউসন এর আগে এক হাজার অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এখন ১৪ হাজার দমকল কর্মী কাজ করছে। তাদের সহায়তা করছে ৮৪টি এয়ারক্রাফট ও ১৩৫৪টি ফায়ার ইঞ্জিন। ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ এখনো বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র অবস্থান করছেন আরও ৮৭ হাজারের ওপর সরে যাওয়ার সতর্কতা আছে।
ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রশাসক ডিয়ানে ক্রিসওয়েল সিএনএনকে বলেছেন হুমকি এখনো বহাল আছে। লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশের প্রধান জিম ম্যাকডনেল জানিয়েছেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্বল্প পরিসরে কিছু ব্যক্তিকে তাদের ঘরবাড়িতে যেতে দেওয়া হয়েছে।