তালায় সবজির বাজারে ধস, স্বস্তিতে ক্রেতা:কৃষকের কপালে ভাঁজ
জহর হাসান সাগর:
কৃষকের উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পেলেও চলতি ও বিগত মাসের কয়েক সপ্তাহ শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় অনেকটাই দাম কমে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে তালা উপজেলা ক্রেতাদের মাঝে। তবে হঠাৎ করে শীতকালীন সবজির দাম তলানিতে আসায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছে।
শনিবার ৪ জানুয়ারী সকালে তালা বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন কাঁচা শাক ও সবজির দাম উদ্ধমুখী থাকলে সম্প্রতি দাম তলানিতে এসেছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য পরিবহন খরচই উঠছে না তাদের। ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বস্তি মিললেও দিশাহারা কৃষক। সার তেল কীটনাশক বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে অধিকাংশ কাঁচা শাক ও সবজির দাম কমলেও আলু, ও রসুনের দাম এখনও ক্রেতার নাগালে এখনও আসেনি।
সরেজমিনে তথ্য বলছে, কয়েকদিন আগেও তালা সবজির বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, এখন ১৫ থেকে ২৫ টাকা। শসা বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা এখন ২৫ থেকে ৩০ টাকা। করলা বিক্রি হতো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। লালশাক এক আটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এখন ৭ থেকে ১০ টাকা। ধনে পাতা এক আটি ৩০ থেকে ১২ থেকে ১৫ টাকা। পেঁয়াজ আগে ছিলো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, এখন প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা । পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে নেমে এসেছে ১০০ টাকা কেজি দর। শিম বিক্রয় হয়েছে ১০০-১২০ টাকা কেজি এখন ১০-২০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, যা এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাঁধাকপি প্রতি পিস আকার ভিত্তিক ১০ থেকে ১৫ টাকা। টমোটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা । ফুলকপি প্রতি পিস আকার ভিত্তিক ৭ থেকে ১০ টাকা। নতুন আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকা তবে পুরাতন আলু ৮০-১০০ টাকা কেজি। রসুন প্রতি কেজি ২৪০-২৬০ টাকা। পোঁটলা কেজি প্রতি -৩০ টাকা। পেঁয়াজের কালি ১০ টাকা আটি। ওলকপি ১০ টাকা কেজি। গাজর ৪০ টাকা কেজি। পালংশাক ৫ টাকা আটি। মানকচু ৬০ টাকা কেজি। এমন বাজার পরিস্থিতিতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হলেও কৃষকরা অসন্তোষ।
তালা বাজারে ক্রেতা তমা মল্লিক, বিধান সাধু, আব্দুর রাজ্জাক গাজী জানান, রীতিমতো সবজি খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম অনেক বেশি দামের কারণে। এ রকম দাম পেলে আমাদের সবজির ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারব।
এদিকে তালা পাইকারি সবজি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক আলমগীর হোসেন, গোলাম মোস্তফা, আমান উল্লাহ মোড়ল সবজির দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শীতকালীন শাক সবজির দাম প্রথমে উদ্ধমূখী ছিল কিন্তু এখন যেভাবে নিন্মমূখী হয়েছে তাতে করে তো কৃষকের বাঁচা হয় না। দামের মধ্যে সামঞ্জস্য হওয়া উচিত ছিল!
ভ্যানচালক শাহিনুর রহমান জানান, সারা দিনে যা উপার্জন করি, তা চাল-ডাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সবজির দাম কম হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি।
কয়েকজন কৃষক জানান, বর্তমানে যেভাবে সবজির দাম কমে গেছে তাতে আমাদের পরিবহন খরচ নিজের পকেট থেকেই দিতে হবে। সরকার একটা ব্যবস্থা না নিলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। এবছর অতি বৃষ্টিতে তালার জনপদের সকল মানুষের ঘরবাড়ি সহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে কৃষকরা নতুন করে তেল সার কীটনাশক বীজের আকাশ ছোয়া দাম থাকলেও মাঠের পর মাঠ সবজি চাষ করেন। নানাবিধ পরিস্থিতিতে সবজি উৎপাদনে খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি হয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে পথে বসতে হবে কৃষকদের। শুধু কৃষকরাই ধাক্কা খায়নি। সেই সঙ্গে খুচরা বিক্রেতারাও ধাক্কা খেয়েছে অনেক বড়।