দেবহাটার খলিষাখালীতে ভ‚মিহীন নেতা কামরুল হত্যা তিন বিএনপি নেতা হাইকোর্টের অন্তবর্তীকালিন জামিন
রঘুনাথ খাঁ ঃ সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিষাখালির ভ‚মিহীন নেতা কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অধিকাংশ আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গত আট সপ্তাহে পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উপরন্তু মামলার অধিকাংশ আসামী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও মামলার অন্যতম আসামী বিএনপি নেতা নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য অন্তবর্তীকালিন জামিনে রয়েছেন।
এদিকে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে কামরুলকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সম্প্রতি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে বা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এফিডেফিড করে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কয়েকজন আসামী।
স্থানীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বোধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা জমি মালিকানাবিহীন ঘোষণা করে। এরপর থেকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ১৯৫৫ সালের পর থেকে আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ, সখীপুরের আব্দুল আজিজ পারুলিয়ার আনারুল, আহছানিয়া মিশনের ইকবাল মাসুদ, সিরাজুলসহ একটি মহল তাদের দখলে থাকা জমি নলতার চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, তার ব্যবসায়িক পার্টনার অনারুল ইসলাম (মাছ), নওয়াপাড়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়ার সেজ খোকনসহ কয়েকজনের কাছে ঘেরের মাছ বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে ওই চক্রটি ভ‚মিহীন নেতাদের একটি অংশকে ম্যানেজ করে ভ‚মিহীনদের উচ্ছেদের চেষ্টা অব্যহত রাখে। ভ‚মিহীনদের উপর দফায় দফায় বোমা ও গুলি করে হামলা চালানো হয় । গত ১১ মাসে জেলা প্রশাসন প্রধান বিচারপতির আদেশ কার্যকর না করায় ভ‚মিদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
সূত্রটি আরো জানায়, নলতা ইউপি সদস্য সাবেক সেনা সদস্য হাবিব নিজেকে একজন সোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীর কাছে আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। হাবিবকে কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে খলিষাখালির ভ‚মিহীনদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে নিজেও সোর্স হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। হাবিব -আনারুল দুজনেই সেনাবাাহিনীকে বোঝাতে সমর্থ হয় যে ৫ আগষ্ট শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া দুটি অস্ত্র খলিষাখালির দ্ইু ভ‚মিহীন নেতার কাছে রয়েছে। অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাাদের আটক করতে পারলে অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী গত পহেলা নভেম্বর ভোরে খলিষাখালিতে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। অভিযান শেষ হওয়ার একপর্যায়ে আজিজুর রহমান, মাছ আনারুল, পারুলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল, বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবুসহ তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ভ‚মিহীন জনপদে ঢুকে পড়ে ভ‚মিহীনদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। এদের মধ্যে ছয়জনকে কয়েকটি দা, বোমা ও বোমার মশলাসহ সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। সেনা বাহিনী চলে যাওয়ার আগেই খলিষাখালি দক্ষিণপাড়ায় ভ‚মিদস্যূদের হামলায় মারা যায় ভ‚মিহীন নেতা কামরুল। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কামরুলকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান আরিজুলকে বলে চলে যান। বাবুরাবাদের জেহের আলীর ছেলে হামলাকারি আব্দুস সবুর তার এক সহযোগীকে নিয়ে পহেলা নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে কামরুলকে নিয়ে সখীপুর হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শারীরিক নির্যাতনের ফলে কামরুলের মৃত্যু হয়েছে মর্মে মৃত্যু সনদে উল্লেখ করেন।
এদিকে ভ‚মিদস্যুরা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে থানায় সোপর্দ করা ছয় জন ভ‚মিহীনসহ মৃত কামরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে দেবহাটার রামনাথপুর গ্রামের আলিম গাইন বাদি হয়ে ২ নভেম্বর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সর্বোচ্চ আদালতে স্বত্বহীন হওয়া শিমুলিয়ার কাজী গোলাম ওয়ারেশ এর কাছ থেকে আব্দুল আলিম জমি লিজ নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে ঘটনা পহেলা নভেম্বর ভোরের ও কামরুল ওইদন সকাল ৯টার মারা গেলেও মামলায় আব্দুল আলিম উল্লেখ করেন যে তার ঘেরে মাছ লুটের ঘটনা ২ নভেম্বর ভোর চারটার। বাবুরাবাদের আব্দুস সবুর মটর সাইকেলে কামরুলের লাশ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মামলায় বলা হয়েছে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে কামরুলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২ অক্টোবর তারিখ দিয়ে ওই মামলা রেকর্ড করেন। অর্থাৎ ঘটনার এক মাস আগেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
নিহত কামরুলের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, তার স্বামীকে হত্যার ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ৩ নভেম্বর নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, মাছ আনারুল, গোলাম ফারুক বাবু, সিরাজুল ইসলাম, ট্যারা হাবিব, আনারুল, রবিউল, গোদাড়ার মহিউদ্দিন,, পাখরা হালিম, শহীদুল , বুল্লা, জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ২৩ জনের নামে এজাহার দায়ের করেন। পরদিন তিনি ইন্দ্রনগরের কোটিপতি জহুরের ছেলে শাহীনুর পাড়, ইসরাফিল, শফিকুল সরদার, মনিরুজ্জামান মনি, পলগাদার শফি, সাঈদুল ঢালী, কেনারাম মÐল, ঢেবুখালির আবু তালেব, দক্ষিণ পারুলিয়ার নূর আমিন, বাবুরাবাদের আব্দুস সবুরসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার সংশোধন করে এজাহার দিলেও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেন। যা পরবর্তীতে সম্পুরক এজাহার হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশকে নানাবিধ চাপের সম্মুখীন হতে হয়। একপর্যায়ে গত ১০ নভেম্বর মামলাটি রেকর্ড করা হয়। আসামী ধরার ব্যাপারে সাতক্ষীরা র্যাব ক্যাম্পকে অবহিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশে, পিবিআইতে বা গোয়েন্দা, অপরাধ ও তদন্ত বিভাগে স্থানান্তরের জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে গেলেও তিনি তা গ্রহণ না করে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। অবস্থা বেগতিক বুছে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নলতা ও পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সুফল ভোগী নারী ও পুরুষসহ চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চকের ভ‚মিহীনদের ভয় দেখিয়ে কালিগঞ্জ ও দেবহাটা থানা বিএনপির ব্যানারে গত বুধবার পারুলিয়া বাসস্টাÐে মানববন্ধন করা হয় । এর কয়েকদিন পর আজিজুর রহমান ঢাকায় যাওয়ার পথে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার হাতে আটক হলেও কয়েক ঘণ্টা পর প্রভাব খাটিয়ে মুক্তি পান। একপর্যায়ে ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের পরামর্শ মত তিনিসহ তিনজন আসামী হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালিন জামিন নেন।
মর্জিনা বেগম আরো জানান, সেনাবাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যেভাবে খলিষাখালিতে অভিযান চালানো হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভ‚মিহীনদের উপরে। আজিজুর ওই অভিযানকে তার পক্ষে ব্যবহার করে নানা গল্প তৈরি করে নোড়ার চারকুনিতেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। ভ‚মিহীনদের অসহায়ত্বের বিষয়টি একজন সাংবাদিকের মধ্যেমে সম্প্রতি সেনা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি কোন ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার জন্য অভিযান চালননি মর্মে ওই সাংবাদিকের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এরপরও মামলার আসামীসহ ইন্দ্রনগরের শরিফুল সরদার, শাহীনুর পাড়, জহুর গাজীর ছেলে নুরুজ্জামান, সাম্মদ এর ছেলে আইয়ুব আলী, বুধো পাড়ের ছেলে রউফ, মুর্শিদ. বৈরাগীর চকের ঢালী আবুল, কানামনি, শহীদুলের বোনাই রকীব, কানা মনিরের ছেলে আল আমিন, পাখরা হালিম, রবিউল ইসলাম বুল্লা, শহীদুল, পলগাদার শফি, কেনা মÐল, শফিকুল সরদার, তার ভাই সালাম ও ডাবলু, সাঈদুল ঢালীসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ আট সপ্তাহেও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি হত্যা মামলার আসামী আনারুল, তার বাবা ইসাদ আলী, শাহজাহান আলীর ছেলে রবিউলসহ একটি গ্রæপ নলতার মাছ আনারুলের সহযোগতিায় খলিষাখালির সরকারি ১৩১৮ বিঘা জমি নিয়ন্ত্রণে রেখে দখল হস্তান্তরের নামে লাল লাখ টাকা পকেটস্ত করছে।
্ এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক রাজু আহম্মেদ শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কোন আসামী গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও আসামী আজিজুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম ও গোলাম ফারুক বাবু হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালিন জামিনে রয়েছেন। আগামি ৩ জানুয়ারি তিনি থানায় ফিরে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।