হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ
স্পোর্টস ডেস্ক:ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই টি-২০ সিরিজ নিশ্চিত করেছিল টাইগাররা। তৃতীয় ম্যাচও ৮০ রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করার ইতিহাস গড়ল লিটন দাসরা। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৬ বছর পর টি-২০ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এবারই প্রথম ক্যারিবিয়ানদের ৩-০ ব্যবধানে হারানোর নজির গড়েছে লাল-সবুজের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ১৯০ রানের বড় লক্ষ্য ছুড়েদেয় টাইগাররা। জবাবে ১০৯ রান তুলতেই সবক’টি উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬.৪ ওভারে ১০৯/১০ (সিলস ৪*, ম্যাককয় ০*; কিং ০, গ্রিভস ৬, পুরান ১৫, চেজ ০, চার্লস ২৩, পাওয়েল ২, মোটি ১২, জোসেফ ২, শেফার্ড ৩৩)
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৮৯/৭ (জাকের ৭২*, রিশাদ ০*; লিটন ১৪, পারভেজ ৩৯, তানজিদ ৯, মিরাজ ২৯, শামীম ২, মেহেদী ০, তানজিম ১৭)
১৯০ রানের লক্ষ্যে কোনও সময়ই মনে হয়নি ক্যারিবিয়ানরা ত্রাস ছড়াতে পারবে। বরং নিয়মিত উইকেট তুলে তাদের চাপে রাখার কাজটা করে গেছে বাংলাদেশ।
শুরুর ওভারে আঘাত হানেন তাসকিন। পরের ওভারে মেহেদী হাসান আঘাত করলে ৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে স্বাগতিক দল। তার পর পুরান-চার্লস মিলে ঝড়ো গতিতে ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুরানকে ফিরিয়ে সেই জুটিকেও বেশি দূর যেতে দেননি মেহেদী। তার পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলে পথ হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লেট অর্ডারে ২৭ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় কিছুটা লড়াই করেছিলেন রোমারিও শেফার্ড। কিন্তু সেটা রানের ব্যবধান কমায় মাত্র। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানে গুটিয়ে গেছে। ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। ১৩ রানে দুটি নিয়েছেন মেহেদী হাসান। তাসকিন আহমেদও ৩০ রানে নিয়েছেন ২টি। একটি করে নিয়েছেন তানজিম হাসান ও হাসান মাহমুদ।
অবশেষে রোমারিওকে থামালেন তানজিম
সতীর্থদের বিদায়ের মিছিলে লড়াই করছিলেন রোমারিও শেফার্ড। যদিও লাভ হয়নি তাতে। ১৫.৪ ওভারে তাকে ৩৩ রানে থামিয়েছেন তানজিম হাসান। শেফার্ডের ২৭ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ৩টি ছয়।
এক ওভারে রিশাদের জোড়া আঘাত
৬০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লড়াই করছিলেন রোমারিও শেফার্ড ও গুডাকেশ মোটি। ঝড়ো গতিতে খেলে ২৬ বলে ৩৫ রান যোগ করেন তারা। রিশাদের বলে মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচআউট হয়েছেন মোটি। ফেরার আগে ১২ বলে ১২ রান করেছেন তিনি। ছক্কা ছিল একটি। একই ওভারের চতুর্থ বলে নতুন ব্যাটার আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটও তুলে নেন তিনি।
পাওয়েলকে ২ রানে ফেরালেন রিশাদ
আগের ওভারে রিভিউতে বেঁচেও কাজ হয়নি রোভম্যান পাওয়েলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ককে দুই রানে বিদায় দিয়েছেন রিশাদ হোসেন। তার ঘূর্ণিতে লিটনের গ্লাভসবন্দি হয়েছেন ক্যারিবিয়ান হিটার। উইকেট পতনের মিছিলে পাওয়েলও যোগ দেওয়ায় স্বাগতিক দল ৬০ রানে হারিয়েছে ষষ্ঠ উইকেট।
রিভিউতে বাঁচলেন পাওয়েল
হাসানের ৮.১ ওভারে রোভম্যান পাওয়েলকে এলবিডাব্লিউতে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তিনি রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন। রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল স্টাম্প মিস করছে।
হাসানের ওভারে পড়লো আরও দুই উইকেট
ঝড়ো জুটি ভাঙার পর মাঠে নেমেছিলেন রোস্টন চেজ। তাকে দ্রুতই ক্যাচ আউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরও বিপদে ফেলেছেন পেসার হাসান মাহমুদ। চেজ ৪ বল খেললেও ফিরেছেন রানের খাতা না খুলে। একই ওভারের পঞ্চম বলে রানআউটের শিকার হন জনসন চার্লস! তার বিদায়ে ৪৬ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চার্লস ১৮ বলে ৪ চারে ফেরেন ২৩ রানে।
পুরানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন মেহেদী
৭ রানেই দুই উইকেট তুলে স্বাগতিকদের চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তার পর ঝড়ো জুটিতে চাপ কাটানোর চেষ্টা করেন নিকোলাস পুরান ও জনসন চার্লস। তৃতীয় উইকেটে ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে পুরানকে ফিরিয়ে জুটি ভেঙেছেন মেহেদী হাসান। চলতি সিরিজে তিন ম্যাচেই মেহেদীর শিকার হয়েছেন পুরান। ১০ বলে ১৫ রানে বোল্ড হয়েছেন তিনি। পুরানের ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ১টি ছয়। পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৩ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্জিজ ৪৫ রান যোগ করেছে।
বোলিংয়ে এসেই গ্রিভসকে ফেরালেন মেহেদী
তাসকিন আহমেদের আঘাতের পর ক্যারিবীয়দের শুরুতে আরও চাপে ফেলার কাজটা দ্বিতীয় ওভারে করেছেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান। তৃতীয় বলেই জাস্টিন গ্রিভসকে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের ক্যাচ বানিয়েছেন তিনি। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পাওয়া গ্রিভস ৬ রানে ফিরেছেন।
শুরুতে তাসকিনের আঘাত
বড় স্কোরের পর বল হাতে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন পেসার তাসকিন আহদে। দ্বিতীয় বলেই ক্যারিবীয় ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংকে এলবিডাব্লিউতে ফিরিয়েছেন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। কিং বিদায় নেন শূন্য রানে। এই ওভারেই বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ ছিল কিছুক্ষণ। তার পর আবার শুরু হয় খেলা।
জাকের আলী ঝড়ে ১৮৯ রানে থামলো বাংলাদেশ
ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বড় সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাকের আলী ঝড়ে ৭ উইকেটে তারা সংগ্রহ করেছে ১৮৯ রান। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বড় স্কোরের মঞ্চটা গড়ে দেন ওপেনার পারভেজ হোসেন। তার পর রানের চাকা সচল রাখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাঝে কিছু উইকেট পতন হলেও ছন্দপতন হতে দেননি জাকের আলী। ক্যারিবীয়দের ওপর ঝড় তুলে আসল তাণ্ডবটা চালান তিনি। ৪১ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৭২* রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন। অপরাজিত থাকেন এই রানেই। যা তার ক্যারিয়ারের সেরা। জাকের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান ৩৬ বলে। ক্যারিবিয়ানদের ওপর ঝড় বইয়ে দেওয়া জাকের আলজারি জোসেফের শেষ ওভারেই নেন ২৫ রান। দ্বিতীয় বলে চার মেরে পূরণ করেন ফিফটি। তার পর তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে মারেন তিনটি ছক্কা!
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বড় স্কোর পাইয়ে দিতে অবদান রাখে তানজিম-জাকেরের সপ্তম উইকেট জুটি। ২৭ বলে ৫০ রান যোগ করেছেন তারা। ক্যারিবীয়দের হয়ে ৩০ রানে দুটি উইকেট নেন রোমারিও শেফার্ড। একটি করে নেন আলজারি জোসেফ, রোস্টন চেজ ও গুডাকেশ মোটি।
তানজিমের বিদায়ে ভাঙলো ঝড়ো জুটি
১১৪ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর রানের চাহিদা মিটিয়েছেন মূলত জাকের আলী। তানজিম হাসানের সঙ্গে মিলে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সপ্তম উইকেটে ২৭ বলে যোগ করেছেন ৫০ রান। ১৯তম ওভারে তানজিমকে ১৭ রানে তালুবন্দি করিয়ে জুটি ভেঙেছেন রোমারিও শেফার্ড। তানজিম ১২ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান করেছেন।
এক ওভারে দুই রান আউটে ফিরলেন শামীম, মেহেদী
মিরাজ আউটের পর দলের প্রয়োজনীয় সময়টাতেই রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন জাকের আলী। ১৫তম ওভারে এই রান বাড়িয়ে নেওয়ার তাড়াতেই দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন শামীম। আগের দুই ম্যাচের ফিনিশার প্রান্ত বদল করতে গিয়ে ভুলবোঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছেন ২ রানে। অবশ্য শুরুতে জাকের আলী আউট মনে করে মাঠ ছেড়ে গিয়েছিলেন। পরে রিপ্লে দেখে তাকে ফিরিয়ে আনেন আম্পায়ার। বিদায় নেন শামীম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরের বলেও রানআউটের শিকার হন নতুন ব্যাটার মেহেদী হাসান!
দলীয় শত রানের পর ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মিরাজ
পারভেজের পর তানজিদও দ্রুত আউট হলে রানের চাকা সচল রাখছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। জাকের আলীকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ বলে ৩৭ রানও যোগ করেন তিনি। ১৩তম ওভারে রোস্টন চেজের বলে মেরে খেলতে গেলে ২৯ রানে থেমেছেন মিরাজ। তার ২৩ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার।
৯ রানে ফিরলেন তানজিদ
অষ্টম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে হাত খুলেছিলেন তানজিদ হাসান। কিন্তু বেশি সুবিধা করতে পারলেন না। একই ওভারে মোটির শর্ট পিচ বলে মেরে খেলতে গিয়ে ৯ রানে কাটা পড়েছেন। বল তার ব্যাটে লেগে প্যাড স্পর্শ করে ওপরে উঠলে সেটি লুফে নেন ক্যারিবিয়ান কিপার নিকোলাস পুরান। তানজিদের ৯ বলের ইনিংসে ছিল একটি ছয়।
পাওয়ার প্লের শেষ বলে ফিরলেন পারভেজ
বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিতে মূল ভূমিকা ছিল ওপেনার পারভেজ হোসেনের। সৌম্যর বদলে দলে এসে ভালো ব্যাটিং করছিলেন তিনি। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ বলেই আলজারি হোসেফের ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। বিদায়ের আগে পারভেজ ২১ বলে খেলেছেন ৩৯ রানের দারুণ একটি ইনিংস। তাতে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়। তার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে যোগ করেছে ৫৪ রান।
দারুণ শুরুর পর ফিরলেন লিটন
চলতি সিরিজে রান পেতেই সংগ্রাম করতে হচ্ছিল লিটন দাসকে। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ফিরেছেন ০ ও ৩ রানে। সর্বশেষ ম্যাচে ওপেনিংয়েও নেমেছিলেন। তবে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে নেমে রান পেতে শুরু করেছিলেন তিনি। পারভেজ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিলেন। যদিও বেশি দূর যেতে পারলেন না। দলের ৪৪ রানে রোমারিও শেফার্ডের বলে মেরে খেলতে গিয়ে তালুবন্দি হয়েছেন ১৪ রানে। তার ১৩ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার।
হোয়াইটওয়াশের মিশনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ:সেন্ট ভিনসেন্টে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এবার তাদের হোয়াইটওয়াশ করার মিশন। সেই লক্ষ্যে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটিতে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। আগের ম্যাচে সৌম্য সরকার চোট পাওয়ায় এই ম্যাচে একটি পরিবর্তন আসতোই। ফলে তার জায়গায় খেলছেন পারভেজ হোসেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশেও পরিবর্তন আছে দুটি। আন্দ্রে ফ্লেচার ও আকিল হোসেনের জায়গায় খেলছেন জাস্টিন গ্রিভস ও জেইডেন সিলস।
বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস (উইকেটকিপার ও অধিনায়ক), শামীম হোসেন, তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ব্র্যান্ডন কিং, জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান (উইকেটকিপার), জাস্টিন গ্রিভস, রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), রোমারিও শেফার্ড, রোস্টন চেজ, জেইডেন সিলস, গুডাকেশ মোটি, আলজারি জোসেফ, ও ওবেড ম্যাককয়।