সাতক্ষীরা কলেজের প্লাটিনাম জুবলী’র নিবন্ধন ফি রিভিউ করার আহবান
মো: মুনসুর রহমান:অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ হওয়ায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৫বছর পূর্তিতে প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপন অনুষ্ঠানে রাজনীতিক প্রাক্তন প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে আশাহত প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও রাজনীতিকরা। সংশ্লিস্টরা বলছেন, নিবন্ধন ফি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সহনশীল ও গ্রহণযোগ্য হলে অধিকাংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতো। আরো বলছেন, বিভিন্ন জনপদে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা ঘটনা বা কোন কিছুর প্রতিষ্ঠার সময়কালের সূত্র ধরে জয়ন্তী বা জুবিলীর কথা শোনা যায়। এর প্রবর্তন হয়েছে প্রাচীন রোমান সভ্যতা থেকে। বর্তমানে জয়ন্তী পালনের পরিব্যাপ্তি প্রায় সর্বক্ষেত্রে লক্ষণীয়, যেমন- স্বাধীনতা, রাজ্যাভিষেক, ব্যক্তি, ভাষা, প্রতিষ্ঠান, ঘটনা, যুদ্ধ জয়, আবিষ্কার, খেলাধূলা ইত্যাদি। এই জয়ন্তী পালন এখন আর অনানুষ্ঠানিক নয়, প্রায় প্রতিটি দেশে স্ব স্ব আঙ্গিকে পুরোপুরি আনুষ্ঠানিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত পক্ষে জুবিলীর অর্থ হলো উৎসব মুখর পরিবেশে জন্মতিথি পালন। আর এটাকে বাংলায় বলা হয় জয়ন্তী। ইংরেজী জুবিলী শব্দটি এসেছে ফ্রান্স শব্দ Bubile এর অপভ্রংশ থেকে। অবশ্য এর আদি ল্যাটিন শব্দ Jubilaeus মূলত কোন ঘটনা বা ব্যক্তির যথাক্রমে সূত্রপাত ও জন্মকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট সময়কাল পূরণ হওয়ার উপলক্ষে করে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক স্মৃতিচারণের আনন্দঘন অনুষ্ঠান।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে আন্দোলন করেছেন। এদের মধ্যে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত আনু. ২০ হাজার, জামায়াতের হাজার হাজার, আওয়ামী লীগের আনু. ৩৬ হাজার, জাতীয় পার্টির আনু. ৩ হাজার, জাসদের আনু. ২ হাজার, ওয়ার্কার্স পার্টির আনু. ১০০০, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির শতাধিক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের আনু. ১০০০, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির আনু. ২০০০, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আনু. ২০০, বাংলাদেশ জাসদের আনু. ১’শ, গণফোরাম আনু. ৩’শ, নাগরিক ঐক্য আনু. ৪৮সহ প্রায় লক্ষাধিক।
আরো জানাগেছে, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৫বছর পূর্তিতে প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপন লক্ষ্যে গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যায় ২য় মতবিনিময় সভায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি ২ হাজার টাকা ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি ১ হাজার টাকা র্নিধারণ করেন। এরপূর্বে গত ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যায় ১ম সভায় প্রস্তাবিত আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি ২ হাজার টাকা ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি ১ হাজার ৫’শ টাকা র্নিধারণ করেন। এছাড়াও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৫বছর পূর্তিতে প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপন লক্ষ্যে ৩য় (চুড়ান্ত) মতবিনিময় সভা শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসেম-এর সভাপতিত্বে কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে একটি প্রস্তাবিত বাজেট সকলের সামনে উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি ও সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান রাসেল। পৃথক পৃথকভাবে তারা বলেন, কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ২হাজার ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য ১হাজার টাকা নির্ধারণ পরবর্তী প্রাক্তন ৩ হাজার শিক্ষার্থী ও বর্তমান ২ হাজার মিলে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন হবে ধারণা করেই ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার এই বাজেট। এরমধ্যে প্রাক্তন শিক্ষার্থী জনপ্রতি ২হাজার হিসেবে ৬০ লক্ষ টাকা, বর্তমান শিক্ষার্থী জনপ্রতি ১ হাজার হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা, সুভেনুতে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন থেকে আনু. ১০ লক্ষ টাকা, অন্যান্য থেকে আনু. ৩ লক্ষ টাকা, র্যাফেল ড্র থেকে আনু. ১০ লক্ষ টাকা, ব্যক্তিগত ডোনেশন থেকে আনু. ১৭ লক্ষ টাকা আয় ধরা হয়েছে। আর র্যালি শেষে নাস্তা জনপ্রতি ১’শ টাকা ও দুপুরে খাওয়া জনপ্রতি ৫’শ টাকাসহ ৩৩ লক্ষ টাকা, টি শার্ট জনপ্রতি ২৫০ টাকা হিসেবে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ক্যাপ জনপ্রতি ১৫০ টাকা হিসেবে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাগ জনপ্রতি ১৫০ টাকা হিসেবে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, সুভেনু প্রতি পিচ ৫০০ টাকা হিসেবে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, আইর্ডি কার্ড জনপ্রতি ৭০ টাকা হিসেবে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, প্যান্ডেল, মঞ্চ, লাইটিং, জেনেরেটর, চেয়ার বাবদ ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, সাউন্ড বাবদ ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিল্পী থাকা ও খাওয়া বাবদ ১৩ লক্ষ টাকা, বাজি বাবদ ২ লক্ষ টাকা, প্রচার ও প্রচারণা বাবদ ২ লক্ষ টাকা, র্যালির সাজ-সজ্জা বাবদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, আইটি বাবদ ১ লক্ষ টাকা, রিজার্ভ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে ৫ হাজার পরবর্তী নিবন্ধনকৃত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে সেই টাকা তারা কি খাতে ব্যয় করবে তা নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। তারা আরো বলেন, ১৯৪৬ সালের পর অত্র কলেজ থেকে পাশ করা প্রাক্তন এবং বর্তমান সকল সার্টিফিকেটধারী শিক্ষার্থীরাই অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। যারা ইচ্ছুক তাদেরকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অনলাইনে আগামী বছরের ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে। ওই সভায় অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে আংশিক উপদেষ্টা পরিষদ ও অনুষ্ঠান উদযাপন আহ্বায়ক কমিটি গঠন, আগামী বছর ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল এই প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপনের তারিখ নির্ধারণ, রেজিষ্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বুথ খোলা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপ-কমিটি গঠনে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকলকে রাখা, অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের মূল কমিটির সদস্যদের কাজে উপ-কমিটি সদস্যদের সহযোগী হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এতে প্রস্তাবিত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর লিয়াকত পারভেজকে আহবায়ক ও সদস্য সচিব প্রফেসর এসএম আনোয়ারুজ্জামান মুকুলকে সদস্য সচিব এবং যুগ্ম আহবায়ক ও অর্থ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদকে অর্থ কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলীর কাছে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি। তবে সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও জেলা যুবদলের প্রাক্তন সভাপতি আবু জাহিদ ডাবলু জানান, এই কলেজে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে ও পূর্বে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অনেকে রাজনীতি থেকে অবসরও নিয়েছেন। অনেকে মারাও গেছেন। অনেকে বিগত ১৭ বছর হামলা-মামলায় আর্থিকভাবে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। এটি কলেজের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে। এই অনুষ্ঠানে জনপ্রতি প্রাক্তন ছাত্রদের নিবন্ধন ফি ২ হাজার টাকা আয়োজক কমিটি নির্ধারণ করায় প্রায় ১০% শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার সুযোগ রাখে, বাকিরা রাখে না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাস্তবতা বুঝে রাজনীতি করি। এই সময়ে ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা নির্ধারণ হলে আমাদের দলের রাজনীতির সাথে জড়িত প্রায় ১০ হাজার কর্মী ও সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে। আশাকরি আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ নিবন্ধন ফি পুনঃ নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা আমীর শহিদুল ইসলাম মুকুল জানান, বিষয়টি সম্পর্কে এখন মন্তব্য করা মুশকিল। তবে জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, এই কলেজ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করে প্রাক্তন হয়েছে। তাদের সংখ্যা বলা যাবে না। তবে আয়োজকবৃন্দ যে ২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছেন তা দুরুহ ও কষ্টসাধ্য। অনুষ্ঠানে আমাদের অধিকাংশের ডাকা হয়নি, ডাকলে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে পারতাম। ফি কমালে অনেকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটা মাধুয্যপূর্ণ হতো। এছাড়াও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঢালী জানান, আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের ১০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিগত দিনে হামলা-মামলায় অধিকাংশই সর্বশ্রান্ত। এরপরে এই আনন্দঘন দিন অতিবাহিত করতে আশাকরি সকলে নিবন্ধন করে কলেজের প্লাটিনাম জুবলী উদযাপন অনুষ্ঠান সফল করবেন।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ জানান, প্রাক্তন ৩ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করতে পারে এমন সংখ্যা নির্ধারণ করে আয়োজকবৃন্দ যে নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবতার নিরীক্ষে বেশি। এখানে অনেক বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। যদি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি ২ হাজারের পরিবর্তে ১ হাজার টাকা ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি ১ হাজারের পরিবর্তে ৫’শ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে অনেকে অনুষ্ঠানে ডোনেশন করবে। সেজন্য নিবন্ধন ফি পুনঃ বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও প্রাক্তন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ আলী সুমন জানান, সাতক্ষীরা কলেজ সাতক্ষীরার রাজনীতির সূতিকাগার। এই কলেজে পড়াকালীন ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি কলেজের প্রাক্তন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ছাত্র পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। তবে সকল মত-দ্বিমত ভুলে রাজনৈতিক বিবেচনা না করে আয়োজক কমিটি কলেজের প্লাটিনাম জুবলী উদযাপন অনুষ্ঠান করলে অনেকে যুক্ত হবেন। বাড়বে নিবন্ধন সংখ্যাও।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাইমুল হক কিসলু জানান, আমাদের দলের রাজনীতি করে এমন সংখ্যা প্রায় ১ হাজারের অধিক। এরমধ্যে প্রায় ২’শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে প্লাটিনাম জুবলীতে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করার সক্ষমতা রাখে, বাকিরা রাখে না। এতো টাকা ফি হওয়া উচিত নহে। সকলের গ্রহণযোগ্য ও সহনশীল ফি আয়োজকবৃন্দ নির্ধারণ করলে অনুষ্ঠানটির সৌন্দর্যম-িত হতো।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার জানান, রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ অর্থমূল্য ছাড়াই সম্পন্ন করা উচিৎ! প্রয়োজনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বিত্তবান ব্যক্তি রয়েছে তাদের কাছ থেকে অর্থপূর্বক অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা সম্ভব। আমাদের দলের রাজনীতি করে এমন ১ হাজারের অধিক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আছে। এদের মধ্যে ১ থেকে ২ জন্য ব্যতীত বাকিরা ২ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাই আয়জকদের সিদ্ধান্ত রিভিউ করার আহবান রইলো।
জেলা জাসদের সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু জানান, জাসদ গরীব পার্টি। এই পার্টির জেলার কর্মীরাও অধিকাংশই গরীব। এদের মধ্যে সাতক্ষীরা কলেজে পড়েছে ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী, তারা এখন প্রাক্তন। তাদের পক্ষে ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে অনুষ্ঠানের নিবন্ধন পরবর্তী অংশগ্রহণ অসম্ভব। আয়োজকরা ফি কমালে অংশগ্রহণ বেশি হবে। আশাকরি আয়োজকবৃন্দ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাস্টার আব্দুল জব্বার জানান, আমাদের দলের ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠিত হওয়ায় কমপক্ষে ২ হাজারের অধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জাতীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। এখন তারা ফ্যাসিবাদ ও সৈরাচারের নিপীড়নের রাজনীতিসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। তাদের পক্ষে এই উচ্চমূল্যে প্লাটিনাম জুবলীতে অংশগ্রহণ সম্ভব নহে। তবে স্বল্পসংখ্যক ছাড়া আমাদের দলের অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নহে। তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেজন্য উক্ত অনুষ্ঠানে বিনামূল্যে নিবন্ধন ফি এর ব্যবস্থা থাকা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্ত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী জানান, আমাদের দলের প্রায় শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী রয়েছে যারা ইতিপূর্বে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে লেখাপড়া করেছিল। তাদের অধিকাংশের পাশাপাশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আয়োজকদের নির্ধারিত ফি দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবে না। তাই প্লাটিনাম জয়ন্তি উদযাপনে নিবন্ধন ফি চারটি ক্যাটাগরিতে হলে ভালো হয়। প্রথমত- চলমান শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ২০০ টাকা, দ্বিতীয়ত- স্বল্প আয়ের শ্রম-কর্ম-পেশাজীবীদের জনপ্রতি ৪০০ টাকা, তৃতীয়ত-চলমান চাকরিজীবীদের জনপ্রতি ১০০০ টাকা, চতুর্থ- উচ্চ পর্যায়ের চাকরিজীবিদের জনপ্রতি ১৫০০ টাকা এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ২০০০ টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা ভালো। এতে করে অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। উৎসবের দিনে প্রাক্তনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারবে।
নাগরিক ঐক্যের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ডক্টর রবিউল ইসলাম খান জানান, গত শুক্রবারের সভায় গিয়েছিলাম। ডোনেশনের কথা বলেছি, এক লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। অনেকে প্রতিষ্ঠিত। সবাই ব্যক্তিগতভাবে ডোনেশন করলে অনুষ্ঠানটি ভালো হবে। তিনি আরো জানান, আমাদের দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত প্রায় ৪৮ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছাত্র।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন জানান, এই ফি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও দলের কর্মী অনুষ্ঠানে নিবন্ধন করার ক্ষমতা রাখে। ফি কম হলে সেই সংখ্যা শতাধিক হতো।
গণফোরাম সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি আলী নুর খান বাবুল জানান, দলের রাজনীতি করতো এমন সংখ্যা ৩”শ হতে পারে। কে অনুষ্ঠানে যাবে, কে যাবে না। আপাতত বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না। এটা আয়োজকদের ব্যাপার। তবে মোটিলাইজড করতে পারলে অবশ্যই যাবে তারা।
জেলা জাতীয় পার্টির প্রাক্তন ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আকরাম হোসেন খান বাপ্পী জানান, সাতক্ষীরা কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পূর্বে ও বর্তমানে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে এমন সংখ্যা অনেক। ফি কমালে অনেকে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পৌর কমিটির আহবায়ক মো: বায়েজীদ হাসান জানান, এই কলেজের শুরু থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেছে। বর্তমান শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। অনেকে ঝরে গেছে, অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে। যারা আছেন তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, দিনমজুর, কুলি, রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালক, মটর সাইকেল মিস্ত্রী ও চালক, মুদি দোকানদার, সুইপার, ঝাড়–দার, আয়া, ড্রাইভার, নাপিত, অফিস সহকারীর সংখ্যা বেশি। বর্তমানে অধিকাংশই আর্থিক দুরাবস্থায়। তাদের পক্ষে ২ হাজার টাকা দিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়া অসম্ভব। তিনি আরো বলেন, অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কেউ কেউ প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, রাজনীতিক, জাতীয় মানের ক্রিকেটার, ফুটবলার, ফিফা রেফারী, সংগীত শিল্পী, আবৃত্তি শিল্পী, জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুগ্ম সচিব, মেজর, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিভিন্ন জেলার ডিসি, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক, দেশখ্যাত সাংবাদিক ও সংবাদ পাঠক, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে অসংখ্য প্রবাসী রয়েছেন। তারা আর্থিকভাবে অনুষ্ঠানে ডোনেশন করলে ও আয়োজক কমিটি একটি সহনীয় এবং গ্রহণযোগ্য ফি নির্ধারণ করলে নতুন বাংলাদেশে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি হতো না, অনেকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেতো।