হজমশক্তি বাড়াতে খেতে পারেন পানিফল
স্বাস্থ্য ডেস্ক:
চলে এসেছে শীতকাল। এখন বাজারে গেলেই চোখে পড়ছে পানিফল। যে কোনো মৌসুমি ফলই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি, আর সেই তালিকায় পানিফল কিছুটা এগিয়ে। পানিফল কাঁচা এবং সিদ্ধ উভয় প্রকারে খাওয়া যায়। পানিফল এখন বাজারে সহজলভ্য ও তুলনা মূলক সস্তা হলেও এই ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় অনেকেই এই ফল খাওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না।
পানিফল মূলত জলজ একটি উদ্ভিদের ফল, যা সিঙ্গারার মতো দেখতে বলে সিঙ্গারা নামেও পরিচিত। এ ফলে কোনো বীজ নেই। নিচু এলাকায় মৌসুমি ফসল হিসেবে পানি ফল চাষ করা হয়। লতাপাতার মতো সারা বছরই পানিতে এই ফলের গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
তবে ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে এবং পরিপক্ব হয়ে আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফল বিক্রি শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে ফল তোলা যায়। আর মৌসুমে প্রতি জমি হতে ২-৩ বার পানি ফল আহরণ করা হয়। পানিফলের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষাবাদ হচ্ছে। তাই এখন এই ফল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
প্রতি ১০০গ্রাম পানি ফলের পুষ্টি উপাদান হল- কার্বোহাইড্রেট ২৩.৯ গ্রাম, প্রোটিন ১.৪ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, পানি ৭৩.৫ গ্রাম থেকে। ভিটামিন সি ৪ মিলি গ্রাম, ভিটামিন ই ১.২ মিলি গ্রাম এছাড়া ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিদ্যমান।
আর খনিজ উপাদান এর ভিতর ক্যালসিয়াম ১১ মিলি গ্রাম, আয়রন ০.০৬ মিলি গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.৩৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৬৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৫৮৬ মিলিগ্রাম ও জিঙ্ক ০.৫ মিলিগ্রাম থাকে।
তাই পুষ্টিগুণ বিবেচনাকরলেই বোঝা যায় নিয়মিত পুষ্টি চাহিদা মিটাতে, পুষ্টি ঘাটতি কমাতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পানিফলের গুরুত্ব রয়েছে।
পানিফলে রয়েছে অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমাতে বা ধীর করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া এই ফলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন– ফিসেটিন, ডায়োসমেটিন, লুটিওলিন এবং টেকটোরিজিনিন যা ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি মেরামত করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে।
পানিফল কম ক্যালোরি ও উচ্চ খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় ওজন কমানোর ডায়েটে যোগ করা যায়। যা ঘন ঘন খিদে পাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিক রোগীর জন্যও উপযোগী এই ফল
দেহঘড়ির হরমোন হিসেবে পরিচিত সেরেটোনিন ও মেলাটোনিন তৈরি করে এমাইনো এসিড ট্রিপটোফ্যান, যা আমাদের ঘুম ও জেগে ওঠার চক্র ব্যবস্থাপনা করে। পানি ফলে অ্যামাইনো এসিড হিসাবে ট্রিপটোফ্যান থাকায় তা মানব দেহের জন্য উপকারি। তাছাড়া পানিফলে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল যৌন শক্তিবর্ধক ও ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
এই ফলে অনেক পানি থাকায়, তা পিপাসা মেটায় ও পাশাপাশি পানিশূন্যতা দূর করে। ফাইবার থাকায় এই ফল হজমশক্তি বাড়ায়, অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও সতেজ এবং তারুণ্য ধরে রাখতেও পানিফল অনবদ্য। পানিফলে থাকা পানি, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ই এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান চুল তথা ত্বক স্বাস্থ্যকর করতে কাজ করে।
পানিফল উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাদ্য তাই উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের মতো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু কিডনি রোগীর জন্য এই ফল ঝুঁকিপূর্ণ হতে পরে। তাই কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়েই পানিফল খাওয়া উচিত।